বার্বাডোসে ইসলাম
ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত বার্বাডোস একটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। সেখানে ইসলাম একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। দেশটির সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হওয়াতে মুসলমানরা বিনা বাধায় ইসলাম প্রচার করতে পারে এবং দেশে স্বাধীনভাবে উপাসনালয় নির্মাণ করার অনুমতি আছে। পরিসংখ্যানে মতে, বার্বাডোসে প্রায় ৪৩৪৬ জন মুসলিম বসবাস করে [১] এবং এদের অধিকাংশই অভিবাসী বা ভারতের গুজরাট অঞ্চলের অভিবাসীদের বংশধর।[২] এছাড়া গায়ানা, ত্রিনিদাদ, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা কিছু অভিবাসী সেইসাথে প্রায় ২০০ জন স্থানীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি মিলে ক্রমবর্ধমান মুসলিম সম্প্রদায়ের বাকি অংশ গঠন করে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১.৫০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।[৩][৪] দেশটির মোট জনসখ্যা প্রায় ২৮৮,২০২ জন।[৫][৬]
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৪৩৪৬ | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
ব্রিজটাউন, হলটাউন,স্পাইটসটাউন | |
ধর্ম | |
সুন্নি ইসলাম | |
ধর্মগ্রন্থ | |
আল কুরআন, হাদিস, ফিকহ | |
ভাষা | |
ইংরেজি, উর্দু, আরবি, বাজান ক্রেওল |
বার্বাডোসে চারটি মসজিদ, একটি ইসলামি একাডেমি, একটি ইসলামিক ইনস্টিটিউট, একটি মুসলিম স্কুল এবং বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন সক্রিয় রয়েছে।। মসজিদগুলো হল : জামে মসজিদ, মদিনা মসজিদ, মক্কি মসজিদ ও মসজিদ আন-নূর। এদের মধ্যে রাজধানী ব্রিজটাউনে অবস্থিত জুম্মা বা জামে মসজিদটি হল সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। ১৯৫১ সালের ২৬ জানুয়ারি জুমার নামাজের মাধ্যমে স্থানীয় মুসলিমদের সহায়তায় তৈরি এই মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়।[৭][৮]
মসজিদভিত্তিক কার্যক্রম
সম্পাদনাচারটি মসজিদে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি কুরআন ও হাদিসের ওপর সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানেরও সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মসজিদগুলোতে বেশ কিছু ইসলামি ক্লাসও রয়েছে। সেখানে চার বছর বয়সী শিশুদের কুরআন ও হাদিস মুখস্থ করানোসহ প্রয়োজনীয় ধর্মীয় বিষয়াদি শেখানো হয়।[৭]
বার্বাডোসে ইসলামি সংগঠন ও স্কুল
সম্পাদনাইসলামিক একাডেমী অফ বার্বাডোস (IAB)
সম্পাদনাআইএবি হল মুসলিম ও আগ্রহী অমুসলিমদের নবীন ও বৃদ্ধ সকলের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে বৃহত্তর বোঝাপড়ার জন্য সম্মানিত শায়খ মুহাম্মদ সেলিমের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আইএবি মুসলমানদের সমসাময়িক সমস্যাগুলির সাথে বিভিন্ন ইসলামি বিষয়ের উপর লিফলেট তৈরি করা, ত্রৈমাসিক জার্নাল সাওতুস সাহিল, বক্তৃতার সাপ্তাহিক সম্প্রচার, ১০ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের জন্য মাসিক প্রোগ্রাম, যুবকদের জন্য যুব অনুষ্ঠান ইত্যাদি প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া বার্ষিক দাওয়াহ সম্মেলন, বার্ষিক মহিলা সম্মেলন, আগ্রহী অমুসলিমদের সাথে মিটিং, ইসলামি শিক্ষামূলক ক্লাস, ধর্মীয় পরামর্শ এবং ফতোয়া বিভাগের কার্যক্রমও আইএবি কর্তৃক পরিচালনা করা হয়।[৯]
বার্বাডোজ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন (BMA)
BMA হল দ্বীপের মসজিদ ও মুসাল্লার জন্য একটি ছাতা সংগঠন। এটি জাতীয় পর্যায়ে মুসলমানদের পক্ষে ওকালতি করে।[৯]
ইসলামিক টিচিং সেন্টার
সম্পাদনাহার্টস গ্যাপে অবস্থিত ইসলামিক টিচিং সেন্টার সালাত এবং অন্যান্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা করে।[৯]
ইনিস্টিউট অফ ইসলামিক প্রিপারেশন এন্ড থট
সম্পাদনাএটি সমস্ত ইসলামী সংস্থাকে বিনামূল্যে ইসলামী সাহিত্য সরবরাহ ও বিতরণ করে।
সম্পাদনামদিনা ফাউন্ডেশন
সম্পাদনামদিনা ফাউন্ডেশন হল একটি দাতব্য সংস্থা। যার লক্ষ্য দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য করা এবং অন্যদের সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পর্ক গড়ে তোলা।[৯]
আল-ফালাহ মুসলিম স্কুল
সম্পাদনাএটি একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যা মুসলিম যুবকদের ইসলামী মূল্যবোধের সাথে জেনারেল শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত।
কনসার্ড ফর দ্য ফিউচার বার্বাডোস (cffb)
সম্পাদনাঐতিহ্যগত অর্থে এটি অফিসিয়াল সংস্থা নয়। এটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বর কয়েকজন স্থানীয় পণ্ডিতদের সাথে একত্রিত হয়ে একদল তরুণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নাম থেকে বোঝা যায় যে, এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল, বার্বাডোসে ইসলাম প্রচারের উদ্বেগ এবং তাদের স্থানীয় মসজিদে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। তাদের কার্যক্রম অনলাইন/সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও পরিচালিত হয়।[৯]
স্ট্রিট দাওয়াহ বার্বাডোস
সম্পাদনাএটিও ঐতিহ্যগত অর্থে একটি অফিসিয়াল সংস্থা নয় এবং এটি উপরের সংস্থার সাথে জড়িত তরুণদের হাতে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর লক্ষ্য হল বার্বাডোসের স্থানীয় অমুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামি বার্তা প্রচার করা। এটি তাদের বোঝানোর জন্য নয়; বরং মুসলমানরা আসলে কী বিশ্বাস করে তা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কারণ, উদ্বেগের বিষয় হল, বার্বাডোসে মুসলিম উপস্থিতির ১০০ বছর পরেও একটি ধর্ম হিসাবে ইসলামকে এখনো দ্বীপে গুরুতর ভুলভাবে বোঝানো হয়।[৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দেশ অনুযায়ী ইসলাম"। উইকিপিডিয়া। ২০২২-০৮-০৫।
- ↑ "The World Factbook"। web.archive.org। ২০১৬-০২-১৪। ২০১৬-০২-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৮।
- ↑ "2008 Report on International Religious Freedom,” Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor, Under Secretary for Democracy and Global Affairs, United States Department of State, September 2008.
- ↑ "Islam by country"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১১-০৫।
- ↑ "Barbados Population (2022) - Worldometer"। www.worldometers.info (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৮।
- ↑ "বার্বাডোস"। উইকিপিডিয়া। ২০২২-০৯-০৯।
- ↑ ক খ "বার্বাডোসের প্রথম মসজিদ"। দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৮।
- ↑ অনলাইন, উম্মাহ (২০২১-০৪-২৩)। "বার্বাডোসের জুম্মা মসজিদ: অল্পে সন্তুষ্টির নিদর্শন"। উম্মাহ্ ২৪ ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Islam in Barbados"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৮-১৯।