ধ্রুব
ধ্রুব (সংস্কৃত: ध्रुव) ছিলেন বিষ্ণু পুরাণ ও ভাগবত পুরাণে উল্লিখিত বিষ্ণুর ভক্ত।[২]
ধ্রুব | |
---|---|
পোলারিস | |
![]() ধ্রুব মেরু তারকা হিসাবে, মানাকু-এর পাহাড়ি চিত্রকর্ম, ১৭৪০ খৃষ্টাব্দ | |
দেবনাগরী | ध्रुव |
অন্তর্ভুক্তি | বিষ্ণুর ভক্ত |
আবাস | মহাকাশে ধ্রুবলোক |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা | উত্তানপদ ও সুনীতি |
দম্পত্য সঙ্গী | ব্রাহ্মী ও ইলা |
সন্তান |
সংস্কৃত শব্দ "ধ্রুব নক্ষত্র" মহাভারতে মেরু নক্ষত্রের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যাকে উত্তানপাদের পুত্র এবং মনুর নাতি হিসেবে মূর্তিমান করা হয়েছে, যদিও মহাভারতের পাঠের পুনরুদ্ধারের সম্ভাব্য সময়ে পোলারিস এখনও মহাকাশীয় মেরু থেকে কয়েক ডিগ্রি দূরে ছিলেন।[৩][৪]
ধ্রুবর সাধনা
সম্পাদনাবিষ্ণুভক্ত ধ্রুব তাঁর সাধনার জন্য সর্বজনপূজ্য। ভক্ত ধ্রুবর সাধনা বুঝিয়ে দেয় ভক্তির আসল স্বরূপ, ভক্তির উদ্দেশ্য। এই বিষয়টি নির্দেশ করেছেন ভাদুড়ী মহাশয়- মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ:
"দেখ! বালক ধ্রুব রাজ্যলাভের আশায় শ্রীহরি-অন্বেষণে অরণ্যযাত্রা করিয়া সরলপ্রাণে ‘কোথা পদ্মপলাশ-লোচন হরি’ ‘কোথা পদ্মপলাশলোচন হরি' বলিয়া একাগ্রচিত্তে ডাকিতে ডাকিতে যখন শেষে শ্রীহরির দর্শন পাইলেন তখন ধ্রুব শ্রীভগবানের সেই তড়িৎ বিজড়িত নবজলধর- কান্তি নির্নিমেষ নয়নে দেখিতে দেখিতে পূর্ব কামনা ও বাসনা সকলই বিস্মৃত হইয়া গেলেন। তিনি কাষ্ঠ পুত্তলিকাবৎ একদৃষ্টে চাহিয়া রহিলেন। তখন শ্রীহরি মধুর স্বরে ও প্রেমভরে কাষ্টপুত্তলিকাবৎ দণ্ডায়মান ধ্রুবকে জিজ্ঞাসা করিলেন— ‘ধ্রুব ! তুমি অরণ্যে আসিয়া আমাকে ডাকিতেছ কেন? তুমি শিশুকালে মাতাপিতা পরিত্যাগ করিয়া এই হিংস্র জন্তু-সমাকুল নিবিড় অরণ্যে অনাহারে ও অনিদ্রায় আমাকে অন্বেষণ করিতেছ কেন? তোমার কি অভিলাষ বল, আমি তাহা পূরণ করিব’। তত্রাপি ধ্রুবকে নির্বাক দেখিয়া শ্রীহরি বুঝিলেন যে আমার (শ্রীহরির) দর্শনে ধ্রুবের বাক্ রোধ হইয়া গিয়াছে— তখন ভগবান্ ধ্রুবের বাস্ফুর্তির জন্য হস্তস্থিত পাঞ্চজন্য শঙ্খ ধ্রুবের শ্রীমুখে স্পর্শ করাইলেন— ধ্রুবের বাক্শক্তি ফিরিয়া আসিল তখন ধ্রুব বলিলেন— “ঠাকুর মনের দুঃখ অনেক কিছু তোমার কাছে বলিব ও প্রার্থনা করিব বলিয়া আসিয়াছিলাম। কিন্তু তোমার ঐ ভুবনমোহন মূর্তি দেখিয়া আমার পূর্বকামনা ও বাসনাকাল খড়কুটার মত নগণ্য বলিয়া জ্ঞান হইতেছে। আমার আর কোন কামনা নাই।” তখন শ্রীহরি বলিলেন— — দেখ ধ্রুব’। আমার সঙ্গে যাহার দেখা হয় তাহাকে আমি কিছু না দিয়া যাই না— অতএব তোমাকে আমার নিকট কিছু না কিছু প্রার্থনা করিতেই হইবে’। তদুত্তরে ধ্রুব বলিলেন— ঠাকুর তবে তুমি আমাকে এই বর দাও যে, অবিবেকী ব্যক্তিগণের বিষয় ও ধনরত্নে যেরূপ প্রীতি হয়, তোমার প্রতি আমার যেন সেইরূপ প্রীতি হয় ।
যা প্রীতিরবিবেকানাং বিষয়েষ্বনপায়িনী। ত্বামনুস্মরতঃ সা মে হৃদয়ান্নাপসর্পতু।।
দেখো! ধ্রুব কি বলিয়া গিয়াছিলেন আর শেষে কি চাহিলেন। তাই বলি যাহাতে জ্ঞান ও ভক্তি লাভ হয় অগ্রে তাহার সাধনা কর তাহা হইলে অন্যান্য সকল জিনিষ আপনা-আপনি আসিয়া পড়িবে।"
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Motilal Bansaridas Publisher's Bhagavata Purana Book 2 Skandha IV Page: 489
- ↑ Linda Johnsen। The Complete Idiot's Guide to Hinduism, 2nd Edition: A New Look at the World’s Oldest Religion। Penguin। পৃষ্ঠা 216। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০০৯।
- ↑ Aiyangar Narayan (১৯৮৭)। Essays On Indo-Aryan Mythology-Vol.। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 1।
- ↑ Klaus G. Witz (১৯৯৮)। The Supreme Wisdom of the Upaniṣads: An Introduction। Motilal Banarsidass Publications। পৃষ্ঠা 26।
- ↑ ব্রহ্মচারী, শ্রীমদ্ ভক্তিপ্রকাশ (জুলাই ২০১১)। শ্রীশ্রীনগেন্দ্র-উপদেশামৃত [ প্রথম খণ্ড ]। শ্রীশ্রী নগেন্দ্র মঠ, ২বি, রামমোহন রায় রোড, কলকাতা- ৯। পৃষ্ঠা ২৫২– ২৫৩।