বানৌজা আলী হায়দার (২০১৪)

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ

বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ (সংক্ষেপে- বানৌজা) আলী হায়দার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি রূপান্তরিত টাইপ ০৫৩এইচ২ ফ্রিগেট যা ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। ইসলামের ৪র্থ খলিফায়ে রাশেদিন হযরত আলী হায়দার (রাঃ) এর সম্মানার্থে এটির নামকরণ করা হয়।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭]

ইতিহাস
বাংলাদেশ
শ্রেণী এবং ধরন: রূপান্তরিত টাইপ ০৫৩এইচ২ ফ্রিগেট
নাম: বানৌজা আলী হায়দার
নির্মাতা: হুডং শিপইয়ার্ড, সাংহাই, গণচীন
অভিষেক: ৯ আগস্ট, ১৯৮৬
অর্জন: ডিসেম্বর, ২০১৩
কমিশন লাভ: ১ মার্চ, ২০১৪
কার্যসময়: ২০১৪-বর্তমান
অবস্থা: সক্রিয়
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
ওজন:
  • ১,৭০০ টন (স্বাভাবিক অবস্থায়)
  • ২০০০ টন (পূর্ণ অবস্থায়)
দৈর্ঘ্য: ১০৩.২০ মিটার (৩৩৮.৬ ফু)
প্রস্থ: ১১.৩০ মিটার (৩৭.১ ফু)
ড্রাফট: ৩.১৯ মিটার (১০.৫ ফু)
প্রচালনশক্তি:
  • ২ × হুডং-ঝংহুয়া ১৮ই৩৯০ভিএ ১২,০০০ অশ্বশক্তি (৮,৯০০ কিওয়াট) ডিজেল ইঞ্জিন (গণচীন);
  • জিনান জেড১২ ভি১৯০বিসিডি-২ ডিজেল জেনারেটর;
  • ২ × শ্যাফট
গতিবেগ: ২৬ নট (৪৮ কিমি/ঘ; ৩০ মা/ঘ)
সীমা: ২,৭০০ নটিক্যাল মাইল (৩,১০০ মা; ৫,০০০ কিমি), ১৮ নট (৩৩ কিমি/ঘ; ২১ মা/ঘ) গতিতে
লোকবল: ১৬০ (২৭ জন কর্মকর্তা)
সেন্সর এবং
কার্যপদ্ধতি:
  • সোনার:
    • এসজেডি-৫ মধ্যম কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট সোনার
    • এসজেসি-১বি রিকনিসেন্স সোনার
    • এসজেএক্স-৪ যোগাযোগ সোনার
    • সিটিসি-১৬২৯ যুদ্ধকালীন তথ্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
    • ইকো টাইপ ৫ (সম্মুখে অবস্থিত)
  • র‍্যাডার ব্যবস্থা:
    • সেলেক্স ইএস ৩ডি মাল্টিফাংশনাল র‍্যাডার, সি-ব্যান্ড
    • টাইপ ৫১৭এইচ-১ (নাইফ রেস্ট) দ্বিমাত্রিক দূরপাল্লা বিশিষ্ট, এ ব্যান্ড
    • ২ x রাকাল আর এম-১২৯০, আই ব্যান্ড
  • গোলা-নিক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ:
    • টাইপ ৩৫২ র‍্যাডার (স্কয়ার টাই), আই ব্যান্ড
    • টাইপ ৩৪৩ (ওয়াস্প হেড), জি/এইচ ব্যান্ড
    • ২ x টাইপ ৩৪১ (বিমানবিধ্বংসী কামানের জন্য)
যান্ত্রিক যুদ্ধাস্ত্র
ও ফাঁদ:
  • তথ্য সন্নিবেশক: এইচএন ৯০০
  • যোগাযোগ: এসএনটিআই-২৪০ স্যাটকম; আরডব্লিউডি-৮ (জোড়া) ইন্টেরসেপ্ট ই ডব্লিউ
  • টাইপ ৯২৩০আই র‍্যাডার সতর্ক সংকেত সংগ্রাহক
  • টাইপ ৬৫১এ আইএফএফ
রণসজ্জা:
  • ক্ষেপণাস্ত্র:
    • জাহাজবিধ্বংসী - ২x৪ সি-৮০২এ
  • নৌ-কামান:
    • ২ x টাইপ ৭৯এ ১০০ মিমি (জোড়া)
    • ৪ x টাইপ ৭৬ ৩৭ মিমি বিমানবিধ্বংসী কামান (২ জোড়া)
  • ডেপ্থ চারজার:
    • ২ x ডিসি র‍্যাক
    • ৪ x টাইপ ৬৪ ডিসি নিক্ষেপক
  • ডিকয়: ২ x এমকে ৩৬ আরবিওসি ৬-ব্যারেলযুক্ত শ্যাফ উৎক্ষেপক

ইতিহাস সম্পাদনা

টাইপ ০৫৩এইচ২ এই ফ্রিগেটটি ৯ আগস্ট, ১৯৮৬ সালে হুডং শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয়। যা ১৯৮৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি'র পূর্ব সাগর নৌবহরে উহু নামে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে হুয়াংশি নামে আরেকটি ফ্রিগেট সহ এই ফ্রিগেটটিকে বিমুক্ত করে এবং সংস্কার করতে জিয়াঙ্গান পোতাঙ্গনে পাঠায়। প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষে উক্ত জাহাজ দুটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিকট বিক্রয় করা হয়। বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর উহু জাহাজটির নাম পরিবর্তন করে বানৌজা আলী হায়দার নামে ১ মার্চ, ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়।

১২ মে, ২০১৪ সালে বানৌজা আলী হায়দার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনীর অধীনস্থ মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সে যোগদানের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করে। পরবর্তীতে ১৪ জুন, ২০১৪ সালে পূর্বে অবস্থানরত বানৌজা ওসমানবানৌজা মধুমতি যুদ্ধজাহাজ দ্বয়ের নিকট হতে মিশনের দ্বায়িত্ব বুঝে নেয়। দীর্ঘ ৪ বছর লেবাননে ভূমধ্যসাগরে শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পালন করার পর জাহাজটি দেশে ফেরার পথে ৭-৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর পরিদর্শন করে।

বানৌজা আলী হায়দার ১০ থেকে ১২ অক্টোবর, ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সামুদ্রিক মহড়া (কর্প্যাট-২০১৯) এর অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাথে বঙ্গোপসাগরে সমন্বিত টহল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। মহড়ার অংশ হিসাবে জাহাজটি ১২ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দরে পৌঁছায়। পরবর্তীতে জাহাজটি ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে দেশে প্রত্যাবর্তন করে।

বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো সম্পাদনা

বানৌজা আলী হায়দার জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১০৩.২০ মিটার (৩৩৮.৬ ফু), প্রস্থ ১১.৩০ মিটার (৩৭.১ ফু) এবং গভীরতা ৩.১৯ মিটার (১০.৫ ফু)। জাহাজটিতে রয়েছে ২টি টাইপ ১২ই ৩৯০ ভোল্ট ডিজেল ইঞ্জিন; ৭,৮৮৫ অশ্বশক্তি (৮৮০ কিলোওয়াট)। যার ফলে জাহাজটি সর্বোচ্চ ২৬ নট (৪৮ কিমি/ঘ; ৩০ মা/ঘ) গতিতে চলতে সক্ষম। এছাড়াও জাহাজটিতে অত্যাধুনিক সারভাইলেন্স র‍্যাডার, অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, গোলানিক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সাবমেরিন বিধ্বংসী রকেট, র‍্যাডার জ্যামিং ব্যবস্থা রয়েছে।

রণসজ্জা সম্পাদনা

ফ্রিগেটটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সহ নানাবিধ অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত। ফ্রিগেটটির রণসজ্জায় নিম্নোক্ত সমরাস্ত্র রয়েছে:

  • ৪ কোষ বিশিষ্ট ২ টি সি-৮০২এ ক্ষেপণাস্ত্র। জাহাজ থেকে শত্রু জাহাজে বা ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্র ২২০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।
  • ২টি 'পিজে ৩৩এ দ্বৈত ১০০ মিমি নেভাল গান' বা কামান যা সমুদ্র তটবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে কার্যকর কামান।
  • ৪টি 'টাইপ ৭৬ দ্বৈত ৩৭ মিমি এএ গান' বা কামান যা সমুদ্র তটবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে কার্যকর কামান।
  • ২টি ৫ টিউব বিশিষ্ট 'আরবিইউ-১২০০ এএসডাব্লিউ' রকেট লাঞ্চার ও
  • ২টি 'ডেপথ চার্জ র‍্যাকস' যা নিমজ্জিত সাবমেরিনে আঘাত করতে পারে।
  • ২টি ৬ ব্যারেল বিশিষ্ট 'মার্ক-৩৬ এসআরবিওসি' ডিকয় রকেট লঞ্চার যা শত্রু নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার সক্ষমতা রাখে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ০৭ (সাত) বছরের অগ্রগতির তথ্য প্রচারের ব্যবস্থাকরণ সম্পর্কিত" (পিডিএফ)। ২০১৬-০৪-০৭। ২০২২-১০-১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৫ 
  2. "শান্তিরক্ষায় গর্জে উঠেছে দেশের যুদ্ধজাহাজ আলী হায়দার ও নির্মূল"। ২৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২৩ 
  3. "যেভাবে থাকেন ভূমধ্যসাগরের অথৈ জলে ভাসমান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা"। ২৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২৩ 
  4. "জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বানৌজা আলী হায়দার শত্রুপক্ষের আতঙ্ক"। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  5. "ভূ-মধ্যসাগরে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরেছে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ 'আলী হায়দার' ও 'নির্মূল'"আইএসপিআর। ২০২১-১১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২৮ 
  6. "TENDER SPECIFICATION OF SPARE PARTS - BNS ALI HAIDER" (পিডিএফ)Directorate General of Defence Purchase (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-২৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৮ 
  7. "TENDER SPECIFICATION OF SPARE PARTS FOR DIESEL GENERATOR (BRAND: JINAN) - BNS ALI HAIDER" (পিডিএফ)Directorate General of Defence Purchase (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-২৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৮