বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩নং সেক্টর

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩নং সেক্টর হলো সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত একটি সেক্টর।[১][২] সেক্টরটির সদরদপ্তর ছিলো হেজামারায়।[৩] ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মেজর কে এম শফিউল্লাহ[৩] এরপরে দায়িত্ব নেন মেজর এ এন এম নুরুজ্জামান, তিনি ২৩ জুলাই ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। এই সেক্টরটি ১০টি সাব-সেক্টরে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। ইস্ট বেঙ্গল, সিলেট ও ময়মনসিংহের ইপিআর বাহিনী মিলে ৩ নম্বর সেক্টর গঠিত হয়েছিলো। এই সেক্টরের আওতাধীন ছিলো প্রায় ১৯টি গেরিলা ঘাঁটি।[৩]

বিস্তৃত অঞ্চল সম্পাদনা

সেক্টরটির সমস্ত অঞ্চল গাঠনিক অঞ্চল বলতে, এটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমা, বৃহত্তর সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, ঢাকা জেলার গাজীপুর ও নরসিংদী মহকুমা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরাংশ ও নারায়ণগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এটি ভৌগোলিকভাবে ২৩°৯০′ থেকে ২৪°৬০′ উত্তর অক্ষরেখা এবং ৯০° থেকে ৯১°৯০′ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে অবস্থিত ছিলো। ৩ নং সেক্টরের উত্তরে ১১ নং সেক্টর, দক্ষিণে ২ নং সেক্টর, পশ্চিমে টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ আর পূর্বে সিলেটের মৌলভীবাজার ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অবস্থান ছিলো। মোট কথা সেক্টরটির সর্বমোট আয়তন ছিল প্রায় ৯,৮০০ বর্গ কিলোমিটার।[৪]

অঞ্চলের প্রকৃতি সম্পাদনা

এই সেক্টরের ভূ-প্রকৃতি ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা, সাধারণ সমতল ভূমি সমন্বয়ে গঠিত ছিলো। এছাড়াও চা বাগান, নদ-নদী, খাল-বিল এবং হাওর-বাওরের প্রাচুর্য ছিলো। গবেষকদের মতে, এই সেক্টরটি বর্ষা আর শীতকালে সাধারণ যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত ছিলোনা, বরং ভৌগোলিক কারণে অঞ্চলটি গেরিলা যুদ্ধের জন্য অনেকটা উপযুক্ত ছিলো।[৫]

সেক্টরটিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ছাড়াও শীতলক্ষ্যা, সুরমা ও কুশিয়ারা, আড়িয়াল খাঁ, তিতাসসহ আরো অনেক উল্লেখযোগ্য নদী ছিল। পূর্বদিক দিয়ে ঢাকা প্রবেশের ক্ষেত্রে এই নদীসমূহ ছিল অন্যতম প্রধান বাধা। এছাড়াও তেঘরিয়া, বাঘা, ঘনিয়াভাঙ্গা, কালেশ্বর, হুমাইপুর, সুরমা, বাউলা প্রভৃতি অনেক উল্লেখযোগ্য হাওর ও বিল ছিলো। এই এলাকার প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা জলপথ হওয়ায় মুক্তিবাহিনীর সুবিধাই হয়েছিলো, মুক্তিবাহিনিরা প্রায়ই এসব পথে গুপ্ত ও গেরিলা হামলা চালাতো।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

এই সেক্টরের সাথে ঢাকার রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো। রেলপথের আখাউড়া-শায়েস্তাগঞ্জ রেলপথটি সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় পাকিস্তানি সেনাদের জন্য বেশ প্রতিকূল একটি স্থান ছিল। এই সেক্টরে বেশ কিছু ছোট-বড় রেলসেতু ছিল, এদের মধ্যে ভৈরব সেতু উল্লেখযোগ্য। ভৈরব সেতুটি পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর উভয়ের লক্ষ্যবস্তু ছিলো।[৬]

এছাড়া সেক্টরের প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে মধ্যে ঢাকা-গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য ছিলো। ময়মনসিংহ অঞ্চলে অস্ত্র-সস্ত্র ও সৈন্য পাঠানোর জন্য তারা এই মহাসড়ক ব্যবহার করতো। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের যৌথবাহিনীর ঢাকা দখল করার সময় এই রুট দিয়েই রাজধানীতে প্রবেশ করেছিলো।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. হ্, আ হ মে দ উ ল্লা। "সেক্টর কমান্ডারদের মুক্তিযুদ্ধ"DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮ 
  2. "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস খণ্ড ২ (Part 1)"সংগ্রামের নোটবুক। ২০২১-০৯-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮ 
  3. "মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টর"banglanews24.com। ২০১৬-০৩-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৭ 
  4. "মুক্তিযুদ্ধ - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮ 
  5. "মুক্তিযুদ্ধের তিনটি ব্যাটালিয়ন"Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮ 
  6. "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - Jessore, Jhenaidah, Magura, Narail"jessore.info। ২০২১-১২-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮