বাংলা বন্ড হচ্ছে বিশ্বের প্রথম বাংলাদেশি টাকা ডিনমিনেটেড বন্ড। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী বেসরকারি খাতসংক্রান্ত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায় ১১ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে এ বন্ড চালু হয়। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে (এলইসি) এটি ঐদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত হয়।[১][২] প্রাথমিকভাবে এ বন্ড তিন বছর মেয়াদি করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর, কিংবা দশ বছর করা হতে পারে। আইএফসি আগামী এক বছরে ১০০ কোটি ডলার মূল্যমানের বন্ড ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।[৩]

পটভূমি সম্পাদনা

বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে এ ধরনের বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথা বলে আসছিল। ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সভায় আইএফসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার তখনই এ বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল।

এরপর আইএফসি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থমন্ত্রণালয় একই বছর ৪ অক্টোবর এক চিঠিতে টাকা বন্ড ছাড়ার অনুমোদনের বিষয়টি জানায়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর যাচাই কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে আইএফসির ওই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল।

ওই কমিটির কাছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান প্রাণ এগ্রো ও নাটোর এগ্রো লিমিটেডের জন্য এ বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব করে আইএফসি। চলতি বছরের এপ্রিলে আইএফসির প্রস্তাবে সাড়া দেয় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

অবশেষে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এ বন্ড উদ্ভোদন করেন।[৪]

বাংলাদেশের লাভ সম্পাদনা

প্রবাসীরা ডলারে এই বন্ড কিনলেও প্রথমবারের মতো তা টাকায় রূপান্তর করে দেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে।[৫] এই বন্ডের মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ হবে, তা বিনিয়োগ করা হবে তিনটি খাতে। খাত তিনটি হচ্ছে আবাসন, ক্ষুদ্রঋণ ও এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প)।[৬]

টাকা লেনদেন হবে লন্ডন স্টক মার্কেটে। যে কেউ এই বন্ড কিনতে পারবে। ডলার দিয়ে এই বন্ড কিনতে হবে। সেই ডলার টাকায় কনভার্ট হয়ে তা বিনিয়োগ করা হবে। আইএফসি বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে। এই ১ বিলিয়ন ডলার ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ আরো বাড়বে।

সুদের হার সম্পাদনা

এ বন্ডে বেসরকারি খাতের যাঁরা বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা সুদ পাবেন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বন্ড থেকে টাকা ঋণ নিয়ে যাঁরা তাঁদের নিজেদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, তাঁদের সুদ পরিশোধ করতে হবে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে চালু 'বাংলা বন্ড'"প্রথম আলো। ২০১৯-১১-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২ 
  2. BanglaNews24.com। "লন্ডনে চালু হলো 'বাংলা বন্ড' :: BanglaNews24.com mobile"banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২ 
  3. আনোয়ার, শাকিল (২০১৯-১১-১১)। "লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে 'বাংলা বন্ড', টাকায় আগ্রহ কেন" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২ 
  4. "লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হল 'বাংলা বন্ড'"m.bdnews24.com। ২০১৯-১১-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২ 
  5. "বাংলা বন্ড চালু বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একটি বড় পদক্ষেপ: অর্থমন্ত্রী | বাংলাদেশ প্রতিদিন"Bangladesh Pratidin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২ 
  6. "বাংলা বন্ড: তিন খাতে যাবে বন্ডের টাকা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৫ 

আরও দেখুন সম্পাদনা