ফতেহ চাঁদ বধওয়ার

পদ্মভূষণ পদক প্রাপক

ফতেহ চাঁদ বধওয়ার ওবিই (১৯০০ - ১০ অক্টোবর ১৯৯৫) ছিলেন একজন ভারতীয় বেসামরিক কর্মচারী এবং প্রথম ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান।[১]

ফতেহ চাঁদ বধওয়ার
জন্ম১৯০০
মৃত্যু১০ অক্টোবর ১৯৯৫(1995-10-10) (বয়স ৯৪–৯৫)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাসরকারি কর্মচারী
পুরস্কারঅর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (১৯৪৬)
পদ্মভূষণ (১৯৫৫)

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

বধওয়ারের বাবা ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন অফিসার ছিলেন।[২] তিনি নৈনিতালের শেরউড কলেজ থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন এবং পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল সায়েন্স ট্রিপোস পড়তে যান।[২][৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

বধওয়ার একজন প্রকৌশলী হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। কেমব্রিজে তার প্রকৌশল ডিগ্রি শেষ করার পর মেরিন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে কাজ করেন। [৪] [৫] ১৯২৫ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতায় পূর্ব ভারতীয় রেলওয়েতে [৫] যোগদান করেন। এখানে তিনি ছিলেন রেলওয়ের প্রযুক্তিগত পরিষেবায় প্রথম ভারতীয় নিয়োগপ্রাপ্ত। [৬] রেলওয়েতে তার প্রারম্ভিক বছরগুলিতে তাকে নতুন লাইন এবং সেতু স্থাপন সহ বেশ কয়েকটি সিভিল কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তিনি লিলুয়ার ক্যারেজ এবং ওয়াগনস ওয়ার্কশপে কাজ করেছিলেন। [৪]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বধওয়ার কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সাথে কাজ করেছিলেন এবং লেফটেন্যান্ট-কর্নেল পদপ্রাপ্ত হন। যুদ্ধ প্রচেষ্টায় তার সেবার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের টেকনিক্যাল গ্রুপের কমান্ডিং অফিসার ফতেহ চাঁদ বাধওয়ার ১৯৪২ সালে এমবিই (সামরিক) উপাধিতে ভূষিত হন। [৪] [৭]

পরের বছর তিনি আবার বেসামরিক প্রশাসনে যোগ দেন এবং রেলওয়ে বোর্ডের সেক্রেটারি, ওধ ও তিরহুত রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার এবং ১৯৪৯ সাল থেকে রেলওয়ে বোর্ডে সদস্য স্টাফ এবং তারপর সদস্য ইঞ্জিনিয়ারিং হিসাবে বিভিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর পরিষেবার জন্য তিনি ১৯৪৬ সালে অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার ওবিই (সিভিল) হন।[৪] [৮] ১৯৫১ সালে তিনি রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন— প্রথম ভারতীয় যিনি সেই অফিসে ১৯৫৪ সালের অক্টোবরে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। [১]

রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বধওয়ার ভারতীয় রেলওয়ের একক সংস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন রেলপথ, সরকারি মালিকানাধীন লাইন এবং দেশীয় রাজ্য একীকরণের তত্ত্বাবধান করেছিলেন। তিনি রেলওয়ে প্রযুক্তির স্বদেশীকরণেরও একজন প্রবক্তা ছিলেন এবং ব্রিটেন থেকে ভারতের রেল আমদানি কমাতে এবং রেলওয়ের রোলিং স্টক আধুনিকীকরণে তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ ব্যবহার করেছিলেন। তিনি রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন লখনউয়ের রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠিত হয়। [১] [৬] [৯]

ভারতীয় রেলওয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সদ্য স্বাধীন ভারতকে শিল্পায়ন করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিরও সদস্য ছিলেন। [১০]

পরবর্তী জীবন সম্পাদনা

অবসর গ্রহণের পর বধওয়ার "বার্ড অ্যান্ড হিলগারস" নামক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে শুল্ক তদন্ত কমিটি এবং জাতীয় শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানও করা হয়েছিল।[৪] তিনি ১৯৫০-এর দশকে সিলন সরকারী রেলওয়ে পুনর্গঠনে সহায়তা করেছিলেন। তখন তিনি দুই মাস কলম্বো পরিকল্পনার অধীনে সেই দেশে কাজ করেছিলেন। [১১] [১২] [১৩] বধওয়ার ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী এবং পর্বতারোহী। তিনি দিল্লি বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং দ্য হিমালয়ান ক্লাবের সাথে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল। তিনি এখানে ১৯৬৪-৬৭ সালের মধ্যে প্রথম ভারতীয় সভাপতি ছিলেন। [১৪] এছাড়াও তিনি পাটিয়ালা ভিত্তিক ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর কালচারাল কো-অপারেশন অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। [১৫]

বধওয়ার ১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।[১]

সম্মাননা সম্পাদনা

বধওয়ারকে ১৯৫৫ সালে ভারত সরকার পদ্মভূষণ দিয়ে সম্মানিত করেছিল।[১৬] তাঁর সম্মানে মুম্বাইয়ের কোলাবা এলাকার একটি রেলওয়ে আবাসিক উপনিবেশ বধওয়ার পার্কের নামকরণ করা হয়েছে।[৬][১৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "OBITUARY: F. C. Badhwar"The Independent। ১৯ অক্টোবর ১৯৯৫। ২৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ 
  2. Khosla, Gopal Das (১৯৮৫)। Memory's Gay Chariot: An Autobiographical Narrative। Allied Publishers। পৃষ্ঠা 50। আইএসবিএন 9788170230281 
  3. M. O. Mathai (১৯৭৯)। My Days With Nehru। Vikas Publishing House। পৃষ্ঠা 156। আইএসবিএন 978-0-7069-0823-7 
  4. "IN MEMORIAM — FATEH CHAND BADHWAR (1900-1995)"। The Himalayan Club। ১০ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ 
  5. Railway Gazette International। Reed Business Pub.। জানুয়ারি ১৯৫৩। পৃষ্ঠা 345। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৩ 
  6. "Rail Trail"The Indian Express। ২০১৩-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ 
  7. "Supplement to the London Gazette, January 1942" (পিডিএফ)London Gazette। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ 
  8. "Supplement to the London Gazette, June 1946" (পিডিএফ)London Gazette। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ 
  9. "50 Years of RDSO: Powering Indian Railways" (পিডিএফ)। ৫ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ 
  10. L. C. Jain (১৯৯৮)। The city of hope: the Faridabad story। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 978-81-7022-748-9 
  11. Railway Gazette International। Reed Business Pub.। ১৯৫৫। পৃষ্ঠা 226। 
  12. Overseas Railways। ১৯৫৫। পৃষ্ঠা 71। 
  13. Bamunuarachchige Don Rampala (১৯৯১)। History of the Sri Lanka Government Railway: B.D. Rampala Felicitation Volume। Institution of Engineers, Sri Lanka। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 978-955-9119-00-5 
  14. Kapadia, Harish (১৯৯৬)। "Himalayan Journal 52"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ 
  15. Mohinder Singh (২০০১)। Punjab 2000: Political and Socio-economic Developments। Anamika Publishers & Distributors (P) Limited। পৃষ্ঠা 389। আইএসবিএন 978-81-86565-90-2 
  16. "Bharat Ratna for Nehru"The Hindu। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  17. "Badhwar Park"। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩