ফোড়া (ইংরেজি: abscess) ও (লাতিন: abscessus) হল শরীরে টিস্যুর মধ্যে পুঁজ জমা হওয়া। ফোড়ার জায়গা লালচে ও উষ্ণ হয়ে যায়, ব্যথা হয়, ফুলে যায়। ফোলার উপরে চাপ দিলে মনে হবে ভিতরে তরল জমে আছে।[১] যতদূর ফোলা থাকে লালচে ভাব তার চেয়েও বেশিদূর পর্যন্ত থাকে।[৬] কার্বাঙ্কল ও বয়েল হল ফোড়ার দুটি প্রকারভেদ। এরা লোমকূপের স্থানে হয়। কার্বাঙ্কলের আকার বড়ো হয়।[৭]

ফোড়া
পাঁচ দিনের পুরানো ফোড়া। কালো চিহ্নটি বদ্ধ লোমকূপ।
বিশেষত্বচর্মরোগবিদ্যা, সাধারণ অস্ত্রোপচার, সংক্রামক রোগ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
লক্ষণলালচে ভাব, ব্যথা, ফোলা[১]
রোগের সূত্রপাতদ্রুত
স্থিতিকালনির্দিষ্ট নয়
কারণব্যাক্টেরিয়া (প্রায়শ MRSA)[১]
ঝুঁকির কারণশিরাপথে ওষুধের ব্যবহার।[২]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিআল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান[১][৩]
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয়সেলুলাইটিস, সিবেসাস সিস্ট, নেক্রোটাইজিং ফাসাইটিস[৩]
চিকিৎসাকেটে পুঁজ বের করা।[৪]
ঔষধঅ্যান্টিবায়োটিক
সংঘটনের হার~১% প্রতিবছর (যুক্তরাষ্ট্র)[৫]
মৃতের সংখ্যাবিরল

ফোড়া হয় মূলত ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের জন্য।[৮] প্রায়শই একটি ফোড়ায় কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন জীবাণু পাওয়া যায়।[৬] যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক এলাকায় যে ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে সবচেয়ে বেশি ফোড়া হয় তা হল মেথিসিলিন প্রতিরোধী স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস[১] বিরল ক্ষেত্রে পরজীবী দিয়ে ফোড়া হতে পারে বিশেষত উন্নয়নশীল বিশ্বে।[৩] চামড়ার ফোড়া খালি চোখে দেখেই নির্ণয় করা হয়। [১] রোগ নির্ণয়ে জটিলতার ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ডের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।[১] পায়ুপথের চারপাশে ফোড়ার ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যানের সাহায্যে এই ইনফেকশনের গভীরতা নির্ণয় করা যেতে পারে।[৩]

ফোড়ার চিকিৎসার মূল বিষয় হল সেটি কেটে উন্মুক্ত করে পুঁজ বের করে ফেলা।[৪] ত্বকের ফোড়ার চিকিৎসায় স্বাস্থ্যবান মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার না করলেও চলে। [১][১][৯] ফোড়া কেটে পুঁজ বের করার পর সেটি উন্মুক্ত অবস্থায় না রেখে বন্ধ করে দিলে দ্রুত আরোগ্যলাভ হতে পারে।[১০] শুধু সুচ দিয়ে পুঁজ বের করে আনা ফোড়া ভালো হওয়ার জন্য যথেষ্ট না।[১]

ত্বকের ফোড়া প্রায়শই হয় এবং সাম্প্রতিক সময়ে এর হার অনেক বেড়েছে।[১] শিরাপথে ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির হার প্রায় ৬৫%।[২] ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩২ লক্ষ ব্যক্তি ফোড়া নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল।[৫] ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ১৩০০০ রোগী ফোড়া নিয়ে হাসপাতালে আসে।[১১]

লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পাদনা

 
একটি গলিত ফোঁড়া

ফোড়া যে কোনও ধরনের টিস্যুতে দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ত্বকের পৃষ্ঠে, (যেখানে সেগুলি ফোড়া বা গভীর ত্বকের ফোড়া হিসাবে পরিচিত), ফুসফুস, মস্তিষ্ক, দাঁত, বৃক্ক এবং টনসিলে ফোড়া হতে দেখা যায়। বড় ধরনের জটিলতার মধ্যে রয়েছে ফোড়াযুক্ত স্থানে সৃষ্ট বিষাক্ত উপাদানগুলো সংলগ্ন বা দূরবর্তী টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে বিস্তৃত আঞ্চলিক টিস্যুর মৃত্যু (গ্যাংগ্রিন) হতে পারে।

ত্বকের ফোড়ার প্রধান লক্ষণগুলো হল লালতা, তাপ, ফোলাভাব, ব্যথা এবং ত্বকের কার্যকারিতা হ্রাস। উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর) এবং সর্দি হতে পারে। [১২]

অভ্যন্তরীণ ফোড়া শনাক্ত করা বেশ কঠিন। অভ্যন্তরীণ ফোড়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে আক্রান্ত অঞ্চলে ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং অসুস্থ বোধ করা অন্তর্ভুক্ত। অভ্যন্তরীণ ফোড়াগুলি খুব কমই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাময় হয়। তাই যদি এই ধরনের ফোড়া সন্দেহ হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। অবস্থানের উপর নির্ভর করে ফোড়া মারাত্মক হতে পারে।[১৩][১৪]

কারণ সম্পাদনা

ফোড়ার ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগের ব্যবহার।[১৫] আরেকটি সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ হল ডিস্ক হার্নিয়াশন বা মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতার পূর্ব ইতিহাস,[১৬] যদিও এটি এখনো প্রমাণিত হয়নি।

পরজীবী বা বহিরাগত পদার্থের কারণে অ্যাবসিস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণই ফোড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। প্রায়শই বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া একক সংক্রমণের সাথে জড়িত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য অনেক অঞ্চলে ফোড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ ব্যাকটেরিয়া হল মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফালোকক্কাস অরিয়াস। মেরুদণ্ডের সাবড্রাল ফোড়ার মধ্যে, মেথিসিলিন-সংবেদনশীল স্ট্যাফালোকক্কাস অরিয়াস হল এর সাথে জড়িত সবচেয়ে সাধারণ জীব।

খুব কম পরজীবীই ফোড়া সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি উন্নয়নশীল বিশ্বে বেশি দেখা যায়। এটি করার জন্য পরিচিত পরজীবীর মধ্যে রয়েছে ড্রাকুনকুলিয়াসিস এবং মাইয়াসিস।[১৭]

রোগ নির্ণয় সম্পাদনা

যখন এই লক্ষন দেখা দিবে তখন বুঝবেন ফোঁড়া হয়েছে।

  • ফুলে যায়
  • লাল রঙ
  • গরম হয়
  • ব্যথা হয়

চিকিৎসা সম্পাদনা

আক্রান্ত স্থান গরম ভাপ দিলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। ফলে প্রাকৃতিক গলন ত্বরান্বিত হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Singer, Adam J.; Talan, David A. (মার্চ ১৩, ২০১৪)। "Management of skin abscesses in the era of methicillin-resistant Staphylococcus aureus" (পিডিএফ)The New England Journal of Medicine370 (11): 1039–47। ডিওআই:10.1056/NEJMra1212788পিএমআইডি 24620867। অক্টোবর ৩০, ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬ 
  2. Langrod, Pedro Ruiz, Eric C. Strain, John G. (২০০৭)। The substance abuse handbook। Philadelphia: Wolters Kluwer Health/Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 373। আইএসবিএন 9780781760454 
  3. Marx, John A. Marx (২০১৪)। "Skin and Soft Tissue Infections"। Rosen's emergency medicine : concepts and clinical practice (8th সংস্করণ)। Philadelphia, PA: Elsevier/Saunders। পৃষ্ঠা Chapter 137। আইএসবিএন 1455706051 
  4. American College of Emergency Physicians, "Five Things Physicians and Patients Should Question", Choosing Wisely: an initiative of the ABIM Foundation, American College of Emergency Physicians, মার্চ ৭, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৪, ২০১৪ 
  5. Taira, BR; Singer, AJ; Thode HC, Jr; Lee, CC (মার্চ ২০০৯)। "National epidemiology of cutaneous abscesses: 1996 to 2005."The American journal of emergency medicine27 (3): 289–92। ডিওআই:10.1016/j.ajem.2008.02.027পিএমআইডি 19328372 
  6. Elston, Dirk M. (২০০৯)। Infectious Diseases of the Skin.। London: Manson Pub.। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 9781840765144 
  7. Marx, John A. Marx (২০১৪)। "Dermatologic Presentations"। Rosen's emergency medicine : concepts and clinical practice (8th সংস্করণ)। Philadelphia, PA: Elsevier/Saunders। পৃষ্ঠা Chapter 120। আইএসবিএন 1455706051 
  8. Cox, Carol Turkington, Jeffrey S. Dover ; medical illustrations, Birck (২০০৭)। The encyclopedia of skin and skin disorders (3rd সংস্করণ)। New York, NY: Facts on File। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 9780816075096 
  9. Fahimi, J; Singh, A; Frazee, BW (জুলাই ২০১৫)। "The role of adjunctive antibiotics in the treatment of skin and soft tissue abscesses: a systematic review and meta-analysis."। CJEM17 (4): 420–32। ডিওআই:10.1017/cem.2014.52 পিএমআইডি 26013989 
  10. Singer, Adam J.; Thode, Henry C., Jr; Chale, Stuart; Taira, Breena R.; Lee, Christopher (মে ২০১১)। "Primary closure of cutaneous abscesses: a systematic review" (পিডিএফ)The American Journal of Emergency Medicine29 (4): 361–6। ডিওআই:10.1016/j.ajem.2009.10.004পিএমআইডি 20825801। ২২ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  11. Vaska, VL; Nimmo, GR; Jones, M; Grimwood, K; Paterson, DL (জানু ২০১২)। "Increases in Australian cutaneous abscess hospitalisations: 1999-2008."। European Journal of Clinical Microbiology & Infectious Diseases31 (1): 93–6। ডিওআই:10.1007/s10096-011-1281-3পিএমআইডি 21553298 
  12. Churchill Livingstone medical dictionary. (16th সংস্করণ)। Edinburgh: Churchill Livingstone। ২০০৮। আইএসবিএন 9780080982458 
  13. Ferri, Fred F. (২০১৪)। Ferri's Clinical Advisor 2015 E-Book: 5 Books in 1 (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 9780323084307 
  14. Fischer, Josef E.; Bland, Kirby I.; Callery, Mark P. (২০০৬)। Mastery of Surgery (ইংরেজি ভাষায়)। Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 1033। আইএসবিএন 9780781771658 
  15. Khalil, PN; Huber-Wagner, S; Altheim, S; Bürklein, D; Siebeck, M; Hallfeldt, K; Mutschler, W; Kanz, GG (সেপ্টে ২২, ২০০৮)। "Diagnostic and treatment options for skin and soft tissue abscesses in injecting drug users with consideration of the natural history and concomitant risk factors."। European Journal of Medical Research13 (9): 415–24। পিএমআইডি 18948233 
  16. Kraeutler, MJ; Bozzay, JD; Walker, MP; John, K (অক্টো ২৪, ২০১৪)। "Spinal subdural abscess following epidural steroid injection."। J Neurosurg Spine22 (1): 90–3। ডিওআই:10.3171/2014.9.SPINE14159 পিএমআইডি 25343407 
  17. Duff, Patrick (২০০৯)। "Diagnosis and Management of Postoperative Infection"The Global Library of Women's Medicineআইএসএসএন 1756-2228ডিওআই:10.3843/GLOWM.10032। ২০১৪-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান