বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হলো একটি বাংলাদেশ ভিত্তিক অরাজনৈতিক, সমাজকল্যাণমূলক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় হিন্দু সংগঠন। এটি বাংলাদেশে উদযাপিত হিন্দু উৎসব গুলো উদযাপনে সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান করেন। সংগঠনটি ১৯৭৮ সালে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি নামে এবং পরে ১৯৮২ সালে সম্পূর্ণ বাংলাদেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নামে আত্মপ্রকাশ করে।[১]
![]() প্রাতিষ্ঠানিক লোগো | |
গঠিত | ১৯৮২ |
---|---|
প্রতিষ্ঠাস্থান | ঢাকা মহানগর |
ধরন | ধর্মীয় সংগঠন |
আইনি অবস্থা | সক্রিয় |
সদরদপ্তর | ঢাকেশ্বরী মন্দির, ঢাকা, বাংলাদেশ |
অবস্থানসমূহ | |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
সভাপতি | জে এল ভৌমিক |
সাধারণ সম্পাদক | অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার |
ইতিহাস সম্পাদনা
প্রতিষ্ঠার কারণ ও প্রতিষ্ঠিতা সম্পাদনা
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে এবং ১৯৭২ সালে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলনীতি করিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়।[২] পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাতিল এবং একটি মাত্র ধর্মকে সংবিধানে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়।[৩][৪] ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায় সম-মর্যাদা ও সম-অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং তাহাদের জাতীয় জীবনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়। ফলে, হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের প্রবণতা দেখা দেয় এবং নিরাপত্তাহীনতা ও অবজ্ঞাজনিত কারণে সম্প্রদায়ের পূজা-পার্বণ, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান আয়োজনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।[৫][৬][৭]
এই প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় ও সামাজিক কাঠামোর ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগরকে সংগঠিত করিবার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে ‘মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সমগ্র বাংলাদেশের পূজা-পার্বণ, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদায় পালন এবং সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমমর্যাদা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’ গঠন করা হয়। প্রতি দুই বছর পরপর এর সম্মেলন হয় ও নতুন কমিটি গঠিত হয়।
বর্তমান কমিটি সম্পাদনা
২০২১ সালে ২৫ ডিসেম্বর জে এল ভৌমিককে সভাপতি এবং অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দারকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নতুন কমিটি গঠিত হয়। ১৭ জানুয়ারি নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় পরিষদ শপথ নেয়।[৮][৯]
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পাদনা
এই সংগঠনটি সম্পূর্ণভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠির একটি ধর্মীয়, সমাজকল্যাণমূলক, অরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। হিন্দু ধর্মাবলন্বী সকল বর্ণের মানুষকে সংগঠিত করে পূজা-পার্বণ ও ধর্মীয় উৎসবাদি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে উদযাপন, ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ সাধন, ধর্ম প্রচার, ধর্মীয় পুস্তকাদি প্রকাশ, ধর্মীয় শিক্ষাদান, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে পালন, বর্ণ বৈষম্যের অবসান করে একই সমাজ গড়ে তোলা, যৌতুক প্রথার অবসান, অসবর্ণ বিবাহে উৎসাহ ও সাহায্য প্রদান, অস্বচ্ছল পরিবারের সদস্যকে বিবাহে সহযোগিতা, শিক্ষা ও চিকিৎসায় সহযোগিতা প্রদান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করা, মানবাধিকার, সাংবিধানিক সম-অধিকার ও মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে[১০] দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ এবং সমাজ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।[১১]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২০।
- ↑ "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান | রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি"। bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ "Law and Our Rights"। www.thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ "দেশ ছাড়লে চলবে না, প্রতিবাদ করতে হবে"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ মোড়ল, শিশির। "৫০ বছরে দেশে ৭৫ লাখ হিন্দু কমেছে"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ রশীদ, আমীন আল (২০২১-১০-২১)। "রাষ্ট্রধর্ম বাতিলই কি সমাধান?"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ "হিন্দু হওয়াটাই কী দোষের?"। banglanews24.com। ২০১৪-০১-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "পূজা উদযাপন পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২০।
- ↑ "পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভৌমিক সম্পাদক চন্দ্রনাথ"। www.jugantor.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২০।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলা করতে হবে"। banglanews24.com। ২০২২-০৯-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ রিপোর্টার, স্টাফ। "সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধির তাগিদ পূজা উদযাপন কমিটির"। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।