দ্য শেখ (চলচ্চিত্র)
দ্য শেখ ১৯২১ সালে নির্মিত ফেমাস প্লেয়ার-ল্যাস্কি প্রযোজিত ও জর্জ মেলফোর্ড পরিচালিত একটি নির্বাক চলচ্চিত্র। এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন রুডলফ ভ্যালেনটিনো, অ্যাগনেস আয়রেস ও অ্যাডলফ মেনজো। ছবিটি নির্মিত হয়েছিল এডিথ মড হুল রচিত বিখ্যাত রোম্যান্স উপন্যাস দ্য শেখ অবলম্বনে।
দ্য শেখ The Sheik | |
---|---|
পরিচালক | জর্জ মেলফোর্ড |
প্রযোজক | ফেমাস প্লেয়ার-ল্যাস্কি |
রচয়িতা | এডিথ মড হুল (উপন্যাস) মন্টে এম ক্যাটারজন (সিনারিও) |
শ্রেষ্ঠাংশে | রুডলফ ভ্যালেনটিনো অ্যাগনেস আয়রেস অ্যাডলফ মেনজো ওয়াল্টার লং |
সুরকার | ইরভিং বার্লিন (70s' reissue) |
চিত্রগ্রাহক | উইলিয়াম মার্শাল পল আইভ্যানো |
পরিবেশক | প্যারামাউন্ট পিকচার্স |
মুক্তি | ৩০ অক্টোবর, ১৯২১ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) |
স্থিতিকাল | ৮০ মিনিট |
দেশ | যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | নির্বাক চলচ্চিত্র ইংরেজি ইন্টারটাইটেল |
কাহিনি-সারাংশ
সম্পাদনাআলজিয়ার্সে ব্রিটিশ এক্স-প্যাট্রিয়েট সম্প্রদায়ের সদস্য লেডি ডায়ানা মায়ো বিবাহের ধারণাটিকে ঘৃণা করতেন। কারণ, তার মতে বিবাহ মেয়েদের স্বাধীনতাকে শেষ করে দেয়। তার প্রেমিক ও ভাইয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি মরুভূমিতে একটি এক মাসের দীর্ঘ যাত্রার আয়োজন করেন। তারা যখন তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিলেন, তখনই ডায়ানা খেয়াল করেন পাশের ক্যাসিনোতে খুব হই হট্টগোল চলছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন সেখানে এক ধনী ও প্রভাবশালী শেখ পার্টি দিচ্ছেন। সেই পার্টিতে আরব ছাড়া অন্য জাতির লোকেদের ঢোকা বারণ ছিল। তবু ডায়ানা ঔৎসুক্যের বশে সেই পার্টিতে যাওয়ার জন্য আরবি নর্তকীর পোশাক ধার করে সেখানে ঢুকে পড়লেন।
এই পার্টিতে মেয়েদের নিয়ে জুয়োখেলা চলছিল। পয়সার মতো মেয়েরা জুয়োর বাজি হচ্ছিল। যখন ডায়ানাকে সেই পার্টিতে দেখা গেল, তখন একজন আরব তাকে সামনে আনতে চাইলেন। ডায়ানা বাধা দিলেন এবং বেশ একটু হইচই হল সে নিয়ে। শেখ আহমেদ বেন হাসান (রুডলফ ভ্যালেনটিনো) সেই হইচই লক্ষ্য করে এগিয়ে এসে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন মেয়েটি শ্বেতাঙ্গিনী। তিনি বুঝতে পারলেন যে এই সেই মেয়ে যাঁকে তিনি এর আগে পার্টিতে ঢুকতে দেখেছিলেন। শেখ মজা পেলেন খুব। ডায়ানাকে বের করে দিলেন পার্টি থেকে। ডায়ানা চলে যাওয়ার পর মুস্তাফা আলি (চার্লস ব্রিনলে) শেখকে বললে, এই মেয়েটিকেই সে পরদিন মরুভূমির পথে গাইড করে নিয়ে যাবে। শেখ ছক কষলেন। মুস্তাফাকে বললেন মেয়েটিকে তার ক্যারাভ্যানে নিয়ে আসার জন্য।
পরদিন সকালে ডায়ানা যখন ঘুমোচ্ছিলেন, তখন শেখ তার ঘরে লুকিয়ে ঢুকে তার পিস্তলটি অচল করে দিলেন। ডায়ানা জেগে উঠে শেখকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলেন, কিন্তু শেখ বাগানে পালিয়ে গেলেন। বাগানে তিনি কাশ্মীরি লাভ সং-এর প্রথম লাইনটি গাইলেন, যা ডায়ানার কানে গেল। তারপর শেখ চলে গেলেন।
ডায়ানা ও তার ভাই মরুভূমিতে বেরিয়ে পড়লেন। পরে ডায়ানার চাপাচাপিতে শেষে তার ভাইও তাকে ছেড়ে গেলেন। ডায়ানা পরের মাসে লন্ডনে তার সঙ্গে দেখা করবেন কথা দিলেন। ডায়ানার ভাই চলে যাওয়ার পর মুস্তাফা সংকেত দিলেন। শেখের ক্যারাভ্যান ডায়ানাকে আক্রমণ করে বন্দী করল। ডায়ানা ভেঙে পড়লেন। পালাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। শেখ তাকে বললেন তার আদেশ মান্য করে চলার জন্য। কিন্তু ডায়ানা বললেন যে কারোর আদেশ মেনে চলার অভ্যাস তার নেই। শেখ বললেন, আদেশ মানতে ডায়ানা শিখে যাবেন। ডায়ানা প্যান্ট স্যুট পরেছিলেন। তাই নৈশভোজের সময় নারীসুলভ পোষাকে ডায়ানাকে সজ্জিত হওয়ার নির্দেশ দিলেন তিনি।
ডায়ানা কিছুতেই তার আদেশ মানতে চাইলেন না। নৈশাহারের সময় পালাবার চেষ্টাও করলেন। শেখ বললেন, যে ডায়ানা তাকে ভালবাসতে শিখে যাবেন। তারপর ডায়ানাকে ধর্ষণ করলেন তিনি।
কিন্তু ডায়ানাকে দুঃখ দেবার জন্য মনে মনে দুঃখিত হলে শেখও। তাই তিনি ডায়ানার সুখস্বাচ্ছন্দ্যের সবরকম ব্যবস্থা করলেন। কিছু মামুলি স্বাধীনতাও দিলেন তাকে। কয়েক দিন পর শেখ ঘোষণা করলেন পশ্চিমি দুনিয়া থেকে তার এক দোস্ত তার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। একজন পশ্চিমি নাগরিক ডায়ানাকে আরব পোষাকে দেখবেন এই ভেবে ডায়ানা মনে মনে প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। শেখ তখন তার ভৃত্যদের বললেন ডায়ানার পশ্চিমি পোষাকগুলি ফিরিয়ে দিতে এবং ডায়ানাকে অনুমতি দিলেন সেগুলি পরার। রাউল সেন্ট হিউবার্ট (অ্যাডলফ মেনজো) তাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। ডায়ানার মনোবল তখন পুরোপুরি ভেঙে গেছে। রাউল ডায়ানার সঙ্গে বন্ধুত্ব করলেন। শেখকে তিনি তিরস্কার করলেন ডায়ানার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার জন্য। শেখের খারাপ লাগল বটে। কিন্তু তিনি মন পরিবর্তন করতে অস্বীকার করলেন। একদিন তিনি আড়ি পেতে শুনলেন, ডায়ানা তার জন্য কতটা চিন্তা করেন। তিনি মনে মনে এই ভেবে খুশি হয়ে উঠলেন যে হয়তো বা ডায়ানার মনে তার জন্য কোনো আসন তৈরি হয়েছে। শেখ ডায়ানাকে ডায়ানার বন্দুকটি ফিরিয়ে দিলেন। বললেন, ডায়ানাকে বিশ্বাস করেন তিনি। আর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো চোরেদের ক্যারাভ্যান থেকে তাকে রক্ষাও করতে চান।
যে মুহুর্তে ডায়ানা ও তার ভৃত্য মরুভূমিতে ঘুরতে বের হলেন, রাউল আর শেখ বসলেন ডায়ানাকে নিয়ে কি করা যায় তা ভাবতে। শেখ স্বীকার করলেন ডায়ানাকে তিনি ভালবাসেন। রাউল শেখকে রাজি করালেন, শেখ যেন ডায়ানাকে ছেড়ে দেন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলেন শেখ। রাউলকে বললেন, ডায়ানাকে ফ্রান্সে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। এই সময় ডায়ানা ও তার ভৃত্য যাত্রাপথে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। ডায়ানা বালিতে লিখছিলেন, “আহমেদ, আমি তোমায় ভালবাসি।” ঠিক এমন সময় শেখের প্রতিদ্বন্দ্বী এক ক্যারাভ্যান ডায়ানাকে আক্রমণ করে বন্দী করল।
খবর পেয়ে শেখ দেখতে বের হলেন কি হয়েছে। তিনি বালিতে ডায়ানার বার্তা দেখে বুঝতে পারলেন ডায়ানা সত্যিই ভালবাসে তাকে। তিনি তার ফৌজকে জড়ো করলেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতিটিকে আক্রমণ করলেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতিটির গ্রামে তাদের সর্দার শেখ ওমর (ওয়াল্টার লং) ডায়ানাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু “জনৈকা ঈর্ষান্বিতা”র তাকে প্রায় আধমরা করলে ফেললে তিনি সেই কাজে সফল হলেন না। শেখ আহমেদ ও তাঁর ফৌজ যুদ্ধ করতে করতে ঢুকে পড়লেন গ্রামে। এক দীর্ঘ সংগ্রামের পর শেখ ওমর মারা গেল আর মারাত্মক জখম হলেন শেখ আহমেদ।
আহমেদ তাঁর গ্রামে ফিরে এলেন। সকল গ্রামবাসী তাঁর সংবাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। রাউল তাঁর সুশ্রুষা করে তাঁকে সুস্থ করে তুলছিলেন এমন সময় ডায়ানা ভিতরে এলেন। ডায়ানাকে বলা হল আহমেদ ঘুমাচ্ছে। তাই ডায়ানা পাশে বসে তার হাতদুটো ধরল। ডায়ানা মন্তব্য করলেন, আহমেদের হাত সাধারণ আরবদের থেকে বড়। তখন রাউল বললেন, আহমেদ সত্যিকারের আরব নন। তার বাবা ব্রিটিশ, মা স্প্যানিশ। তাঁরা মরুভূমিতেই মারা যান এবং এখানকার তৎকালীন শাসনকর্তা এক শেখ আহমেদকে মানুষ করে তোলেন। তাঁর পালকপিতা তাঁকে ফ্রান্সের স্কুলে লেখাপড়া শেখান এবং তাঁর মৃত্যুর পর আহমেদ এই উপজাতির শেখ মনোনীত হন।
এই সময় আহমেদ জেগে ওঠেন এবং ডায়ানা নিজের প্রেম স্বীকার করে নেন।
প্রযোজনা
সম্পাদনামেট্রো পিকচার্সের কাজে বিরক্ত হয়ে ভ্যালেনটিনো তাঁর বন্ধু ও আইনজীবীদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে ফেমাস প্লেয়ার্স-ল্যাস্কির সঙ্গে একটি চুক্তি করে ফেলেন। জেসি ল্যাস্কি বলেছিলেন, কি সস্তায় তিনি ভ্যালেনটিনোকে পেয়ে যান। এই ছবিটি করার সময় ভ্যালেনটিনো সপ্তাহে ৫০০ ডলার পাচ্ছিলেন, যা তখনকার চিত্রতারকাদের পারিশ্রমিকের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল।[১] অল্প পারিশ্রমিক সত্ত্বেও ল্যাস্কি ভ্যালেনটিনোর প্রথম ফেমাস প্লেয়ার ছবি হিসেবে একটি ভাল মাধ্যম খুঁজছিলেন। তখনই তাঁর সেক্রেটারি এই উপন্যাসটি বেছে নেন।[১]
ফিল্মের শ্যুটিং কোথায় হয়েছিল সেই নিয়ে মতবিরোধ আছে। "ডার্ক লাভার:দ্য লাইফ অ্যান্ড ডেথ অফ রুডলফ ভ্যালেনটিনো" গ্রন্থে এমিলি ডব্লিউ লেইডার বলেছেন, মরুভূমির বহির্দৃশ্য গৃহীত হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার অক্সনাড ও সান্টা বারবারা কাউন্টির গডাল্যুপ ডিউনস-এ। যদিও অনেকেই মনে করেন, শ্যুটিং হয় নিউ ইয়র্কের কুইনস-এর আস্টোরিয়ার ফেমাস প্লেয়ার স্টুডিওতে আর বহির্দৃশ্য গৃহীত হয় ইস্ট হ্যাম্পটন, লং আইল্যান্ডের ওয়াকিং ডিউনস-এ। ইতিহাসে এই মতই স্বীকৃত।
এই ছবিটি মুক্তির সময় শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ যৌনমিলন বিরোধী এক আইন মোতাবেক বিজাতীয়দের মধ্যে বিবাহসম্পর্ক প্রদর্শনের জন্য ছবিটি অবৈধ ঘোষিত হয়। ছবিতে এক শ্বেতাঙ্গিনী ও আরবের মধ্যে চুম্বন দৃশ্য দেখানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই ডায়ানার প্রতি শেখের প্রেমকে ‘গ্রহণযোগ্য’ করে তোলার জন্য শেখকে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে দেখানো হয়।[১] যদিও আরব জাতির চিত্রণ ছিল গতানুগতিক। ভ্যালেনটিনো চেষ্টা করেছিলেন তার চরিত্রটিকে গতানুগতিক আরব পুরুষের চরিত্রের থেকে পৃথক করে দেখাতে। ভ্যালেনটিনোকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, লেডি ডায়ানা কি সত্যি সত্যি কোনো ‘অমার্জিত’ জনগোষ্ঠীর কারোর প্রেমে পড়তে পারতেন? উত্তরে ভ্যালেনটিনো বলেন, “শুধুমাত্র কালো চামড়ার জন্য কেউ অমার্জিত হয় না। আরব সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির অন্যতম।... আরবরাও সম্ভ্রান্ত ও বুদ্ধিমান।” [১]
ছবিতে সবচেয়ে বিতর্কিত হয় ধর্ষণের দৃশ্যটি। উপন্যাসে ছিল ডায়ানা শেখের প্রেমে পড়ে “কারণ” এই যে শেখ তাকে ধর্ষণ করেছিল; আর তিনি ডায়ানার প্রতি নরম হন, কারণ তারই জন্য ডায়ানা ভেঙে পড়ে।[১] ছবিতে দেখানো হয়, কেন ডায়ানাকে তিনি ধরে এনেছেন তা তাকে খুলে বলেন শেখ আর ডায়ানার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তাকে চুম্বন করেন। প্রকৃত ধর্ষণের কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি। একবার ঘোড়াগুলিকে বাঁচানোর পর তাঁবুতে এসে শেখ দেখেন ডায়ানা কাঁদছেন। তখন তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ডায়ানার চাকরকে পাঠানো হয় তার কাছে। এই দৃশ্যগুলি যৌন অনাচারবাচক হওয়ায় কানসাস সিটিতে এক নীতি বোর্ড ছবিটি নিষিদ্ধ করে দেন।[১]
দর্শক প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনালস এঞ্জেলসে ছবিটির প্রিমিয়ার হয় ২১ অক্টোবর, ১৯২১। সমালোচকরা ছবিটি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ মনে করেন দুর্বল ধর্ষণ দৃশ্যটি ছবির প্রকৃত বার্তাটিকে নষ্ট করেছে।[১] যদিও ছবিটি প্রথম থেকেই অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই নিউ ইয়র্কের দুই প্রধান থিয়েটার রিয়ালটো ও রিভোলিতে রেকর্ড সংখ্যক দর্শক ছবিটি দেখতে ভিড় জমান। নিউ ইয়র্ক টেলিগ্রাফের অনুমান অনুসারে প্রথম সপ্তাহে ১২৫,০০০ জন দর্শক ছবিটি দেখেছিলেন।[১]
ল্যাস্কি নভেম্বরের শেষ সপ্তাহটিকে ‘দ্য শেখ সপ্তাহ’ ঘোষণা করেন। এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫০টি থিয়েটারে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়। ছবিটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চলেছিল ৬ সপ্তাহ এবং ফ্রান্সের একটি থিয়েটারে ৪২ দিন।[১] এটিই ভ্যালেনটিনোর প্রথম ছবি যা তার নিজের দেশ ইতালিতে দেখানো হয়।[১] কেবলমাত্র প্রথম বছরেই ছবিটির বাণিজ্যের পরিমাণ এক মিলিয়ন মোট ছাড়িয়ে যায়।.[১] ছবিটির নির্মাণ খরচ ছিল ২০০,০০০ ডলার।[১]
পুরুষ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনানিয়মিত পুরুষ সিনেমা দর্শকরা ছবিটিকে অপছন্দ করেন। তারা ছবিটি দেখতে অস্বীকার করেন অথবা প্রেমের দৃশ্যে অট্টহাস্য করতে থাকেন। অনেকে তো ছবি চলাকালীনই উঠে বেরিয়ে যান। অনেকেই ভ্যালেনটিনোর প্রেম নিবেদনের স্বরূপটি দেখে ভয় পেয়ে যান। তারা ব্যক্তিগতভাবে ভ্যালেনটিনোর চিত্রনাট্য সেন্সর করা ও প্রথম থেকে শেষ অবধি অভিনয়ের সমালোচনা করেন। কেউ কেউ তার চরিত্রটির পরিধানের লম্বা আলখাল্লার জন্য তাকে মেয়েলি আখ্যা দেন।[১]
ফটোপ্লে-এর মাধ্যমে “ডিক ডরগ্যান” ভ্যালেনটিনোর প্রতি তার তাৎক্ষণিক রাগ প্রকাশ করেন কয়েকটি নিবন্ধের মাধ্যমে। ডরগ্যান বলেন, ভ্যালেনটিনোকে থেডা বারার মতো লাগছিল এবং তিনি পুরুষদের তুলনায় একটু বেশিই সুমিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি ডরগ্যান “সং অফ দ্য হেট!” নামে ভ্যালেনটিনোর বিরুদ্ধে একটি গানও বেঁধে ফেলেন।[১]
মহিলা দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনামহিলা দর্শকরাও ভ্যালেনটিনোকে ঠিক বুঝতে পারেন না। সব বয়সের মহিলারা হলেই চিৎকার করতে থাকেন অথবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এই প্রতিক্রিয়ার জন্যই ফ্রান্সিস ম্যারিওন ছবিটিকে “দ্য শ্রেইক” নামে অভিহিত করেছিলেন।[১]
সাংস্কৃতিক প্রভাব
সম্পাদনাভ্যালেনটিনোর কেরিয়ারে এই ছবিটি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।[১] এই ছবিই তাকে ঠেলে দেয় সুপারস্টার হবার পথে। কিন্তু মজার কথা হল, মুক্তির সময় ছবির টাইটেল ক্রেডিটে লেখা হয়েছিল “দ্য শেখ... স্টারিং অ্যাগনেস আয়রেস”।[১]
“দ্য শেখ” এতই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে এই শব্দটির অর্থ করা হতে থাকে “শিকার বা লুটের সন্ধানে ঘুরঘুর করা ছোকরা”। শেখের কামনার বস্তুকে বলা হতে থাকে “দ্য শেবা”।[১]
বছরের পর বছর ধরে নানান ছবিতে “দ্য শেখ” ছবিটির নকল চলতে থাকে। বার্নিং স্যান্ডস, টেন্টস অফ আল্লাহ, ফেলিক্স দ্য ক্যাট স্ক্যাটারস দ্য শেখ, এবং রেক্স ইংগ্র্যামের রামন নাভারো অভিনীত ছবি দ্য আরব এগুলির মধ্যে অন্যতম। দ্য শ্রেইক অফ আরাবি, এবং একটি বেবি পেগি স্বল্পদৈর্ঘ্যের পেগ ও’ মুভিজ ছবিটির প্যারোডি করা হয়। অনেক পরে এলভিস প্রিসলের ছবি হারুম স্কারুম-ও এই ছবির কাহিনিসূত্র অবলম্বনেই নির্মিত হয়।[১]
জনপ্রিয় গান "দ্য শেখ অফ আরাবি" উপন্যাসের জন্য লেখা হয়েছিল। কিন্তু এই ছবিতেই গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। "কাশ্মীরি লাভ সং"-ও নতুন করে আরেকবার জনপ্রিয়তা পায় এই ছবিতে। প্রকৃতপক্ষে গানটি ১৯০২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। "পেনসিল থিন মুসট্যাক"-এ জিমি বাফেট “দ্য শেখ”-এর উল্লেখ করেন। আর্ট স্পিগেলম্যানের গ্রাফিক উপন্যাস মাউস (Maus)-এর প্রথম অধ্যায়ের নাম ছিল দ্য শেখ।এই উপন্যাসের অনেক স্থানে ভ্যালেনটিনো ও তার সবচেয়ে বিখ্যাত ছবিটির কথাও ছিল।
সার্বিয়ার জনপ্রিয় গায়িকা ড্রাগানা সারিক ওরফে বেবি ডল ১৯৮৩ সালে তার হিট গান রুডি ভ্যালেনটিনোকে উৎসর্গ করেন। গানে তাকে “দ্য শেখস সন” বলে অভিহিত করা হয়।
মুক্তি
সম্পাদনা“দ্য শেখ” ছবিটি বছরের বিভিন্ন সময়ে মুক্তি পায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ১৯৩৭ ও ১৯৩৮ সালে সারা বিশ্বে এটি পুনরায় মুক্তি পেয়েছিল। তখন অবশ্য হেজ কোডের জন্য ধর্ষণদৃশ্যটি বাদ দেওয়া হয়। প্যারামাউন্ট ভিডিও এটিকে প্রকাশ করেন ১৯৮৭ সালে। ২০০২ সালের ২৫ জুন ইমেজ এনটারটেইনমেন্ট সন অফ দ্য শেখ ছবিটির সঙ্গে এই ছবির ডিভিডি প্রকাশ করে।