নাসি উদুক
নাসি উদুক (ইন্দোনেশিয়ান: " নাসি উডুক ") হল একটি ইন্দোনেশিয়ান রন্ধনশৈলীর ভাপে রান্না করা চাল, যা নারকেল দুধ সহযোগে রান্না করা হয়। এটি বেতাউই রন্ধনশৈলীর অন্তর্গত একটি জনপ্রিয় খাবার।[১][২]
ইন্দোনেশিয়ার আকাদেমি কুলিনার দ্বারা রচিত "কুলিনার বেতাউই সেলাকসা রাসা অ্যান্ড সেরিতা" (২০১৬) বই অনুসারে, উডুক শব্দটির অর্থ "কঠিন" বা "সংগ্রাম"। এর থেকে অনুমান করা হয় যে এই চালের খাবারটি মূলত শ্রমজীবী মানুষ যেমন কৃষক অথবা শ্রমিকদের খাদ্য ছিল।[১]
আরেকটি তত্ত্ব অনুসারে উদুক শব্দটি আদুক শব্দের সাথে সম্পর্কিত যার অর্থ "মিশ্রণ", এইভাবে নাসি উদুক কথার অর্থ "মিশ্র চাল"। [৩]
কিছু লোক নাসি উদুকের উৎপত্তিকে জাভানিজ ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত করেছে। মাতারামের সুলতান আগুং এই ভাতের খাবারটিকে উদুক বলেছেন, যা আরবি শব্দ তাওয়াধু থেকে নেওয়া। তাওয়াধু কথার অর্থ ঈশ্বরের সামনে নম্র হওয়া।[৪] [৫] স্থানীয় ব্যবহৃত উপভাষার উপর নির্ভর করে এটি জাভানিজ ভাষায় এর নামকরন হয়েছে উদুক বা বুদুক।[৬] যখন এর স্বাদের উল্লেখ আসে তখন একে সেগা গুড়িহ বা সুস্বাদু চাল হিসাবে অভিহিত করা হয়। [৬]
লিলি টি. এরউইনের "মাকানান খাস বেতাউই" (২০১৮) বই অনুসারে, নাসি উডুক একটি বেতাউই খাবার যা জাকার্তার প্রায় সমস্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য।[১] জাকার্তা অঞ্চলে এর বর্তমান জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, ইতিহাসবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন যে হয়তো এই ভাতের রান্নাটি মালয় এবং জাভানিজ রন্ধন প্রনালীর ফসল।[১] ঐতিহাসিকদের মতে, মালাক্কা বন্দর এবং বাটাভিয়া বন্দরের মধ্যে ঐতিহাসিক বাণিজ্য ও অভিবাসন সংযোগ ছিল, এইভাবে মালয় ব্যবসায়ী এবং অভিবাসীরা প্রায়শই বাটাভিয়ায় যেতেন, এইভাবে তারা বাটাভিয়ায় নাসি লেমাক রান্নার ঐতিহ্য এদেশে নিয়ে আসেন। এছাড়াও, বাটাভিয়াতে জাভানিজ বসতি স্থাপনকারীদের সুলভ খাদ্য ছিল নারকেল ভাত।[১]
১৬২৮ সালে জাভানিজ অভিবাসীদের হাত ধরে উডুক বাটাভিয়ার অঞ্চলে খাবার হিসাবে প্রচলিত হয় এবং পরে এই অঞ্চলে জনপ্রিয় খাবার হয়ে ওঠে।[৭] বেতাউই লোকেরা যখন এই খাবারটি বানাতে ও বিক্রি করতে শুরু করে তারা প্রায়শই স্থানীয় বৈশিষ্ট্য হিসাবে এর মধ্যে সেমুর জেংকোল যোগ করে। সুরিনাম এবং নেদারল্যান্ডের জাভানিজ প্রবাসীদের মধ্যেও উডুক জনপ্রিয়।
জলের পরিবর্তে নারকেলের দুধে ভিজিয়ে চাল রান্না করে নাসি উডুক তৈরি করা হয়। সুগন্ধ যোগ করার জন্য লবঙ্গ, দারুচিনি এবং লেমনগ্রাস প্রয়োগ করা হয়। ভাত ভাপানোর সময় কখনও কখনও গিঁটযুক্ত পান্দান পাতা তাতে যোগ দেওয়া হয় যাতে এটি আরও সুগন্ধি হয়ে ওঠে। নারকেল দুধ এবং মশলা ভাতে একটি তৈলাক্ত, সমৃদ্ধ স্বাদ প্রদান করে। পরিবেশনের আগে বাওয়াং গোরেং (ভাজা শ্যালটস) ভাতের উপরে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য কিছু খাবারগুলি সাধারণত পার্শ্ব পদ হিসাবে পরিবেশন এর সাথে করা হয়।
বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে একটি বোনা বাঁশের বাক্সে উডুককে পরিবেশন করা হয়। সেই বাক্সটি সেগুন কাঠ বা কলা পাতায় মোড়ানো থাকে। অথবা বাঁশের পাত্রেও এটি পরিবেশন করা যায়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Alma Erin Mentari (২০২১-০২-২১)। "Sejarah Nasi Uduk, Konon Sudah Ada Sejak Ratusan Tahun Lalu"। KOMPAS.com (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৫।
- ↑ "Nasi Uduk Sederhana Babe H. Saman: Legendary Nasi Uduk in Tanah Abang"। Jakarta by Train। ১ ডিসেম্বর ২০১৩। ২৭ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২৩।
- ↑ "Where to Eat in Cikini: Nasi Uduk Gondangdia"। Jakarta by Train। ১১ ডিসেম্বর ২০১৪। ২৭ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২৩।
- ↑ "Makanan Syariah"। MSN।
- ↑ "What is Tawadhu'?"। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- ↑ ক খ "Bausastra Jawa"।
- ↑ "Story Behind Nasi Uduk"।