পানদান কেক

ইন্দোনেশীয় কেক

পান্ডান কেক বা পানদান কেক হল একটি হালকা, নরম, তুলতুলে, সবুজ রঙের কেক।[১] স্বাদের জন্য এই কেকে প্যান্ডানাস অ্যামেরিলিফোলিয়াস বা পান্ডান পাতার রস মেশানো হয় যার জন্য এই কেকের এইরূপ নামকরন হয়েছে।[২][৩] এই কেকটি পান্ডান শিফন নামেও পরিচিত। এই কেকটির উদ্ভব মূলত ইন্দোনেশিয়া দেশে। এছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, হংকং, চীন এবং নেদারল্যান্ডে বসবাসকারী ইন্দোনেশীয় সম্প্রদায়ের লোকেদের মধ্যে এই কেকটি বেশ জনপ্রিয়।[৪][৫][৬][৭] ফিলিপাইন রন্ধনশৈলীর বুকো পান্ডান কেকের সাথে এর সাদৃশ্য আছে, তবে পানদান কেকে নারকেল ব্যবহার করা হয় না। পরিবর্তে এই কেকের ব্যাটারে পান্ডান পাতার নির্যাস মেশানো হয়।

পানদান কেক

উপকরণ সম্পাদনা

অন্যান্য সাধারণ কেকের মতোই পানদান কেক তৈরির মূল উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে ময়দা, ডিম, মাখন বা মার্জারিন এবং চিনি। এই কেকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল এই যে, উপাদান হিসাবে এই কেকে পান্ডান পাতার রস বা নির্যাস ব্যবহার করা হয় যার ফলে কেকটি বেক হওয়ার পর তার স্বতন্ত্র সবুজ রঙ ধারন করে। পান্ডান পাতার রস মিশ্রিত থাকার[৮] কারণে কেকগুলি ক্লোরোফিলের ন্যায় হালকা সবুজ বর্ণের হয়। বর্তমানে এই কেকে আরও গাঢ় সবুজ রঙ করার জন্য কখনও কখনও এতে সবুজ খাদ্য রঙ মেশানো হয়। বর্তমানে প্রস্তুত পানদান কেকগুলি সবসময় পাতার রস দিয়ে তৈরি করা হয় না, পরিবর্তে শুধুমাত্র সবুজ খাদ্য রঙের প্রয়োগ করেই তৈরি করা হয়।[৯]

 
পান্ডান পাতা, এই পাতা থেকে অর্জিত সবুজ রস পান্ডান কেকের রঙ এবং স্বাদ আনতে ব্যবহৃত হয়।

ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং সিঙ্গাপুরে আঞ্চলিকভাবে তৈরি পানদান কেকগুলি সাধারণত হালকা, তুলতুলে এবং নরম হয়।[১০] এই কেকের অন্যান্য যে প্রকারগুলি বাজারে প্রচলিত তা আসলে অন্যান্য ভিন্নপ্রকার কেকের রন্ধনশৈলী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র সবুজ পানদান পাতার স্বাদের নির্যাস থাকেনা। তাই তাদের সাথে পানদান কেকের গঠনের বাহ্যিক মিল থাকলেও স্বাদের রকমফের আছে।

ইতিহাস এবং উৎস সম্পাদনা

ইন্দোনেশিয়া পূর্বে একটি ডাচ উপনিবেশ ছিল। ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের হাত ধরে সেখানে রুটি, কেক এবং প্যাস্ট্রি ইত্যাদি খাবারের প্রচলন হয়।[১১] দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রন্ধনশৈলীতে এই কেকে একটি মনোরম সুবাস যুক্ত করতে পান্ডান পাতা ব্যবহার করা শুরু হয়। এছাড়াও সুগন্ধি নারকেল, চাল, মিষ্টি এবং পানীয় ইত্যাদি বিভিন্ন খাবারে পান্ডান পাতা যোগ করা শুরু হয়।[১২] এইভাবেই ইন্দোনেশিয়ার আঞ্চলিক উৎপাদিত খাদ্য উপাদানের সাথে ইউরোপীয় কেকের রন্ধনশৈলীর সংমিশ্রনের ফলে পানদান কেক ও অন্যান্য বহু নতুন খাবার সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Hemphill, John; Hemphill, Rosemary (১৯৯৭)। What Herb Is That?। পৃষ্ঠা 127। আইএসবিএন 9780811716345। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  2. Jacob, Jeanne; Ashkenazi, Michael (১৫ জানুয়ারি ২০১৪)। The World Cookbook। পৃষ্ঠা 615। আইএসবিএন 9781610694698। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  3. "Cheap Sweets: Pandan Chiffon"LA Weekly। ২২ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  4. Jeff Keasberry (১৮ মার্চ ২০১৫)। "Pandan Cake Pops"। ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৭ 
  5. "Pandan Chiffon Cake"। Asian Inspirations। ২৯ অক্টোবর ২০১৭। 
  6. "Pandan Chiffon Cake"। Asian recipe। ২০১৮-০১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১৬ 
  7. Zoe Li; Maggie Hiufu Wong (৩ এপ্রিল ২০১৭)। "Cakes of the world: Tiramisu, baklava, cheesecake and more national treats"CNN (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২০ 
  8. Castella, Krystina (জানুয়ারি ২০১০)। A World of Cake। পৃষ্ঠা 288। আইএসবিএন 9781603425766। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  9. "Recipe: Pandan chiffon cake with coconut glaze"Los Angeles Times। মে ৫, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৫, ২০১১ 
  10. "Welcome to Bengawan Solo"www.bengawansolo.com.sg। ২০২০-০৫-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২০ 
  11. Luke Nguyen (৫ ডিসেম্বর ২০১৬)। "Crocodile bread and spekkoek: the tasty intersection of Dutch-Indo food"SBS 
  12. Jeanne Jacob; Michael Ashkenazi (২০১৪)। The World Cookbook: The Greatest Recipes from Around the Globe, 2nd Edition (4 Volumes): The Greatest Recipes from Around the Globe। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 615। আইএসবিএন 9781610694698