পুঁজ

ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের প্রদাহের ফলে ক্ষরিত বস্তু

পুঁজ হল, যেসব স্থানে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের কারণে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, সেসব স্থান থেকে হলুদাভ-সাদা, হলুদ বা পিঙ্গল-সাদা বর্ণের ক্ষরিত বস্তু (Exudate)।[১][২] কোন আবদ্ধ স্থানে পুঁজ জমা হলে তাকে বলা হয় ফোড়া, আর এপিডার্মিসের ভেতর বা নিচে দৃশ্যমান পুঁজের সংগ্রহ পাস্টিউল, ফুস্কুড়ি বা ব্রণ হিসেবে পরিচিত।

Pus
মানুষের চোখে পুঁজ ক্ষরণকারী চোখ উঠেছে
বিশেষত্বসংক্রামক রোগ

পুঁজ একটি পাতলা, প্রোটিন-সমৃদ্ধ তরল পদার্থ এবং দেহের ইমিউন সাড়ার ফলে (Immune response) মৃত শ্বেত কণিকা (বেশিরভাগই নিউট্রোফিল) দ্বারা গঠিত।[৩] সংক্রমণের সময় ম্যাক্রোফেজ সাইটোকাইন নিঃসরণ করে, যা নিউট্রোফিলকে কেমোট্যাক্সিসের মাধ্যমে প্রদাহের স্থানে পৌঁছুতে উদ্দীপিত করে। সেসব স্থানে নিউট্রোফিলগুলো গ্র্যানিউল (Granules) নিঃসরণ করে, ফলশ্রুতিতে যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ব্যাকটেরিয়া লিউকোসিডিন (Leukocidin) নামক একপ্রকার প্রতিবিষ ক্ষরণের মাধ্যমে ইমিউন সাড়া প্রতিরোধ করে।[৪] বার্ধক্য এবং প্রতিবিষের প্রতিক্রিয়ার ফলে একসময় নিউট্রোফিলগুলো মারা যায়। তখন ম্যাক্রোফেজ তাদেরকে ধ্বংস করে আঠাল পুঁজ গঠন করে। যেসব ব্যাকটেরিয়া পুঁজ গঠন করে তাদেরকে "পায়োজেনিক" ব্যাকটেরিয়া বলে।[৪]

যদিও পুঁজের রঙ সচরাচর হলুদাভ-সাদা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর রঙ ভিন্ন ধরনের হতে পারে। মায়েলোপারক্সিডেজ (Myeloperoxidase), কয়েক প্রকার শ্বেত রক্তকণিকা দ্বারা উৎপাদিত একটি তীব্র ব্যাকটেরিয়ারোধী (Antibacterial) প্রোটিন, যার উপস্থিতিতে পুঁজের রঙ সবুজ হতে পারে। সিউডোমোনাস এরুজিনোসা (Pseudomonas aeruginosa)-র কিছু কিছু সংক্রমণের ফলে সবুজ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ তৈরি হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন "পায়োসায়ানিন" (Pyocyanin) নামক একপ্রকার রঞ্জকের কারণে এই সবুজাভ রঙ সৃষ্টি হয়। অ্যামিবার কারণে সৃষ্ট যকৃতের অ্যাবসেসের (Abscesses of the liver) ফলে বাদামি রঙের পুঁজ তৈরি হয়, যা " অ্যানচভি পেস্ট" (Anchovy paste)-এর মত দেখতে বলে অভিহিত হয়। অবাত শ্বসনকারী ব্যাকটেরিয়ার কারণে বেশিরভাগসময় দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ তৈরি হয়।[৫]

ফোড়া (ইংরেজি: abscess) হলো শরীরে টিস্যুর মধ্যে পুঁজ জমা হওয়া


পায়োজেনিক ব্যাকটেরিয়া সম্পাদনা

নিম্নলিখিত ব্যাকটেরিয়া অধিকাংশক্ষেত্রে পুঁজ তৈরিতে ভূমীকা রাখে [৬][৭]

  • Staphylococcus aureus
  • Staphylococcus epidermidis
  • Streptococcus pyogenes
  • Escherichia coli
  • Streptococcus pneumoniae
  • Klebsiella pneumoniae
  • Salmonella typhi
  • Pseudomonas aeruginosa
  • Neisseria gonorrhoeae
  • Actinomyces
  • Burkholderia mallei
  • Mycobacterium tuberculosis

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Definition of pus | Dictionary.com"www.dictionary.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০২ 
  2. "Pus: What is it and why does it happen?"www.medicalnewstoday.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৬-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০২ 
  3. Barer, M. R. (২০১২-০১-০১)। Greenwood, David; Barer, Mike; Slack, Richard; Irving, Will, সম্পাদকগণ। Medical Microbiology (Eighteenth Edition) (ইংরেজি ভাষায়)। Edinburgh: Churchill Livingstone। পৃষ্ঠা 168–173। আইএসবিএন 978-0-7020-4089-4 
  4. Madigan, Michael T. and Martin, John M. Brock Biology of Microorganisms 11th ed. Pearson Prentice Hall. US. 2006: 734
  5. Topazian RG, Goldberg MH, Hupp JR (২০০২)। Oral and maxillofacial infections (4 সংস্করণ)। Philadelphia: W.B. Saunders। আইএসবিএন 978-0721692715 
  6. "Pyogenic Bacteria"www.manual-of-surgery.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০২ 
  7. Simmons, N. A., সম্পাদক (১৯৮০-০১-০১)। An Introduction to Microbiology for Nurses (Third Edition) (ইংরেজি ভাষায়)। Butterworth-Heinemann। পৃষ্ঠা 78–87। আইএসবিএন 978-0-433-30301-5