ফরায়েজি আন্দোলন
এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (অক্টোবর ২০১৫) |
ফরায়েজি আন্দোলন হলো একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন ১৯ শতকের প্রথম দিকে সূচিত হয়েছিল। ফরায়েজি আন্দোলনের মুখপাত্র ছিলেন বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক হাজী শরীয়তুল্লাহ। ইসলামের অবশ্য করণীয় কাজকে বলে 'ফরজ'। এই 'ফরজ' শব্দ থেকেই 'ফরায়েজি' এসেছে। ফরাজী আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্যে সূচিত হলেও পরবর্তীতে এটি কৃষকদের আন্দোলনে রূপ লাভ করে।[১] হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরিদপুর ও তার আশে পাশের অঞ্চলে সংগঠিত এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।[২] ধর্মীয় সংস্কারের পাশপাশি কৃষকদের জমিদার, নীলকরদের অত্যাচার ও শোষন হতে মুক্ত করা ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য।[৩] হাজী শরিয়তুল্লাহ-র মৃত্যুর পর তার পুত্র দুদু মিয়া এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
আন্দোলনের পটভূমি
সম্পাদনাবাংলার মুসলমানদের মাঝে বেশ কিছু সংখ্যক ছিল ধর্মান্তরিত। ইসলাম গ্রহণ করার পূর্ব তারা ছিল হিন্দু, বৌদ্ধ বা প্রকৃতি পূজারী। তাই মুসলমান হওয়ার পরো স্বাভাবিক ভাবে তাদের পূর্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির অনেক কিছু থেকে যায়। তার প্রতিফলন দেখা দেয় জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এগুলো প্রকট হয়ে ওঠে বাংলায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পরে। মক্কায় অবস্থান কালে হাজী শরীয়তুল্লাহ ওয়াহাবি আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, বাংলার মুসলমানরা প্রকৃত ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে এসে পড়েছে। তাই দেশের ফিরে এসে তিনি মুসলমান সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই কারণে তিনি ফরায়েজি আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলনের লক্ষ্য
সম্পাদনাফরায়েজি আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ বাংলার ধর্মীয় আন্দোলন গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা পরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মুসলমানদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, চাকরি, জমিদারি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার মুসলমানদের আত্মসচেতনতা সৃষ্টি ও ধর্মীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো পালন করানোর লক্ষ্যে হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলন শুরু করেন।
ফরায়েজি আন্দোলনে হাজী শরীয়তুল্লাহর অবদান
সম্পাদনাফরায়েজি আন্দোলনের প্রবক্তা ছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহ। হাজী শরীয়তুল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মচর্চা প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপক অধঃপতন লক্ষ করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, মুসলমানরা ইসলামের ফরজ বিধানগুলো ঠিকমতো পালন না করলে তাদের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হবে না। মুসলমানদের ইমানি শক্তি বৃদ্ধি করে ব্রিটিশদের অন্যায়-অপশাসনের প্রতিবাদ করার জন্য তাদের তৈরি করা ছিল তার লক্ষ্য। তিনি কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুঃশাসনে মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে চরম দুর্দশাকর অবস্থার সৃষ্টি হলে হাজী শরীয়তুল্লাহ বিভিন্নভাবে তার আন্দোলন সংগঠন ও পরিচালনা করেন। তিনি যা যা করেছিলেন, তার সারাংশ উল্লেখ করা হলো :
ধর্মীয় বিধিবিধানের গুরুত্ব বর্ণনা : মুসলমানদের ধর্মীয় বিধিনিষেধের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করে ফরজ পালনের তাগিদ দেন। কুসংস্কার দূর করা হাজী শরীয়ত উল্লাহ সমসাময়িক জেমস টেইলর কুসস্কার সমূহের তালিকা করেন যার মধ্যে ছিলো ছুটিপট্রি এবং চিল্লা যেগুলো শিশুর জন্ম এবং দাফনে ব্যবহার করেতেন তিনি এইসব বিলুপ্ত করেন মুসলমানদের অধঃপতনের পেছনে কুসংস্কার কী কী ভূমিকা রাখে, তা বুঝিয়ে পরিহার করতে উৎসাহী করেন।
নীলকরদের অত্যাচারিত সম্পর্কে ধারণা : নীলকর বণিকদের অত্যাচারে সর্বস্বান্ত কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন হাজী শরীয়ত উল্লাহ।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসন সম্পর্কে ধারণা : মুসলমানদের সার্বিক অবনতির কারণ যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুঃশাসন, তা তিনি জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করে সফল হন।
কোম্পানির অবিচার বিষয়ে জনমত : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্বিচারের কৃষক-শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে, অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে_এসব বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করেন।
আন্দোলনের উদ্দেশ্য প্রচার : শরীয়ত উল্লাহ তার আন্দোলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য জনগণের মাঝে প্রচার করেন। জনগণ তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব অত্যাচার-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
হাজী শরীয়ত উল্লাহর পর ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তার পুত্র দুদু মিয়া। হাজী শরীয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের গতি সঞ্চার করেন।
ফরায়েজি আন্দোলনে দুদু মিয়ার অবদান
সম্পাদনাদুদু মিয়া অসাধারণ সাংগঠনিক গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি ফরায়েজিদের সংঘবদ্ধ ও সুসংহত করেন।
লাঠিয়াল বাহিনী গঠন : দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার জন্য বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন।
খলিফা নিয়োগ : তিনি বাংলাকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রতিটি অঞ্চলের দায়িত্ব অর্পণ করেন একজন খলিফার ওপর।
আঞ্চলিক সমন্বয় : বিভক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, তথ্য আদান-প্রদান, অর্থ সংগ্রহ ও কূটনৈতিক কলাকৌশল প্রয়োগ প্রভৃতির মাধ্যমে বিশাল অঞ্চলজুড়ে সমন্বিত সংগ্রাম পরিচালনা করেন।
অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম : ফরায়েজি আন্দোলনে অর্থনৈতিক মাত্রা যোগ করে কৃষক দুঃখী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম শুরু করেন।
রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ : দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলন সংস্কারপন্থী আন্দোলনের গণ্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক রূপ লাভ করে। দুদু মিয়ার সাংগঠনিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার বলে ফরায়েজি আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়।
নেতৃত্বের অভাব ও আন্দোলনের সমাপ্তি
সম্পাদনা১৮৬২ সালে দুদু মিয়া ঢাকা জেলায় মৃত্যু বরণ করেন। দুদু মিয়ার কোনো যোগ্য উত্তরাধীকারী ছিল না। তাই নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। অপরদিকে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রভাবে এই আন্দোলন চাপা পড়ে যায়। এভাবেই ফরায়েজি আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Ali, Tariq Omar (২০১৮-০৫-১৫)। A Local History of Global Capital: Jute and Peasant Life in the Bengal Delta (ইংরেজি ভাষায়)। Princeton University Press। পৃষ্ঠা ৪৯। আইএসবিএন 978-0-691-17023-7।
- ↑ "Haji Shariatullah"। Muslim Ummah of North America। Muslim Ummah of North America। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Khan, Muin-ud-Din Ahmad। "Haji Sharitullah"। Banglapedia। Bangladesh Asiatic Society। ১৪ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |