কামরূপ রাজ কামতেশ্বর নীলাম্বর সেন ১৪৮০-১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দ কামতাপুর শাসন করেন। নীলাম্বর অতি শক্তিশালী নৃপতি ছিলেন। তিনি বাহুবলে কামরূপ রাজ্যের অধিকাংশ স্থান ও আধুনিক রংপুর জেলার প্রায় সমগ্র অঞ্চল তার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। তার রাজ্যের দক্ষিণ সীমা ঘোড়াঘাট পয্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বহিঃশত্রুর আক্রমণ হইতে রাজ্যরক্ষার জন্য নীলাম্বর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দুগ নিৰ্ম্মাণ করেছিলেন। নীলাম্বর তার রাজধানী কামতাপুর থেকে রাজ্যের প্রান্তসীমা পর্যন্ত অনেকগুলো রাজপথ নির্মাণ করেছিলেন। এর মধ্যে নীলাম্বরী সড়ক এবং দর্পার মাল্লি উল্লেখযোগ্য। সড়ক দু’টি কামতাপুর থেকে বর্তমান রংপুরের মধ্য দিয়ে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কামতাপুর হতে ঘোড়াঘাট পৰ্যন্ত যে প্রাচীন রাজপথ আছে তার পাশে ঘোড়াঘাটের অদূরে নীলাম্বরের দুর্গের ভগ্নাবশেষ পাওয়া হয়।[]

কামরূপ রাজ কামতেশ্বর নীলাম্বর সেন
কামরূপ রাজ কামতেশ্বর
রাজত্ব১৪৮০-১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দ
পূর্বসূরিচক্ৰধ্বজ সেন
উত্তরসূরিশাহজাদা দানিয়াল
মৃত্যু১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দ
রাজবংশখেন্ রাজবংশ
ধর্মহিন্দুধর্ম

তিনি ১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কোটেশ্বরে (বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায়) কোটেশ্বর শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, যার ধ্বংসস্থলে ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পাঙ্গারাণী লক্ষ্মীপ্রিয়া নতুনভাবে মন্দির নির্মাণ করেন। নীলাম্বরের রাজ্যকালেই কামত রাজ্যের পতন ঘটে অতঃপর মুঘল প্রশাসক রাজা মানসিংহের সহায়তায় নীলাম্বরের বংশধর উদম্বর সেন "উদম্বর" নামক ৫২ পরগনা নিয়ে সরকার(মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনস্থ প্রশাসনিক ইউনিট) প্রতিষ্ঠা করে এবং "খান-ই-সরকার" উপাধিতে ভূষিত হন,উদম্বর সরকারের রাজধানী "তাঢ়া" নামে পরিচিত,তাঢ়া দেবী কামতেশ্বরীর আরেক নাম। কথিত আছে, মন্ত্ৰী শচীপত্রের পুত্র কোনও বিশেষ গহিত কর্মের জন্য রাজা নীলাম্বর কর্তৃক নিহত হন এবং তাঁহার মৃত দেহ রন্ধন করিয়া তাহার পিতা শচীপত্রিকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়ান হয়।[] এই মন্ত্রী পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে হোসেন শাহকে নীলাম্বর সেনের সাথে যুদ্ধে জিততে সাহায্য করে।[]

রাজ্য সীমানা

সম্পাদনা

নীলাম্বর সেন (১৪৮০-১৪৯৮) রাজ্য বাড়িয়ে বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের কোচবিহার জেলা, অসমের অবিভক্ত কামরূপ ও দরং জেলা, এবং বাংলাদেশের উত্তর ময়মনসিংহ ও দিনাজপুর জেলার পূর্ব অংশ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।[] তার আগ্রাসী রাজ্য বিস্তার হোসেন শাহর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রত্ননিদর্শন

সম্পাদনা

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নে নীলাম্বর সেনের অন্যতম রাজধানী থেকে মাটি কাটার সময় ২ কেজি ৭২৫ গ্রাম ওজনের একটি কৃষ্ণ মূর্তি পাওয়া যায়।[] উল্লেখ্য, সেন বংশের রাজা নীলাম্বর সেন চতরায় তার দুর্গ নির্মাণ শেষে নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য পরিখা ও গড় তৈরি করেন এবং নীলদরিয়া নামক পুকুর খনন করেন।[] ধারণা করা হচ্ছে, সেই সময় ঘোনা চতরার গড়ে মূল্যবান ওই কৃষ্ণমূর্তিটি ছিল।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "ঘোড়াঘাট উপজেলা"www.ghoraghat.dinajpur.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "বাংলায় ভ্রমণ-২য় খন্ড"bn.m.wikisource.org। ২০২১-০৮-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-০৯ 
  3. Nath, D. (১৯৮৯)। History of the Koch Kingdom, C. 1515-1615। Delhi: Mittal Publications। পৃষ্ঠা 70। আইএসবিএন 8170991099 
  4. Sarkar, J N (১৯৯২)। "Chapter IV: Early Rulers of Koch Bihar"। Barpujari, H. K.। The Comprehensive History of Assam2। Guwahati: Assam Publication Board। পৃষ্ঠা 46। 
  5. "নীল দরিয়া"chattraup.rangpur.gov.bd। ২০২১-০৮-২৮। ২০২১-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২৯ 
  6. "চতরা ইউনিয়ন"www.chattraup.rangpur.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "চতরা দুর্গের কৃষ্ণ মূর্তি"samakal.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  8. "পীরগঞ্জে মূল্যবান কৃষ্ণ মূর্তি উদ্ধার"উত্তর বাংলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২৯