পুতুল খেলা গ্রাম বাংলার শিশুদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা[১] এটি সাধারনত মেয়েরা বেশি খেলে থাকে। বাংলার সর্বত্রই পুতুল খেলা সমান জনপ্রিয়।[২] পুতুল খেলেনি এমন মেয়ে বাংলায় নেই বললেই চলে। বর্তমানে পুতুল শৌখিন মানুষের সংগ্রহেরও বস্তু। ফরিদপুরময়মনসিংহ অঞ্চলের দুটি ছড়াগানে পুতুল বিয়ের আনন্দ-বেদনার চমৎকার ছবি ফুটে উঠেছে।

জমিদার গিন্নী পুতুল

চম্পা ফুলের গন্ধে

জামাই আইছে আনন্দে
চম্পা ফুলের সুবাসে
জামাই আইছে আহাসে

-(ময়মনসিংহ)

হলদি গুটি গুটি

চিরা কুটি কুটি
আজ ফুতলির বিয়া
ফুতলিরি নিয়া যাবে
ঢাকে বাড়ি দিয়া
ফেসী কান্দে ওসী কান্দে
কান্দে মাইয়ার মা
হোলা বিড়াল কাইন্দা মরে

ঢোক মেলায় না।
-(ফরিদপুর)

উপকরণ সম্পাদনা

পুতুল সাধারনত মানবাকৃতিতে মাটি, কাঠ অথবা কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। পুতুল সাধারনত শিশুরা বাড়িতে বসেই তৈরি করে। এছাড়া বিভিন্ন মেলা, যেমন বৈশাখী মেলা, পূজা, রথের মেলা, পৌষ সংক্রান্তি, চড়ক পূজা, শিবরাত্রি, মহররম, ঈদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানের সময় পুতুল বিক্রি করা হয়। এছাড়া বর্তমানে মাটির পুতুলের সাথে সাথে প্লাস্টিকের পুতুলও অনেক পাওয়া যায়।[৩]

নিয়মকানুন সম্পাদনা

প্রথমে নানা রকমের পুতুল কাপড় অথবা রং দিয়ে সাজানো হয়। এরপর মেয়ে পুতুলকে গয়না দিয়ে কনে সাজানো হয় এবং ছেলে পুতুলকে বর সাজিয়ে শিশুরা তাদের বিয়ে দেয়। রান্না-বান্না, সন্তান লালন-পালন, মেয়ে পুতুলের সাথে ছেলে পুতুলের বিয়ে ইত্যাদি নানা বিষয়ের অভিনয় করেই খেলা হয় পুতুল খেলা। আসলে পুতুল খেলার মধ্যে পুরো সংসারের একটা ছবি ফুটে ওঠে। পুতুলগুলোকে ছোট শিশুরা তাদের সন্তান মনে করে। তারা পুতুলদের মায়ের মতই আদর স্নেহ দিয়ে আগলে রাখে। শুধু তাই নয় শিশুরা পুতুলদেরকে আবার শাসনও করে। পুতুল খেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব হলো একজনের মেয়ের সঙ্গে আরেক জনের ছেলে পুতুলের বিয়ে দেওয়া।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৩ 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৩ 
  3. পুতুলের বিয়ে, কাজী নজরুল ইসলাম (নাটিকা)
  4. বাংলাদেশের খেলাধুলা, রশীদ হায়দার; বাংলা একাডেমী