ফ্রাঙ্ক সাগ

ইংরেজ ক্রিকেটার

ফ্রাঙ্ক হাউ সাগ (ইংরেজি: Frank Sugg; জন্ম: ১১ জানুয়ারি, ১৮৬২ - মৃত্যু: ২৯ মে, ১৯৩৩) ডার্বিশায়ারের ইকস্টোন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও ফুটবলার ছিলেন। ১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে দুইটি টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার, ডার্বিশায়ার ও ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ফ্রাঙ্ক সাগ। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে দলের প্রয়োজনে উইকেট-রক্ষণে এগিয়ে আসতেন। এছাড়াও, পাঁচটি ফুটবল ক্লাবে খেলেছেন তিনি।

ফ্রাঙ্ক সাগ
আনুমানিক ১৮৯৫ সালে ফ্রাঙ্ক সাগ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামফ্রাঙ্ক হাউ সাগ
জন্ম(১৮৬২-০১-১১)১১ জানুয়ারি ১৮৬২
ইকস্টোন, ডার্বিশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৯ মে ১৯৩৩(1933-05-29) (বয়স ৭১)
ওয়াটারলু, লিভারপুল, ইংল্যান্ড
উচ্চতা৬ ফুট ০ ইঞ্চি (১.৮৩ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকামাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক১৩ আগস্ট ১৮৮৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৩ সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৮৩ইয়র্কশায়ার
১৮৮৪১৮৮৬ডার্বিশায়ার
১৮৮৭–১৮৯৯ল্যাঙ্কাশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩০৫
রানের সংখ্যা ৫৫ ১১,৮৫৯
ব্যাটিং গড় ২৭.৫০ ২৪.৪৫
১০০/৫০ –/– ১৬/৫০
সর্বোচ্চ রান ৩১ ২২০
বল করেছে ৩৯৭
উইকেট ১০
বোলিং গড় - ২৭.৩০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং - ২/১২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং –/– ১৬৭/১
উৎস: ক্রিকইনফো, ৩০ জুলাই ২০১৮

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ডার্বিশায়ারের ইকস্টোন এলাকায় ফ্রাঙ্ক সাগের জন্ম। পরবর্তীকালে উকিলের মুহুরি হিসেবে কাজ করেন। ১৮৮১ সালে বিধবা মাতার সাথে নেথার হলামে বসবাস করেন।[১] ডার্বিশায়ারে জন্মগ্রহণ করলেও ইয়র্কশায়ারে তিনি তার শৈশবকাল অতিবাহিত করেন।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটি কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে খেলার সৌভাগ্য হয় তার। ১৮৮৩ সালে ইয়র্কশায়ার, ১৮৮৪ থেকে ১৮৮৬ পর্যন্ত ডার্বিশায়ার ও ১৮৮৭ থেকে ১৮৯৯ পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ফ্রাঙ্ক সাগ।[২]

১৮৮৩ সালে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। [৩] ১৮৮৪ সালে ডার্বিশায়ারের পক্ষে খেলার জন্য দল পরিবর্তন করেন। দলের তিনি সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পান। তাস্বত্ত্বেও ঐ মৌসুমে দলটি অমর্যাদাকর ফলাফল করে। দশটি খেলার সবকটিতেই দলটি পরাজিত হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে সাউদাম্পটনে অনুষ্ঠিত খেলায় হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ১৮৭ রান তুলেছিলেন ও গড় রানের দিক দিয়ে লাডফোর্ড ডকারের পর দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করেন। ১৮৮৬ সালে উইলিয়াম চ্যাটারটনের পর দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। ডার্বিশায়ারের দূর্ভাগ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ১৮৮৭ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারে চলে যান।

টেস্ট ক্রিকেট সম্পাদনা

ল্যাঙ্কাশায়ারে চলে আসার পরই ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ডের পক্ষে দুই টেস্টে অংশ নেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুই টেস্ট খেলার সুযোগ হয় তার। ১৩ আগস্ট, ১৮৮৮ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে ফ্রাঙ্ক সাগের।

১৮৯০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্য নয়জন সেরা পেশাদার ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে ঘোষিত হন।

পাঁচ মৌসুমে সহস্রাধিক রান তুলেছিলেন যার সবগুলোই ল্যাঙ্কাশায়ারে থাকাকালীন। জেমস সাউদার্টনের পর অন্যতম প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্টি ক্রিকেটে তিনটি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৯৭ সালে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলায় সহস্রাধিক পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন।

খেলার ধরন সম্পাদনা

শারীরিক গড়নের দিক দিয়ে ছয় ফুট উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। শক্ত মজবুত ব্যক্তি হিসেবে বলের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন। ড্রাইভের ফুলঝুরি ছোটাতেন। স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে বলকে হুক করতেন। ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ কম্পমান ছিলেন। কিন্তু, ক্রিজে টিকে গেলে বলকে বেশ সজোরে আঘাত করতেন। এছাড়াও আউটফিল্ডার হিসেবেও বেশ সুনাম ছিল তার।

ফুটবলে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

১৮৮২-৮৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো শীর্ষসারির দল হিসেবে বোল্টন ওয়ান্ডারার্সের পক্ষে ফুটবল খেলায় অংশ নেন। তবে দলে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়কালের জন্যে অবস্থান করেছিলেন। ১৮৮৩-৮৪ মৌসুমে দি ওয়েনসডে দলের পক্ষে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এছাড়াও তিনি দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নভেম্বর, ১৮৮৪ থেকে মার্চ, ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত ডার্বি কাউন্টির পক্ষে খেলেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর মার্চ, ১৮৮৫ থেকে সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত বার্নলে দলের পক্ষে খেলে দলকে নেতৃত্ব দেন। এক ধারাভাষ্যকারের অভিমত, ফুটবলার হিসেবে মাঠের যে-কোন অবস্থানে দীর্ঘসময় খেলার সক্ষমতা দেখিয়েছেন তিনি। সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ সালে এভার্টনের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন।[৪]

মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে ৬ অক্টোবর, ১৮৮৮ তারিখে এভার্টন ও লীগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। এভার্টনের নিজ মাঠ অ্যানফিল্ডে সফরকারী অ্যাসটন ভিলার বিপক্ষে তার দল ২-০ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। ১৮৮৮-৮৯ মৌসুমে লীগের ২২টি খেলার মধ্যে নয়টিতে অংশ নেন ফ্রাঙ্ক সাগ। ১৮৮৯-৯০ মৌসুমে দলে থাকলেও মাত্র একটি খেলায় মাঠে নেমেছিলেন। সর্বমোট দশ খেলায় অংশ নিলেও কোন গোল করতে পারেননি তিনি। ১৮৯০ সালে বার্নলেতে চলে যান। তবে, প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ হয়নি তার।[৫]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

বলিষ্ঠ বাহুর অধিকারী ছিলেন। ফলে ভারোত্তোলনসহ, দীর্ঘদূরত্বের সাঁতার ও গোলক নিক্ষেপেও অংশ নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও, লিভারপুল শৌখিন বিলিয়ার্ড চ্যাম্পিয়নশীপে চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিয়েছেন। রাইফেল শ্যুটিংয়ে অগণিত পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও ক্রিকেট বল নিক্ষেপ করে রেকর্ড গড়েছেন।[৬]

২৯ মে, ১৯৩৩ তারিখে ৭১ বছর বয়সে লিভারপুলের ওয়াটারলু এলাকায় ফ্রাঙ্ক সাগের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. British Census 1881
  2. "Frank Sugg"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১১ 
  3. Warner, David (২০১১)। The Yorkshire County Cricket Club: 2011 Yearbook (113th সংস্করণ)। Ilkley, Yorkshire: Great Northern Books। পৃষ্ঠা 379। আইএসবিএন 978-1-905080-85-4 
  4. Matthews, Tony (২০০৪)। Who's Who of Everton। Mainstream Publishing। পৃষ্ঠা 247–248। আইএসবিএন 1 84018 819 7 
  5. "English National Football Archive"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-৩০(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  6. Wisden – Obituaries in 1933. cricinfo.com

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা