পোক্কালি চাল

লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের প্রকরণ

পোক্কালি (মালয়ালম: പൊക്കാളി) লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের একটি অনন্য জাত যা উপকূলীয় জলাবদ্ধ অঞ্চলে জৈব উপায়ে বিস্তীর্ণ আকারে জলজ পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষ করা হয়। দক্ষিণ ভারতের কেরলের আলেপ্পি, ত্রিশূর এবং এর্নাকুলাম জেলায় প্রায় ৫০০০ হেক্টর জমিতে এই ধানের চাষ হচ্ছে।[১] পোক্কালি ধানের (ও চাল) জাতটি চেন্নাইয়ের ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন কার্যালয় থেকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।[২]

দানাসহ পোক্কালি ধানের একটি শীষ
ভেচুর পোক্কালি ধানের খেত, ভাইক্কম, কেরল, ভারত

লবনাক্ততা প্রতিরোধে এটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। জমিতে পানির লবণাক্ততার মাত্রা কম থাকলে জুন থেকে নভেম্বর মাসের শুরুতে এই ধানের চাষ হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে যখন লবণাক্ততা বেশি থাকে তখন চিংড়ি চাষ শুরু হয়।[১] ধান কাটার পরে চিংড়ির পোনাগুলো জলের উপর সাঁতার কাটে এবং কাটা ফসলের বাকি অংশ সেগুলোকে খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। জমিতে জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে নালা ও জলকপাট ব্যবহৃত হয়। ধানের ফসল, যা অন্য কোনও সার বা সার না পায়, চিংড়ির মলমূত্র এবং অন্যান্য অবশিষ্টাংশের থেকে পুষ্টি যোগায়।

জোয়ারের প্রবাহ যেহেতু জমিগুলোকে অত্যন্ত উর্বর করে তোলে, তাই কোনও সার বা রাসায়নিক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না; ধানের চারাগুলো কেবল প্রাকৃতিক উপায়েই বৃদ্ধি পায়। জলাবদ্ধ জমিতে টিকে থাকার জন্য ধানের গাছগুলো ১৩০-১৪০ সেমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরিপক্ব হওয়ার পরে এগুলো উপরের অংশে বেঁকে যায় এবং শুধুমাত্র ধানের শাখামঞ্জরীটি দাঁড়িয়ে থাকে। অক্টোবরের শেষের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা হয়। কেবল শাখামঞ্জরীগুলো (প্যানিকেল) শীর্ষ থেকে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার কেটে ফেলা হয় এবং বাকি অংশ পানিতে ক্ষয়ে জমিতে থেকে যায়, যা সময়মতো নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে চাষ শুরু হওয়া চিংড়ির জন্য খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

জৈবভাবে জন্মানো পোক্কালি চাল তার অসাধারণ স্বাদ এবং উচ্চ মাত্রার প্রোটিন উপাদানের জন্য খ্যাত। কৃষকরা দাবি করেন যে পোক্কালি চালের দানা অতিরিক্ত বড় এবং এর বেশ কয়েকটি ওষধি গুণ রয়েছে। তারা এও দাবি করেন যে অতীতে পোক্কালি চাল (চালের ভাত) মৎস্যজীবীদের সারা দিন সমুদ্রে থাকার শক্তি সরবরাহ করত। এমনকি আমেরিকার আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় পোক্কালি ধানের জন্য একটি ডিএনএ লাইব্রেরি বা সংগ্রাহাগার তৈরি করেছে।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Shrimp, fish and paddy cultivation in same field is lucrative"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৩ 
  2. "Pokkali rice is now a brand name"The Hindu। ২০১০-১১-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা