দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী
স্যার দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী, সি.আই.ই (ইংরেজি: Sir Devaprasad Sarvadhikary, C.I.E)( ডিসেম্বর ১৮৬২ - ১১ আগস্ট , ১৯৩৫ ) ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত ও পথিকৃৎ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সহকর্মী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বেসরকারি উপাচার্য । [২]
দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী | |
---|---|
জন্ম | ডিসেম্বর ১৮৬২ |
মৃত্যু | ১১ আগস্ট ১৯৩৫ (বয়স ৭৩) |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | আইনজ্ঞ, রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদ লেখক |
পিতা-মাতা | ডাঃ সূর্যকুমার সর্বাধিকারী (পিতা) হেমলতা সর্বাধিকারী (মাতা) |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাদেবপ্রসাদের জন্ম অবিভক্ত ভারতে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার খানাকুল ব্লকের রাধানগরে।[১] তার পিতা চিকিৎসক রায়বাহাদুর সূর্যকুমার সর্বাধিকারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য ও ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের প্রথম ভারতীয় ডিন ছিলেন। মাতা হেমলতা সর্বাধিকারী ছিলেন গূহবধূ। দেবপ্রসাদ ছিলেন এদের দ্বিতীয় সন্তান। দেবপ্রসাদের সাত ভাই ও দুই বোন ছিল। বর্ধিষ্ণু এই সর্বাধিকারী পরিবারের বড়ভাই ছিলেন ডাঃ সত্যপ্রসাদ। সেজভাই শল্যচিকিৎসক সুরেশপ্রসাদ একমাত্র বেসরকারী ব্যক্তি হয়েও আই.এম.এস এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল উপাধি লাভ করেছিলেন। আর এক ভাই নগেন্দ্রপ্রসাদ ছিলেন ভারতের ফুটবল খেলার জনক ও খ্যাতনামা ক্রিকেটার। দেবপ্রসাদ কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে একাধিক বৃত্তি ও পুরস্কারসহ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা ও ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এম.এ পাশ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাদেবপ্রসাদ ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে অ্যাটর্নিশিপ পরীক্ষা পাশ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। রাজনীতিতে বিশেষ আগ্রহান্বিত হয়ে 'ভারতসভাʼ তথা 'ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন' এর কাজে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সহকর্মী হন। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট কে তখন সরকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার বিপদ থেকে তিনি রক্ষা করেন। দু-বার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসাবে লণ্ডনে অনুষ্ঠিত 'ইউনিভার্সিটিজ অব দি এম্পায়ার' কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে এবার্ডিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক এলএল.ডি উপাধি পান। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পর দ্বিবার্ষিক মেয়াদে ১৯১৪ - ১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বেসরকারি উপাচার্য হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা যান সেখানকার ভারতীয়দের অবস্থা পর্যালোচনে ও তথ্যানুসন্ধানে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের ভারতের অন্যতম প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। একাধিক পত্রিকায় তার রচিত প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত গ্রন্থ দু-টি হল -
- 'ইউরোপের তিন মাস'
- 'স্মৃতিরেখা'
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পরিষদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বিভিন্ন সময়ে ( ১৩২১-২৪, ১৩২৭-২৮, ১৩৩২-৩৩, ১৩৩৫ - ৩৯ বঙ্গাব্দে) পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন। 'ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি' বর্তমানে ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগারের পরিচালকদের অন্যতম ও সংস্কৃত ভাষা প্রসারে উদ্যোগী ছিলেন।
সম্মাননা
সম্পাদনাএবার্ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক এলএল.ডি ডিগ্রি ও স্যার উপাধি লাভ করেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তার স্মৃতিতে বিজ্ঞানে অসাধারণ অবদানের জন্য'স্যার দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী স্বর্ণপদক'পুরস্কার প্রবর্তন করে।
জীবনাবসান
সম্পাদনাদেবপ্রসাদ সর্বাধিকারীর জীবনাবসান ঘটে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই আগস্ট তারিখে ৭৩ বৎসর বয়সে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান, সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র ও বসু, অঞ্জলি, ১৯৭৬, সাহিত্য সংসদ, কলিকাতা, পৃষ্ঠা ২১৩
- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৩০০,৩০১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫- ১৩৫-৬