দোসি (সিংহলি: දෝසි, তামিল: தோசி) হল শ্রীলঙ্কার একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন,[১] যার সাথে সংরক্ষিত ফল বা মিছরিযুক্ত ফলের মিল রয়েছে। এই খাবারটি কাটা ফল চিনির সরে জ্বাল দেওয়ার পরে যখন ফলের বাইরে ও ভেতরে চিনির শিরাগুলো শক্ত হয়ে উঠে তখন ঠান্ডা করে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত ঐতিহ্যগতভাবে জলখাবারের সাথে দিনের বেলায় অথবা খাবারের পরে দোসি পরিবেশন করা হয়।[২] এই খাবারটা রমজানের পরে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে সচরাচর শ্রীলঙ্কান মালয়রা পরিবেশন করে। এই খাবার বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানেও পরিবেশন করা হয়ে থাকে। দোসির বিভিন্ন বৈচিত্র রয়েছে যেমন এলাচ, দারুচিনি অথবা গোলাপের নির্যাস যুক্ত দোসি।

দোসি
আনারসী দোসি
ধরনমিষ্টি বা মিষ্টান্ন
উৎপত্তিস্থলশ্রীলঙ্কা
সংশ্লিষ্ট জাতীয় রন্ধনশৈলীশ্রীলঙ্কা
প্রধান উপকরণফল
সাধারণত ব্যবহৃত উপকরণচিনি, জল
ভিন্নতাএলাচ, দারুচিনি, গোলাপ নির্যাস

দোসির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকার হচ্ছে মিষ্টি হালকা হলদে পুহুল-দোসি (সিংহলি: පුහුල් දොසි), যা চালকুমড়া থেকে তৈরি করা হয়। অন্যান্য স্বাদের দোসিগুলো হলো ইঙ্গুরু-দোসি (সিংহলি: ඉගුරු දෝසි ), যা আদা থেকে তৈরি;[৩] পোল-দোসি (সিংহলি: පොල් ටොෆි), যা নারিকেল থেকে তৈরি; আনানসি-দোসি বা আন্নানসিকা-দোসি (সিংহলি: අන්නාසි දොසි), যা আনারস থেকে তৈরি; আমবারেলা-দোসি (সিংহলি: ඇඹරැල්ලා දෝසි), যা আমবারেলা থেকে প্রস্তুতকৃত;[৩] আমবা-দোসি বা মাংগা-দোসি (সিংহলি: අඹ දෝසි), আম থেকে প্রস্তুতকৃত; আলা-দোসি (সিংহলি: අල දෝසි), আলু থেকে তৈরি; কিরি-দোসি (সিংহলি: කිරි දෝසි) দুধের তৈরি;[৪] আপেল দোসি; জাম্বু-দোসি (সিংহলি: ජම්බු දෝසි), যা জাভা বরই থেকে তৈরি;[৩] আমবারেলিকা-দোসি, যা বিলাতি আমড়া থেকে তৈরি;[৫] নেল্লি-দোসি, গুসবেরি থেকে তৈরি; বিলিং-দোসি; লভি-দোসি (সিংহলি: ලොවි දෝසි), বাকাতো ফল থেকে তৈরি (লভি-লভি নামে শ্রীলংকায় ভালো পরিচিত); রামবুতান-দোসি (সিংহলি: රඹුටන් දෝසි) যা রামবুতান থেকে তৈরি; এবং কলা থেকে তৈরিকৃত কেসেল-দোসি (সিংহলি: කෙසෙල් දෝසි)।

পর্তুগিজ ভাষায়, দোসে শব্দের অর্থ শুধুই ‘মিষ্টি’, যা লাতিন শব্দ দোলসে থেকে এসেছে এবং সিংহলি ভাষায় এটি এসে হয়ে গেছে 'দোসি'।[৬][৭] এটা সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে এই খাবারের উৎপত্তি লুসিতানিয়া অঞ্চল থেকে এবং পর্তুগিজ নাবিকরা সাথে করে এই খাবার শ্রীলংকায় এনেছিলো যারা দীর্ঘ সমুদ্র ভ্রমণের জন্য ফল সংরক্ষণের পদ্ধতি এই খাবারের উপর প্রয়োগ করে বর্তমান দোসি তৈরি করেছিলো।[৮] চিনির রসে ফল সিদ্ধ করা কার্যকরীভাবে ফলের কোষ থেকে জল বের করা বা শুষ্ককরণ দ্বারা ফল নষ্ট করা থেকে অণুজীবগুলিকে থামায়।

আমবারেলা দোসি (জুন পাম দোসি)

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Gunawardena, Charles A. (২০০৫)। Encyclopedia of Sri Lanka। Sterling Publishers Pvt. Ltd। পৃষ্ঠা 119আইএসবিএন 9781932705485 
  2. Colombo Museum, Colombo (১৯৬০)। Spolia Zeylanica। 29-30। National Museums of Sri Lanka। পৃষ্ঠা 122। 
  3. Rajapaksha, Udaya (১৯৯৮)। Traditional food plants in Sri Lanka। Hector Kobbekaduwa Agrarian Research and Training Institute। আইএসবিএন 9556120319 
  4. Jayasuriya, Shihan de S. (২০০১)। Tagus to Taprobane: Portuguese Impact on the Socio-culture of Sri Lanka। Tisara Prakasakayo। পৃষ্ঠা 69। আইএসবিএন 9789555640626 
  5. Hussein, Asiff (২০০৭)। Sarandib: An Ethnological Study of the Muslims of Sri Lanka। পৃষ্ঠা 286। আইএসবিএন 9789559726227 
  6. Hettiaratchi, D. E. (১৯৬৫)। "The Journal of the Ceylon Branch of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland"। Influence of Portuguese on the Sinhalese Language। Royal Asiatic Society of Sri Lanka। 9 (2): 229-238। 
  7. Dalgado, Sebastião Rodolfo (১৯৮৮)। Soares, Anthony Xavier, সম্পাদক। Portuguese Vocables in Asiatic Languages: From the Portuguese Original of Monsignor Sebastião Rodolfo Dalgado। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 9788120604131 
  8. Abeyasinghe, Tikiri (১৯৬৬)। Portuguese Rule in Ceylon, 1594-1612। Lake House Investments। পৃষ্ঠা 83। আইএসবিএন 9780842607803