পাঞ্জাবী কাবাডি, একে চক্র পদ্ধতির কাবাডিও বলা হয়।[১] এটি একটি স্পর্শ খেলা, এটি ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর অংশে পাঞ্জাব অঞ্চলে উদ্ভূত হয়েছিল। পাঞ্জাব অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী অনেক পাঞ্জাবি কাবাডি পদ্ধতি প্রচলিত। আদর্শ কাবাডির মতো কাবাডি বিশ্বকাপ (চক্র পদ্ধতি) এর মতো বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে রাজ্য ও আন্তর্জাতিক স্তরে[২] চক্র পদ্ধতির কাবাডি খেলা হয়।

পাঞ্জাবি কাবাডি
গুরু গোবিন্দ সিং স্টেডিয়ামে কাবাডি
উপনামবৃত্তাকার ধরনের কাবাডি
ক্লাবডিএভি কাবাডি ক্লাব জলন্ধর
বৈশিষ্ট্যসমূহ
শারীরিক সংস্পর্শহ্যা
দলের সদস্য৮ থেকে ২০ জন খেলোয়াড়
খেলার সরঞ্জামজাঙ্গিয়া
ভেন্যুবৃত্তাকার পিচ
প্রচলন
দেশ বা অঞ্চলভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চল
চক্র পদ্ধতির কাবাডি মাঠ।

নাম সম্পাদনা

কাবাডি শব্দটি পাঞ্জাবি শব্দ "কাউডি" (পাঞ্জাবি: ਕੌਡੀ) থেকে উদ্ভূত হতে পারে যা কাবাডি খেলার সময় উচ্চারণ করা হয় অথবা এটি "কাট্টা" (বাছুর) (পাঞ্জাবি: ਕੱਟਾ) এবং "ভাডি" (কাটা) (পাঞ্জাবি: ਵੱਢੀ) থেকে উদ্ভূত যা একসাথে মিলে কাবাডি হয়েছে।[২]

ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জাবি কাবাডি পদ্ধতি সম্পাদনা

লম্বি কাউডি সম্পাদনা

লম্বি কাউডিতে (পাঞ্জাবি: لمبی کوڈی/ਲੰਬੀ ਕੌਡੀ)[৩] ১৫-২০ ফুট বৃত্তাকার পিচ থাকে এবং প্রতি দলে ১৫ জন খেলোয়াড় থাকে। এখানে কোন বহিঃসীমা নেই। খেলোয়াড়রা যতদূর পারে দৌড়াতে পারে। এখানে কোন রেফারি থাকে না। আক্রমণকারী পুরো আক্রমণ জুড়ে "কাউডি, কাউডি" বলে।

সাউঞ্চি কাউডি সম্পাদনা

সাউঞ্চি কাউডি (পাঞ্জাবি: سانچی کوڈی/ਸੌਂਚੀ ਕੌਡੀ)[৩] (এটিকে সাউঞ্চি পাক্কিও/ পাঞ্জাবি: ਸੌਂਚੀ ਪੱਕੀ বলা হয়) কে বক্সিংয়ের অনুরূপ বলে বর্ণনা করা হয়। এটি পাঞ্জাবের মালওয়া অঞ্চলে জনপ্রিয়। একটি চক্রকার খেলা মাঠে অসংখ্য খেলোয়াড় খেলে থাকে। লাল কাপড় বাঁধা একটি বাঁশ মাঠে স্থাপন করা হয় এবং বিজয়ীরর এখানে প্যারেড করে।

সাউচি কাবাডিতে রাইডার ডিফেন্ডারকে আঘাত করবে তবে তা কেবল বুকে। ডিফেন্ডার তখন রাইডারদের কব্জি ধরবে। শরীরের অন্য কোনও অংশ ধরা হলে এটিকে ফাউল ঘোষণা করা হয়। যদি ডিফেন্ডার আক্রমণকারীর কব্জি ধরে রাখে এবং তাকে আটকে রাখতে পারে তবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আক্রমণকারী যদি ডিফেন্ডারের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে তাহলে রাইডার বিজয়ী হবে।[৩]

গুঙ্গি কাবাডি সম্পাদনা

একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো গুঙ্গি কাবাডি (পাঞ্জাবি: گونگی کبڈی/ਗੂੰਗੀ ਕਬੱਡੀ) (নীরব কাবাডি), এই পদ্ধতিতে একজন রাইডার কাবাডি কাবাডি বলতে থাকেনা এবং কেবলমাত্র প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে স্পর্শ করে এবং যাকে স্পর্শ করে কেবলমাত্র সেই খেলোয়াড় তাকে থামানোর চেষ্টা করবে। লড়াই ততক্ষণ চলবে যতক্ষণ না রাইডার প্রারম্ভিক লাইনে পৌঁছাবে বা হার স্বীকার করবে এবং এক পয়েন্ট হারাবে অথবা যদি রাইডার নিরাপদে প্রারম্ভিক লাইনে পৌঁছে তবে সে এক পয়েন্ট পাবে।[৪]

অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি সম্পাদনা

পাঞ্জাব চক্র পদ্ধতি সম্পাদনা

ইতিহাস ও উন্নয়ন সম্পাদনা

কাবাডি পাঞ্জাব অঞ্চলের আঞ্চলিক খেলা এবং ভারতপাকিস্তানে এটি পাঞ্জাবি কাবাডি হিসাবে পরিচিত। তবে ভারতে হরিয়ানাপাঞ্জাব রাজ্য গঠনের সাথে সাথে একই খেলাকে পাঞ্জাব কাবাডি এবং হরিয়ানা কাবাডি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে এবং তাই ১৯৭৮ সালে ভারতের অপেশাদার চক্র কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয় এবং পাঞ্জাব অঞ্চলে খেলা কাবাডি পদ্ধতিটির নাম দেওয়া হয় চক্র কাবাডি[৪]

পাঞ্জাব চক্র কাবাডি "ডেরায় ওয়ালী কাবাডি" নামে পরিচিত (পাঞ্জাবি: دیرے والی کبڈی/ਦਾੲਿਰੇ ਵਾਲੀ ਕਬੱਡੀ)[২], এটি পাঞ্জাব অঞ্চলের কাবাডি পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।

নিয়ম সম্পাদনা

পাঞ্জাব অঞ্চলে ২২ মিটার ব্যাসের চক্রাকার[২] পিচে এবং পিচের মাঝখানে একটি রেখা সহ একটি অভ্যন্তরীণ বৃত্তে কাবাডিটি খেলা হয়: পিচটিকে "কাউডি দা ভর্তা" বলা হয়। ৮ জন করে খেলোয়াড় নিয়ে দুটি দল গঠিত হয়; একজন একজনকে আক্রমণ করে এবং কোনও খেলোয়াড় মাঠ ছেড়ে যায় না।[৩] যদি ২ জন স্টপার কোনও খেলোয়াড়কে আক্রমণ করে তবে ফাউল ডাকা হয়। পাঞ্জাব পদ্ধতির কাবাডিতে রাইডার "কাবাডি, কাবাডি" বলে আক্রমণ চালানোর প্রয়োজন হয় না।[২] খেলার সময়কাল ৪০ মিনিট এবং ২০ মিনিট পর উভয় দলের পার্শ্ব পরিবর্তন হয়।[৩]

পাঞ্জাব চক্র পদ্ধতি কাবাডিতে যখনই কোন খেলোয়াড়কে স্পর্শ করা (আউট) হয় সে কোর্টের বাইরে যায় না বরং ভিতরেই থাকে এবং তাকে স্পর্শকারী দলটিকে এক পয়েন্ট দেওয়া হয়। এই খেলাটি সময় ভিত্তিতেও খেলা হয় এবং এই সময়ের পরিমান ৩০ সেকেন্ড।

উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতা সম্পাদনা

কাবাডি বিশ্বকাপ সম্পাদনা

চক্র পদ্ধতি কাবাডি বিশ্বকাপ একটি আন্তর্জাতিক কাবাডি প্রতিযোগিতা, এটি পাঞ্জাব (ভারত) সরকার পরিচালনা করে এবং এতে পুরুষ এবং মহিলা জাতীয় দল অংশগ্রহণ করে থাকে। ২০১০ সালে উদ্বোধনী প্রতিযোগিতার পর থেকে প্রতিবছর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, তবে ২০১৫ সালে গুরু গ্রন্থ সাহিব অপবিত্রকরণ বিতর্কের কারণে প্রতিযোগিতাটি হয়নি। মহিলাদের প্রতিযোগিতা ২০১২ সালে চালু হয়। পাঞ্জাবি কাবাডির বর্তমান ২০২০ চ্যাম্পিয়ন হলো পাকিস্তান। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।

সুপার কাবাডি লিগ সম্পাদনা

সুপার কাবাডি লিগ (এসকেএল) হলো পাকিস্তানের একটি পেশাদার স্তরের কাবাডি লিগ। এর প্রথম প্রতিযোগিতাটি ২০১৮ সালের ১ থেকে ১০ মে লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। এই লীগটি শহর-ভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল অনুসরণ করে হয়।[৩] পাকিস্তান ও বিদেশ থেকে ১০০ জনেরও বেশি কাবাডি খেলোয়াড়কে লাহোরের ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত খেলোয়াড় ড্রাফ্ট-এ উপস্থিত করা হয়। উদ্বোধনী সংস্করণে শ্রীলঙ্কা, ইরান, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়রা অংশ নেয়।

মহিলা কাবাডি বিশ্বকাপ সম্পাদনা

২০১২ সালে ভারতের পাটনায় প্রথম মহিলা কাবাডি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালে ইরানকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।[৫] ২০১৩ সালের ফাইনালে অভিষিক্ত নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ভারত শিরোপা ধরে রাখে।

এশিয়ান কাবাডি কাপ সম্পাদনা

এশিয়া কাবাডি কাপ পরপর দুই বছরে দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী প্রতিযোগিতাটি ইরানে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে এশিয়া কাবাডি কাপ ১ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ এশিয়া কাবাডি কাপে ভারতীয় দলের বাদানুবাদের পর ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান কৌশলগত জয় লাভ করে।

যুক্তরাজ্য কাবাডি কাপ সম্পাদনা

 
কানাডায় পাঞ্জাব চক্র পদ্ধতির কাবাডি ম্যাচ।

২০১৩ যুক্তরাজ্য কাবাডি কাপ চলাকালীন যুক্তরাজ্যে কাবাডি বড় ধরনের স্বীকৃতি পায়। প্রতিযোগিতায় ভারত, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং এসজিপিসির স্পনসরকৃত একটি স্থানীয় ক্লাব দল অংশগ্রহণ করে। যুক্তরাজ্য কাবাডি কাপে পাঞ্জাব চক্র পদ্ধতির কাবাডি অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ব কাবাডি লিগ সম্পাদনা

বিশ্ব কাবাডি লিগ ২০১৪ সালে গঠিত হয়।[৬] লিগে কানাডা, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - চারটি দেশের আটটি দল অংশ নেয় এবং পাঞ্জাবি চক্র পদ্ধতিতে কাবাডি খেলা হয়।[৭] কিছু দলের মালিকানা বা আংশিক মালিকানা অভিনেতাদের রয়েছে - অক্ষয় কুমার (খালসা ওয়ারিয়র্স), রজত বেদী (পাঞ্জাব থান্ডার), সোনাক্ষী সিনহা (ইউনাইটেড সিংহ) এবং ইয়ো ইয়ো হানি সিং (ইয়ো ইয়ো টাইগার্স)। উদ্বোধনী লীগ মৌসুম ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।[৮] প্রথম মৌসুমের ফাইনালে ইউনাইটেড সিং (বার্মিংহাম, ইংল্যান্ড) খালসা ওয়ারিয়র্সকে (লন্ডন, ইংল্যান্ড) পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়।[৯][১০]

স্থানীয় প্রতিযোগিতা সম্পাদনা

পাঞ্জাবে এক হাজারেরও বেশি কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়,[২] তার মধ্যে কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো:

  • রুরকা কালান কাবাডি প্রতিযোগিতা[১১]
  • উধম সিং কাবাডি কাপ গ্রাম-ফাত্তু ধিঙ্গা জেলা-কাপুরথালা
  • বাবা হস্তানা সিং কাবাডি প্রতিযোগিতা গ্রাম-খিরানওয়ালি জেলা-কাপুরথালা
  • হাকিমপুর কাবাডি খেলা।[২] (হাকিমপুর নওয়ানশাহার জেলার একটি গ্রাম)
  • মোথদা কালান কাবাডি প্রতিযোগিতা।[১২]
  • সন্ত মহারাজ ইশার সিং জি রারা সাহিব কাবাডি প্রতিযোগিতা
  • সন্ত বাবা রাম সরুপ কাবাডি কাপ পিন্ড পিপলি তেহ এবং জেলা ফরিদকোট পাঞ্জাব
  • ঘোলিয়া কালান কাবাডি কাপ, মোগা
  • বাদোয়াল কাবাডি কাপ, লুধিয়ানা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Debates; Official Report, Volume 23, Issues 1–11. Punjab (India). Legislature. Legislative Council [১]
  2. Kissa Kabaddi da by Sarwan Singh Sangam Publications আইএসবিএন ৯৩-৮৩৬৫৪-৬৫-১
  3. Punjab Diyan Virasiti Kheda by Suhdev Maudhupuri. Chetna Parkashan আইএসবিএন ৮১৭৮৮৩২১৩-৫
  4. "Amateur Circle Kabaddi Federation of India"Kabaddicircle.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ 
  5. "India win first women's Kabaddi World Cup"Hindustan Times। ৪ মার্চ ২০১২। ৩০ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১২ 
  6. "World Kabaddi League launched"The Hindu। ২৫ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  7. "World Kabaddi League announces team franchise names and logos"। CNN-IBN। ২৪ জুলাই ২০১৪। ২৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৩ 
  8. "Home – The official website of World Kabaddi League"Worldkabaddileague.net। ৯ আগস্ট ২০১৪। ২৯ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৪ 
  9. "United Singhs crowned World Kabaddi League champions"। CNN-IBN। ২২ নভেম্বর ২০১৪। ২২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৩ 
  10. "Honey Singh's kabaddi team Yo Yo Tigers suspended"Hindustan Times। ১৫ নভেম্বর ২০১৪। ১৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৩ 
  11. "Archived copy"। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  12. "Sports-promoting NRIs linked to drug smuggling, villagers stunned"Hindustan Times। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • ভারতের অপেশাদার চক্র কাবাডি ফেডারেশন [২]