নাগশংকর মন্দির আসাম-এর শোণিতপুর জেলাত অবস্থিত একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত শিব মন্দির। শোণিতপুর জেলার প্রধান শৈব পীঠস্থানসমূহের মধ্যে নাগশংকর মন্দির অন্যতম। দৈনিক যথা রীতি এই মন্দিরে পূজা-অর্চনা করা হয়। মন্দিরটির নামে এই অঞ্চলটির নামও নাগশংকর হয়েছে। শোণিতপুর জেলার সদর শহর তেজপুর থেকে নাগশংকর মন্দিরের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার। ৫২ নং জাতীয় সড়ক থেকে দক্ষিণে এক কিলোমিটার ভিতরে নাগ শঙ্কর মন্দিরের অবস্থান। যোগাযোগের সু-ব্যবস্থার জন্য এই মন্দিরে বছরে বার মাস ভক্তের ভিড় পরিলক্ষিত হয়[১]। মন্দির চৌহদ্দিতে অবস্থিত একটি প্রকাণ্ড জলাশয়ে থাকা শতায়ু গরকা মাছগুলিও মন্দিরটির পর্যটন ব্যবস্থায় অবদান যুগিয়েছে। শিবের সহচর বলে গণ্য করা এই মাছগুলিকে প্রতিদিনে মন্দিরের প্রসাদ এবং ভোগ অর্পণ করা হয়। দর্শনার্থীরাও মাছগুলিকে প্রসাদ দেওয়া পরিলক্ষিত করে। বর্তমানে মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মন্দির পরিচালনা সমিতি বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছসমূহের সংরক্ষণের জন্য প্রকৃতিপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনর সহযোগিতায় এই মন্দিরে বিশেষ ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। আসামের চারিদিকের বিভিন্ন স্থানের যাত্রীর দৈনিক এই মন্দিরে সমাগম হয়। প্রতি বছরে শিবরাত্রি এবং বহাগের গোঁসাই বিহুতে এই মন্দিরে বড়ো মেলা অনুষ্ঠিত করা হয়।

নাগশংকর মন্দির

নাগশংকর মন্দিরের ইতিহাস এবং কিংবদন্তি: সম্পাদনা

মন্দিরটির উৎপত্তির কিংবদন্তি অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর খণ্ডিত করা দেবী সতীর নাভি অংশ এই মন্দিরে পড়েছিল। এই নাভি অংশ পড়া স্থানে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে পরবর্তী সময় মন্দির স্থাপন করা হয়। অন্য এক কিংবদন্তি অনুসারে শোণিতপুরে রাজত্ব করা বাণাসুর বিশ্বনাথে দ্বিতীয় কাশী স্থাপন করতে চান এবং সেইজন্য ১০০০ শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন। পরে মহাদেব দ্বিতীয় কাশী পরিদর্শন করতে এসে একটি শিবলিঙ্গ কম দেখতে পান এবং মনের দুঃখে শুয়ে পড়ায় এই স্থানে মহাদেবের নাভি স্পর্শ হয়। পরে এই স্থানে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে পূজা-অর্চনা করে আসা হয়েছে। অন্য এক জনশ্রুতি মতে পাণ্ডবদের পুরোহিত ধৌম্য মুণি এই নাভিচিহ্নতে শিবের আরাধনা করেছিলেন। পাণ্ডবরা অজ্ঞাতবাসের কালে ধৌম্য মুনিকে সাথে পান এবং তাঁদের পুরোহিত হিসাবে সাথে নিয়ে যান। তার পর থেকে অনেকদিন পর্যন্ত এই স্থানে পূজা-অর্চনা লোপ পায়। খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকের আগভাগে জিতারী বংশের রাজা প্রতাপ সিংহ এই মন্দিরের পুনরুদ্ধার করেন। সেই শতকের শেষভাগে নাগশংকর বা নগাক্ষ রাজা এই মন্দিরে নিয়মিত পূজা অর্চনা করেছিলেন বলে জানা যায়। রাজা নগাক্ষ এই মন্দিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[২] এই রাজার পরে পুনরায় অনেক বছর পর্যন্ত এই মন্দিরের পূজা-সেবা বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপরে আহোম স্বর্গদেউ চুচেনফা ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরের পুনরায় নির্মাণ করেন[৩] এবং মন্দিরের নামে দেবোত্তর জমি ৮৩৩ বিঘা দান করেন। এই মন্দিরের মধ্যে গহ্বরের জলে শিবলিঙ্গ স্থাপন করা আছে। তদুপরি বিষ্ণুমূর্তি, যোনিকুণ্ড, শালগ্রামের মূর্তি স্থাপন করা আছে।[৪] নাগশংকর মন্দিরে পূজা-অর্চনা করে অভীষ্ট সিদ্ধি হয় বলে জনমানসে দৃঢ় বিশ্বাস আছে।

তথ্যসূত্র: সম্পাদনা

  1. http://onlinesivasagar.com/tourism/nagsankar-temple.php
  2. পবিত্র আসাম - সম্পাদক : ড°মহেশ্বর নেওগ, প্রকাশক : ড° প্রদীপ ভূঞা, প্রধান সম্পাদক আসাম সাহিত্য সভার হৈ, প্রথম প্রকাশ : ১৯৬০সাল
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২০ 
  4. ডঃ নির্মলপ্রভা বরদলৈ, শিব, পৃষ্ঠা-৩৫৫-৩৫৬, লয়ার্ছ বুক স্টল

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা