সেন(বাংলা) বা খেন্‌ (অসমীয়া)[১] বংশ মধ্যযুগে কামরূপ রাজ্য শাসন করা একটি রাজবংশ। সেন রাজবংশকে "ক্ষৌণীদ্র বংশ" বলা হত সেন সাম্রাজ্যের পতন হলেও এই রাজবংশের রাজারা বিচ্ছিন্ন ভাবে ভারত,বাংলাদেশ, নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে শাসন চালিয়েছিলো গৌড়, পুন্ড্রবরেন্দ্র পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সেন রাজবংশের অধীনে ছিল। তদ্বংশীয় গৌড়ের একটি ভূমের শাসক (ভুঁইয়া) নীলধ্বজ কামরুপ অধিকার করেন।[২] আরিমত্তর বংশধর শেষ রাজা মৃগাংক (১৪১৫-১৪৪০) অপুত্রক হওয়ার কারণে তার মৃত্যুর পর ভূইঞাদের মধ্যে নীলধ্বজসেন নামের একজন সেনবংশী ভূইঞা ১৪৪০ সালে গৌড়র সিংহাসন দখল করেন। তিনি কামরূপ-কামতায় খেন্‌ বা সেন বংশর পত্তন করেন।[৩] নীলধ্বজের পর এক পুত্র চক্রধ্বজ এবং তার পরে চক্রধ্বজের পুত্র নীলাম্বর রাজা হন।নীলধ্বজ সেন গৌড়, কুচবিহার, নিম্ন আসাম ও বৃহত্তর রংপুর প্রভৃতি নিয়ে কামতা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। নীল ধ্বজ এর পর যথাক্রমে চক্রধ্বজ সেন ও নীলাম্বর সেন কামতা রাজ্যের অধিশ্বর হন। রাজা নীলাম্বর তার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। পীরগঞ্জের চতরাহাটের পশ্চিম পার্শ্বে নীল দরিয়ার দূর্গ তাদের অন্যতম। কামতা রাজ্য করতোয়া নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পর্যন্ত ছিল তার রাজ্যর দক্ষিণ সীমা। রাজধানী কামতাপুর থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত যে মেঠো রাজপথটি দৃষ্ট হয়, তা রাজা নীলাম্বর কর্তৃক নির্মিত।সুপ্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র চতরা হাটের পশ্চিম পার্শ্বে এই রাজ পথটি অতিক্রম করে অর্দ্ধ কি.মি. পথ সামনে অগ্রসর হলেই রাজা নীলাম্বরের দূর্গ বা নীল দরিয়ার দূর্গের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্টি গোচর হয়। এখানে ৯২.০০ একর সুবিশাল জলাধার বেষ্টন করে আছে ৪৮ একর স্থল ভাগকে।[৪] গৃহ কোন্দলের সুযোগে মুসলমানরা আক্রমণ করায় এই রাজবংশ বেশিদিন শাসন করতে পরেনি। ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নীলাম্বরের মৃত্যুতে খেন্‌ বংশের অন্ত হয়। সেন বংশীয় রাজা নীলাম্বর কামতেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি কামতেশ্বর নামে পরিচিত ছিলেন।[৫]

কামরূপ রাজ্য

সেন বংশ(বাংলা) বা খেন্‌ বংশ(অসমীয়া)
১৪৪০–১৪৯৮
রাজধানীকামরূপনগর
কামতাপুর
বিদ্যানন্দ
চতরা
প্রচলিত ভাষাবাংলা, অসমীয়া
ধর্ম
হিন্দুধর্ম
সরকাররাজতন্ত্র
মহারাজা 
• ১৪৪০-১৪৬০ খ্রিস্টাব্দ
নীলধ্বজ সেন
• ১৪৬০-১৪৮০ খ্রিস্টাব্দ
চক্রধ্বজ সেন
• ১৪৮০-১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দ
নীলাম্বর সেন
ঐতিহাসিক যুগধ্রুপদী ভারত
• প্রতিষ্ঠা
১৪৪০
• বিলুপ্ত
১৪৯৮
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
পাল রাজবংশ (কামরূপ)
কোচ রাজবংশ

উত্থান সম্পাদনা

পতন সম্পাদনা

কামতাপুর রাজ্য অবশেষে ১৪৯৮ সালে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের হাতে পড়ে। কিন্তু হোসেন শাহ রাজ্য শাসন করতে পারেননি- ১৫০৫ সালে এই অঞ্চলের ভূইয়ান প্রধানরা হানাদারদের পরাজিত করে। শীঘ্রই কামতা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ কোচ রাজবংশের হাতে চলে যায়।[৬]

শাসক সম্পাদনা

  • নীলধ্বজ (1440-1460)
  • চক্রধ্বজ (1460-1480)
  • নীলাম্বর (1480-1498)

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বৰুৱা, পদ্মনাথ গোহাঞি। "বুৰঞ্জীবোধ/অসমত মছলমানৰ কথা - ৱিকিউৎস"as.wikisource.org (অসমীয়া ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৬ 
  2. "পাতা:ঢাকার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৬ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৬ 
  3. কৌশিক বরুয়া, শান্তনু (২০১৫)। অসম ইয়ের বুক ২০১৬। গুয়াহাটি: জ্যোতি প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২৩২–৩৩। 
  4. বাংলাদেশের সরকারী তথ্য বাতায়ন http://pirgonj.rangpur.gov.bd/site/page/5cc9c09d-18fd-11e7-9461-286ed488c766/%E0%A6%AA%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A6%97%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C%20%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%AA%E0%A6%9F%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BF আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ২২ আগস্ট ২০২০ তারিখে
  5. "আনন্দবাজার পত্রিকা - উত্তরবঙ্গ"archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৬ 
  6. "The kingdom again passed on to the rule of the Bhuyans till the rise of the Koches in about 1515 AD." (Baruah 1986:181)