দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের অংশগ্রহণ

পার্ল হারবার ঘটনার আগে ১৯৩৭ সাল থেকেই জাপান সাম্রাজ্যবাদ এর সূচনা করে চীন এবং অন্যান্য অঞ্চল ও দ্বিপে। সাম্রাজ্যবাদী জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধতে প্রবেশ করে ২৭ সেপ্টেম্বর,১৯৪০ এ। যা ছিল জার্মানিইতালির সঙ্গে সংঘটিত এক ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফল। এই সংঘর্ষে আমেরিকার প্রবেশ ঘটে ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ এ পার্ল হারবার আক্রমণ এর মধ্য দিয়ে। [১] ৭ ঘণ্টার মধ্যে জাপান,আমেরিকার অধ্যুষিত ফিলিপাইন, গুয়াম, ওয়েক আইল্যান্ড এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বোরনিও, মালয়, সিঙাপুর এবং হংকং [২] এ সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার নৌবাহিনী কে পঙ্গু করে দেওয়া, ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিজ এর তৈলক্ষেত্র গুলি দখল করা এবং চীন, পূর্ব এশিয়াকোরিয়ার উপর প্রতিপত্তি বজায় রাখা। [৩]

যুদ্ধর প্রস্তুতি সম্পাদনা

আমেরিকার উপর জাপানের আক্রমণের বিষয়টি আজ ও বিতর্কিত। বিশেষজ্ঞরা জাপান ও আমেরিকার যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণত আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন, এবং জাপানের অর্থনীতি জাপান-চীন যুদ্ধের দরুন আগে থেকেই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল। আমেরিকার চাপান তৈল বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা, শর্তহীন ভাবে চীন থেকে বাহিনী প্রত্যাহার, এবং অন্যান্য দেশের সাথে শান্তি বজায় রাখার দাবি জাপান স্বীকার করতে চায়নি। তৈল বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং দেশের টালমাটাল অবস্থা জাপান কে আমেরিকা আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মূলত ওসাকা, নাগানো, ইসারাকো, ইয়ামামোতোর তত্ত্বাবধানে জাপান হাওয়াই এ আমেরিকার নৌ ঘাটি তে আক্রমণ করে এবং আমেরিকা মিত্র শক্তির হাত ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পা রাখে। ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ এ জাপানের মন্ত্রিসভা যুদ্ধ কৌশল নিয়ে আলোচনায় বসে। পার্ল হারবার আক্রমণের প্রধান স্থপতি ভাইস এডমিরাল ইসোরোকু ইয়ামামোতো আমেরিকার সাথে জাপানের যুদ্ধ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এ ভাষার শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে ইয়ামামোতো তার যৌবন কাল আমেরিকায় কাটান। পরবর্তীতে ওয়াশিংটন ডি.সি তে নৌ বাহিনীর এক গুরুত্বপূর্ণ পদ ও সামলান। আমেরিকার সাথে যুদ্ধের পরিণতি বুঝতে পেরে তিনি নিজ দেশবাসীকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, " ছয় মাস বা এক বছর হয়ত আমরা বেপরোয়া হয়ে চলতে পারি কিন্তু তারপর কি হবে সে বিষয়ে আমার আস্থা খুব কম।"

জাপানি নৌবাহিনী পার্ল হারবার আক্রমণ করে ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ এ। এই আক্রমণে আমেরিকার নৌবাহিনী, প্রতিরক্ষা বিমানবাহিনী ও সামুদ্রিক বিমানবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি হয়। এই আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকা কে অক্ষম করে দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারের জাপানের বহুদিনের স্বপ্ন পূরণের পথ প্রশস্ত করা এবং কিছু আত্মরক্ষামূলক বাফার জোন তৈরি করা। ইয়ামামোতোর মতে তাদের এই আক্রমণ খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ তাদের মূল লক্ষ্য নৌবহরে থাকা ৩ টি বিমানপোত বহনকারী জাহাজই অক্ষত থেকে যায়। এছাড়াও আমেরিকাবাসী এই আক্রমণ কে এক বর্বরোচিত ও বিশ্বাসঘাতী আক্রমণ হিসেবে দেখে। আমেরিকা পুরোদমে যুদ্ধে প্রবেশ করার ৪ দিনের মধ্যেই জার্মানির হিটলারইতালির মুসোলিনি আমারিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পার্ল হারবার আক্রমণের পরই জাপান পূর্বদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিত্রশক্তির উপর আক্রমণ করে। ব্রিটিশ অধ্যুষিত হংকং, মালয়শিয়াফিলিপাইন এ লাগাতার আক্রমণ চলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন পুরোদমে চলছে জাপান তখন জৈবঅস্ত্র ব্যবহারে উদ্যোগী হয়। জাপানি বিমানবাহিনী চীনের নিগাবো গ্রামে বিউবনিক প্লেগ সংক্রমিত জীবাণুযুক্ত বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলস্বরূপ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। জৈবঅস্ত্র নিয়ে জাপান নিরলস গবেষণা চালাতে থাকে এবং চীনের হাজারেরও বেশি গ্রামে কলেরাটাইফয়েড মহামারী শুরু হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সম্পাদনা

 
১৯৪২ সালের ১৪ জানুয়ারি জাপানি সেনারা বোর্নিওর লাবুয়ানের রাস্তায় পদযাত্রা করেছিল।
 
পার্ল হারবার আক্রমণের পরে জাপানি সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতকৃত নিউজিল্যান্ডের ক্যানটারবেরির মানচিত্র

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্দেশ্যে জাপানের অভিযান শুরু হয় কয়েকবছরব্যাপী প্রচারণা ও গুপ্তচরবৃত্তির মধ্য দিয়ে। জাপানের স্বপ ছিল নিজেদের সাম্রাজ্য কে আরও বিস্তার করা এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসা এশিয়ার উপর ইউরোপীয় কর্তৃত্ত কে অস্বীকার করা। হয়তো সেই কারণেই এশিয়ার কিছু উপনিবেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া জাপানের সহায়তা করে। যদিও চীন যারা জাপানি উপনিবেশের ফলাফল নিজে প্রত্যক্ষ করেছিল, তারা জাপানকে সাহায্য করতে রাজি হয়নি। ২৫ শে ডিসেম্বর হংকং জাপানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জাপানের সেনাবাহিনী ব্রিটিশ, ভারতীয়,অস্ট্রেলিয়ান ও মালয় দের নিয়ে সংগঠিত সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে। মিত্রশক্তি কে বিপর্যস্ত করে দিয়ে জাপান দ্রুত মালয় উপদ্বীপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ১০ ই ডিসেম্বর,১৯৪১ এ এইচ.এম.এস প্রিন্স অফ ওয়েলস এবং এইচ.এম.এস রিপালস এর ডুবে যাওয়ায় মালয়ের পূর্ব উপকূল জাপানের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায়। ১৯৪২ এর জানুয়ারির শেষভাগে মিত্রশক্তির অবশিষ্ট সেনাবাহিনী জোহোর প্রণালী অতিক্রম করে সিঙাপুরে প্রবেশ করে। জাপান ফিলিপাইনে উপস্থিত ফিলিপাইন ও আমেরিকার যৌথবাহিনীকে যথাক্রমে বাটান উপদ্বীপ ও কোরেজিওন দ্বীপের দিকে ঠেলে দেয়। ১৯৪২ এর জানুয়ারির দিকে জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থার ও প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল এল. কুয়েজন জাপানি আগ্রাসনের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ফিলিপাইন ও আমেরিকা মিলিয়ে প্রায় ৭০,০০০ সেনাদল জাপানের হাতে বন্দী হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার অন্যতম বিপর্যয়। উৎকৃষ্ট সেনাবাহিনী ও অভিনব যুদ্ধকৌশলের দৌলতে ১৯৪২ এর ১৫ ই ফেব্রুয়ারি জাপান সিঙাপুর দখল করে ফেলে। ভারতীয়, অস্ট্রেলিয়ান ও ব্রিটিশ মিলিয়ে প্রায় ৪০,০০০ সৈন্যদল জাপানের কাছে বন্দী হয়। এবং জাপানের মালয় (বর্তমানে মালয়েশিয়া) আক্রমণের সাথে সাথে আরও ৫০,০০০ সৈন্যদল কে জাপান বন্দী করে। এদের অধিকাংশকেই পরবর্তীতে কুখ্যাত কোয়াই নদীর সেতুর কাছে জোরপূর্বক বার্মা রেললাইন তৈরির কাজে নিযুক্ত করা হয়। ব্রিটিশ অধ্যুষিত মালয় ও সিঙাপুর দখলের পরই জাপান ওই অঞ্চলে বসবাসকারী চীনা দের গণহত্যা করে। এরপর জাপান ডাচ্ দের পরাজিত করে মূল তৈল উৎপাদন ক্ষেত্র যেমন বোরনেও, সেন্ট্রাল জাভা, মালাং, কেপু, সুমাত্রা এবং ডাচ্ অধ্যুষিত নিউ গিনি (পরবর্তীতে ডাচ্ ইস্ট ইন্ডিস) দখল করে। যদিও মিত্রশক্তির ক্রমাগত প্রত্যাঘাতের ফলে জাপান তৈল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেই পুরনো গৌরবে ফিরে যেতে পারেনি। প্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপসমূহ যেমন গুয়াদালকানাল অঞ্চল দিয়ে জাপান তৈল বাণিজ্য চালাতে থাকে।

যুদ্ধের মোড় পরিবর্তন সম্পাদনা

 
মিডওয়ের যুদ্ধ। ১৯৪৪ সালের ৪ জুন সকালে জাপানের সরিয়ু, আকাগি এবং কাগায় জাপানি বিমান বাহকের উপর ইউএসএস ইয়র্কটাউন এবং ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ থেকে ডাইভ বোমারু বিমানের আক্রমণ।

জাপানের সেনানায়করা জাপানআমেরিকার শিল্প সম্ভাবনার অসমতা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তাই আমেরিকার শক্ত ঘাটি গুলির উপর নির্ণায়ক আক্রমণ প্রয়োজনীয় ছিল। ১৯৪২ এর এপ্রিলে ডুলিটল রেইড এ জাপানে প্রথম বোমা নিক্ষেপিত হয়। মিত্রশক্তির থেকে অনেক বেশি উন্নত হওয়া সত্ত্বেও ১৯৪২ এর মে মাসের কোরাল সি যুদ্ধে জাপান মিত্রশক্তিকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হয়। ১৯৪২ এর জুন মাসে মিডওয়ে র যুদ্ধে জাপানের চারটি নৌঘাঁটির চূড়ান্ত ক্ষতি হলে যুদ্ধে নতুন মোড় আসে। ১৯৪২ এর সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ান বাহিনী নিউ গিনিতে মিলনে বে এর যুদ্ধে জাপানের নৌবাহিনীকে পরাস্ত করে। যথাক্রমে ১৯৪২ এর সেপ্টেম্বরে গুয়াদালকানাল ও ১৯৪৩ এ নিউ গিনির যুদ্ধে জাপান পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। শিল্পক্ষেত্রে প্রতাপ ও অবারিত কাচামালের লভ্যতার সহায়তায় মিত্রশক্তি জাপানকে আরও চাপে ফেলে দেয়। জেনারেল ম্যাকআর্থারের নেতৃত্বে ষষ্ঠ ইউ.এস আর্মি ১৯৪৪ এর ২০ অক্টোবর লেয়টে অবতরণ করে। পরবর্তী মাসগুলিতে ফিলিপাইন অভিযান (১৯৪৪-৪৫) চলাকালীন স্থানীয় গেরিলা বাহিনীর সহায়তায় ফিলিপাইন মুক্তি লাভ করে। ১৯৪৫ এর গোড়ায় ইউ.এস বিভিন্ন যুদ্ধ যেমন লু জিমার যুদ্ধে ওগাসাওয়া দ্বীপপুঞ্জ দখল করে।

জাপানে বিমানহানা সম্পাদনা

 
১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা

১৯৪৪ এর গ্রীষ্মে আমেরিকা সাইপান ও গুয়ামের বিমানঘাঁটি গুলি দখল করে। জাপানের শিল্প কারখানা ও মনোবল কে চুরমার করে দিতে জাপানের বিভিন্ন শহরে, মিত্রশক্তি বোমাবর্ষণ করতে থাকে। ১৯৪৫ এ ৯-১০ মার্চ অপারেশন মিটিংহাউস হামলায় প্রায় ১০০,০০০ লোকের মৃত্যু হয়। আগ্নেয় বোমা অভিযানের দরুন জাপানের ৬৬ টি শহর মিলিয়ে প্রায় ৩৫০,০০০-৫০০,০০০ মানুষ মারা যায়। ইউ.এস এর অপারেশন স্টারভেশন এ জাপানের উপকূলবর্তী আরোহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এত কিছুর পরও জাপান আত্মসমর্পণ করেনি। ১৯৪৫ এ আগস্টের মধ্যভাগে আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি তে পরমানু বোমা নিক্ষেপ করে। এটি ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে পারমাণবিক বোমার প্রথম ব্যবহার। হিরোশিমায় ১৪০,০০০ ও নাগাসাকিতে ৮০,০০০ লোক বোমা নিক্ষেপের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যায়। এই বোমার দিন, মাস এমনকি বছরব্যাপী পারমাণবিক বিকিরণের প্রভাবে প্রায় ১২০,০০০ থেকে ১৪০,০০০ লোক মারা যায়।

যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের পুনঃপ্রবেশ

সোভিয়েত ও জাপানের মধ্যে অঅনাক্রমণ চুক্তি থাকলেও ১৯৪৫ এর ইয়াল্টা সম্মেলনের পর ইউ.কে, ইউ.এস ও ইউ.এস.এস.আর জাপানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সোভিয়েত-জাপান যুদ্ধে সোভিয়েত জাপানের মাঞ্চুরিয়ান অধিকরণ ও দক্ষিণ সাখালিন দ্বীপ কব্জা করে। ইউরোপে মিত্রশক্তির জয় পরবর্তীতে বার্লিনের জার্মানি বিভাজন, লৌহ পর্দা ও ঠান্ডা যুদ্ধের পথ উন্মুক্ত করে।

জাপানের আত্মসমর্পণ ও জাপান অধিগ্রহণ

পটসড্যাম বিবৃতি উপেক্ষা করার পর, সোভিয়েত এর আক্রমণ, হিরোশিমা ও নাগাসাকি তে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ ইত্যাদির পর জাপান শেষমেশ আত্মসমর্পণ করে। জাপানের সম্রাট হিরোহিতো ১৫ ই আগস্ট জাতীয় বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে জাপানের আত্মসমর্পণের কথা জাপান বাসী দের জানান। ডগলাস ম্যাকআর্থার এর নেতৃত্বে জাপানের সংবিধান পুনর্বিবেচনা ও জাপানের সেনাবাহিনীর বিচরণ প্রত্যাহার করা হয়। মিত্রশক্তি জাপানকে মেইজি সংবিধান প্রত্যাহার করে জাপানের সংবিধান লাগু করার আদেশ দেয়। ১৯৪৭ এর ৩ মে জাপান সাম্রাজ্য নাম বদলে জাপান করা হয়। এরপর জাপান সাংবিধানিক শাসন পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং সম্রাটের পদ টি শুধু প্রতিকী হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

যুদ্ধপরবর্তী অবস্থা সম্পাদনা

 
অস্ট্রেলিয়ান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের পরে জেসেলটনে (কোটা কিনাবালু) যাত্রা করার আগে ব্রিটিশ উত্তর বোর্নিওয়ের নাগরিক এবং সৈন্যরা

অন্যান্য দেশে থাকা জাপানিদের জাপানে প্রত্যাবর্তন জাপানি উপনিবেশ কালে জাপান ছেড়ে কোরিয়া, তাইওয়ান, মাঞ্চুরিয়াকারাফুতো সহ অন্যান্য দেশে বসবাসকারী জাপানিরা আবার জাপানে ফিরে আসা শুরু করে।

১৯৩৮ নাগাদ তাইওয়ানে ৩০৯,০০০ জাপানি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে কোরিয়ায় ৮৫০,০০০ জাপানি বসবাস করত। চীনে বসবাসকারী ২০ লক্ষ জাপানিদের বেশিরভাগই ছিল মানচুকের কৃষিজিবী। ১৯৩৯ এর জনগনণা অনুযায়ী দক্ষিণ সাগর ম্যান্ডেটে ১২৯,১০৪ জন এর মধ্যে ৭৭,২৫৭ ই ছিল জাপানি। ১৯৪১ এর ডিসেম্বরের শেষে ৩০,০০০ সাইপান বাসীর ২৫,০০০ ই ছিল জাপানি। ১৯৪৫সোভিয়েত ইউনিয়ন এর হামলায় সময় কারাফুতো (দক্ষিণ শাখালিন) এ ৪০০,০০০ লোক বাস করত যার সিংহভাগই ছিল জাপানি। কুরিল দ্বীপপুঞ্জ হারানোর পর ১৭,০০০ জাপানিকে দক্ষিণের দ্বীপ থেকে বিতাড়িত করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশির ভাগ জাপানিই জাপানে ফিরে যায়। মিত্রশক্তি এশিয়ার বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে প্রায় ষাট লক্ষ জাপানিদের জাপানে ফিরিয়ে দেয়। যদিও কিছু জাপানি যেমন চীনে থাকা অনাথ ও রেড আর্মি কর্তৃক আধৃত যুদ্ধবন্দি দের জোরপূর্বক সাইবেরিয়ায় কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

যুদ্ধকালীন অপরাধ সম্পাদনা

ডগলাস ম্যাকআর্থার এর নেতৃত্বে টোকিও ট্রাইবুনালে জাপানের অনেক রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাগণ যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়। যদিয় সম্রাট শোয়ার মত কিছু সম্ভ্রান্ত পরিবারে দোষ ক্ষালন করা হয়। জাপানি সেনাবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন একাধিক অপরাধ করে। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ এ আচমকা পার্ল হারবার আক্রমণের ফলে ২,৪০৩ সেনাকর্মী ও বাসিন্দা মারা যায় এবং ১৪২৭ জন আহত হয়। এছাড়াও জাপানি সেনাবাহিনী একাধিক গণহত্যা,ধর্ষণ ও লুঠপাঠ চালায়। সুক চিং ও নান জিং গণহত্যা এর মধ্যে অন্যতম। প্রায় ২০০,০০০ এর বেশি মহিলা দের জাপানের সেনাবাহিনী গণিকা হিসেবে ব্যবহার করে। যারা 'কমফোর্ট উইমেন' নামে পরিচিত ছিল।

জাপানের সেনাবাহিনী মিত্রশক্তির আধৃত যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করে ও তাদের উপর নির্মম অত্যাচার করে। স্থানীয় ও ইউনিট ৭৩১ এর বন্দীদের উপর জীববিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণা চালানো হয়। সম্রাট শোয়ার অনুমোদনে জৈবিক ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ২০০২ এ ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোসিয়াম অফ দ্য ক্রাইমস অফ ব্যাক্টেরিওলজিকাল ওয়ারফেয়ার এর মতে সুদূর পূর্ব এশিয়ায় প্রায় ৫৮০,০০০ মানুষ জাপানের প্রয়োগ করা জৈব অস্ত্রের ফলে মারা যায়। ১৯৪৮ এ জেনারেল ম্যাকআর্থার লেফটেন্যান্ট শিরো ইশিকে রেহাই দেন। প্রত্যাঘাতের ভয়ে এইসব জৈব অস্ত্র জাপান পশ্চিমী দেশ গুলিতে প্রয়োগ করেনি। কিন্তু এশিয়ার মানুষদের তুলনামূলকভাবে হীন মনে করে সেখানে এই অস্ত্র গুলি প্রয়োগ করা হয়। ১৯৩৮ এর আগস্টের উহান যুদ্ধে সম্রাটের অনুমোদনে প্রায় ৩৭৫ বার বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. United States Holocaust Memorial Museum। "World War II in the Pacific"Holocaust Encyclopedia। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০২০ 
  2. Gill, G. Hermon (১৯৫৭)। Royal Australian Navy 1939–1942। Australia in the War of 1939–1945. Series 2 – Navy। 1। Canberra: Australian War Memorial। পৃষ্ঠা 485। এলসিসিএন 58037940। মে ২৫, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৬, ২০১৫ 
  3. Morton, Louis। "Japan's Decision for War"U.S. Army Center Of Military History। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৮