বাদশা মিয়া (বীর প্রতীক)

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা

বাদশা মিয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৩ আগস্ট, ১৯৭২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

বাদশা মিয়া
মৃত্যু১৩ আগস্ট, ১৯৭২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

বাদশা মিয়ার জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার আলাদাদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মফিজ উদ্দীন এবং মায়ের নাম আক্তারুননেছা। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন বাদশা মিয়া। মুক্তিযুদ্ধের আগে বিয়ে করেন তিনি। কিছুদিন পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর ১০ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে রাজশাহী এলাকায় চরমপন্থী দমন অভিযানে পাঠানো হয়। বাগমারায় চরমপন্থীদের সঙ্গে এক যুদ্ধে বাদশা মিয়া গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাকে সমাহিত করা হয় গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে। তার কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না। বাদশা মিয়া প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরে। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর পুনর্গঠিত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন ফেনীর বিলোনিয়া, সলিয়ারদীঘি, পরশুরামসহ আরও কয়েকটি স্থানে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

ফেনী জেলার পরশুরাম বিলোনিয়া সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। জেলা সদর থেকে মির্জানগর রেলপথের পূর্ব পাশেই ছিল পরশুরাম। ১৯৭১ সালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিলোনিয়া ও পরশুরামে আক্রমণ করে। কয়েক দিন ধরে এখানে যুদ্ধ চলে। বাদশা মিয়া এ যুদ্ধে যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব দেখান। মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণে পরশুরাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। -১০ নভেম্বর পরশুরাম মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ঘাঁটিতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে অসংখ্য লাশ। ধানখেত, বাংকার, খালের পানি—কোথাও খালি নেই। যারা আহত হয়ে পালাতে চেয়েছিল, তারা অসমর্থতার জন্য পালাতে পারেনি। অসহায়ভাবে কাতরাচ্ছে বাঁচার আশায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বেশির ভাগই পরে মারা যায়। তিন-চারজন বেঁচে থাকে। অক্ষত অবস্থায় কয়েকজনকে মুক্তিযোদ্ধারা বন্দী করেন। এ যুদ্ধের পর ফেনী এলাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়ে। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৭-১০-২০১১"। ২০১৬-১১-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-০৮ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা সম্পাদনা

বহি:সংযোগ সম্পাদনা