ক্যাপ্টেন "বাবা" হরভজন সিং (৩০আগস্ট ১৯৪৬ - ৪ অক্টোবর ১৯৬৮) [১] ছিলেন একজন ভারতীয় সেনা সৈনিক। পরিষেবার সময়কাল: ৩০ জুন ১৯৬৫ - ১ ডিসেম্বর ২০০৬ (মরণোত্তর অবসর)

বাবা হরভজন সিং মন্দিরের বাইরের দৃশ্য

ভারতীয় সৈন্যরা তাঁকে "নাথুলার বীর" হিসাবে সম্মানিত করেন। তাঁর সম্মানে ভারতীয় সেনারা একটি মন্দির নির্মাণ করেন। তাঁকে "সন্তু" হিসাবে মানা হয় এবং বিশ্বাসীরা ওনাকে "বাবা" (সাধু) হিসাবে মানেন। নাথু লা এবং সিকিম রাজ্য এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যবর্তী চীন-ভারত সীমান্তে এবং তার আশেপাশে দায়িত্বে থাকা প্রধানত ভারতীয় সেনাবাহিনী - বিশ্বাস করতে পেরেছিল যে তাঁর আত্মা প্রতিবেশী উচ্চ-উচ্চতা অঞ্চলের আশ্রয়প্রাপ্ত প্রতিটি সৈনিককে সুরক্ষা দেয়। বেশিরভাগ সাধুদের মতোই, বাবাকে যারা শ্রদ্ধা করেন এবং তাঁর উপাসনা করেন তাদের প্রতি কৃপা দৃষ্টি আছে বলে মনে করা হয়। মৃত্যুর পরেও তিনি দেশকে রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে।

জীবন এবং সামরিক জীবন সম্পাদনা

বাবা হরভজন সিং ১৯৪৬ সালের ৩০ আগস্ট সদরনা গ্রামে (বর্তমানে পাকিস্তানে) একটি শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রামের স্কুলে শেষ করেন এবং তারপরে পাঞ্জাবের পট্টির ডিএভি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালের মার্চ মাসে ম্যাট্রিক করেন। তিনি অমৃতসরে সৈনিক হিসাবে তালিকাভুক্ত হন এবং পাঞ্জাব রেজিমেন্টে (ভারত) যোগ দেন। [২]

মৃত্যু এবং সম্পর্কিত কিংবদন্তি সম্পাদনা

তিনি ১৯৬৮ সালে ভারতের পূর্ব সিকিমের নাথু লার কাছে শহীদ হন। ২২ বছর বয়সে হরভজন সিংহের মৃত্যু হয় এবং তাঁর কহিনী ধর্মীয় শ্রদ্ধার বিষয় হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ( জওয়ান ), তাঁর গ্রামের মানুষ এবং সীমান্ত পেরিয়ে চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সিকিম এবং তিব্বতের মধ্যে ভারত-চীন সীমান্ত রক্ষা করা [৩] সেনাদের মধ‍্য‍্যে জনপ্রিয় হয়েছে।

তাঁর মৃত্যুর অফিসিয়াল কারণ হ'ল তিনি ১৪,৫০০ ফুট (৪,৪০০ মি) উপরে যুদ্ধের কারণে হয়েছিলো। নাথু লা হল তিব্বত ও সিকিমের মাঝামাঝি একটি উপত‍্যকা যেখানে ১৯৬৫-এর চীন-ভারত যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং পিএলএর মধ্যে বহু যুদ্ধ হয়েছিল। [৪]

 
বাবা হরভজন সিংয়ের মন্দিরের ফলক।

লোক কাহিনী অনুযায়ী তিনি একটি দুর্গম ফাঁড়ির জন্য জিনিস পত্র সরবরাহকারী ঘোড়ার একটি কলামের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় হিমবাহে ডুবে গিয়েছিলেন। তিন দিন তল্লাশির পরে তার দেহাবশেষ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে তাঁর মরদেহ পুরো সামরিক সম্মান দিয়ে দাহ করা হয়েছিল। শোনা যায় প্রয়াত বাবা হরভজন সিং অনুসন্ধান দলকে তার মৃতদেহ খুঁজে পেতে সহায়তা করেছিলেন। কিছু ভারতীয় সৈন্য বিশ্বাস করে যে ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধের ঘটনা ঘটলে বাবা ভারতীয় সেনাদের কমপক্ষে তিন দিন আগে আগত আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করবেন। নাথু লাতে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক চলাকালীন চীনারা তাকে সম্মান জানাতে একটি চেয়ার রাখেন।

সাধারণ বিশ্বাস অনুসারে যে কোনও সেনা কর্মকর্তা এবং নিয়মানুবর্তিতা ভাবে দায়িত্ব পালন না করে বাবা চড় মেরে শাস্তি দেন। ডিসপ্লেতে থাকা তার নিজের পোশাকটি কারও পরিষ্কার করার দরকার হয়না কারণ এটি নিজের আত্মা দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায়।

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

 
বাবা হরভজন সিং মন্দির

তিনি "সন্ত বাবা" নামে পরিচিতি পেয়েছেন। [৫] প্রতি বছর ১১ ই   সেপ্টেম্বরে একটি জিপ তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে নিকটতম রেলস্টেশন নিউ জলপাইগুড়ির দিকে রওনা হয় সেখান থেকে ট্রেনের মাধ্যমে এটি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের কাপুর্থলা জেলার কূকা গ্রামে প্রেরণ করা হয়। যদিও ভারতীয় রেলের যে কোনও ট্রেনের ফাঁকা বার্থগুলি অদৃশ্যভাবে কোনও ওয়েটলিস্টড যাত্রীর জন্য বরাদ্দ করা হয় বা কোচ অ্যাটেন্ডেন্টদের দ্বারা প্রথম আসা-প্রথম পরিবেশন ভিত্তিতে বাবার জন্য একটি বিশেষ সিট সংরক্ষণ করা হয়। প্রতি বছর একটি সিট তার শহরে যাত্রা করার জন্য ফাঁকা রাখা হয় এবং তিন সৈন্য বাবাকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে যান। নাথুলায় পোস্টিং হওয়া সৈন্যরা প্রতি মাসে তার মায়ের কাছে প্রেরণের জন্য অল্প পরিমাণ অর্থের দান করেন এবং তার গ্রাম এখনও তাকে শহীদ হিসাবে স্মরণ করে এবং তার পরিবারকে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছিল।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Baba Harbhajan temple Sikkim History In Hindi: बाबा जशवंत सिंह मंदिर - सिक्किम - इस मृत सैनिक की आत्मा आज भी करती है देश की रक्षा"ajabgjab.com। ২ জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. https://www.honourpoint.in/profile/sepoy-baba-harbhajan-singh/
  3. "The Hero Of Nathula Pass – Spirit Of Baba Harbhajan Singh That Guards India's Border"indiatimes.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-২৪ 
  4. http://gallantryawards.gov.in/awardees/maha-vir-chakra
  5. "Baba Harbhajan Singh: A Dead Soldier still on duty"youtube.com। ৪ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. "Harbhajan Singh of Upper Sikkim"। ৭ আগস্ট ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।