দেবকী পণ্ডিত

ভারতীয় গায়ক

দেবকী পণ্ডিত (মারাঠি: देवकी पंडित; জন্ম ৬ই মার্চ ১৯৬৫) ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী। সুরেলা কন্ঠস্বরের মাধ্যমে দেবকী পণ্ডিত তাঁর নিজস্ব গানের এক অনন্য শৈলীর বিকাশ করেছেন।

দেবকী পণ্ডিত
প্রাথমিক তথ্য
জন্ম (1965-03-06) ৬ মার্চ ১৯৬৫ (বয়স ৫৯)
উদ্ভবমহারাষ্ট্র, ভারত
ধরনভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত, নেপথ্য কন্ঠশিল্পী
পেশাসংগীতশিল্পী, গায়ক, সুরকার[১]
কার্যকাল১৯৭৭-বর্তমান
দাম্পত্যসঙ্গীশচীন নাম্বিয়ার

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

দেবকী পণ্ডিতের জন্ম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে। তাঁর মায়ের নাম ঊষা পণ্ডিত। মাত্র দুই বছর বয়সে সংগীতের সাথে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। তিনি পণ্ডিত পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সংগীতশিল্পী। তিনি তাঁর মা ঊষা পণ্ডিতের কাছ থেকে প্রাথমিক সংগীত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১০ বছর ধরে বসন্তরাও কুলকার্নির কাছে, ১২ বছর জিতেন্দ্র অভিষেকীর কাছে এবং চার বছর কিশোরী আমোনকরের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি বাবনরাও হালদঙ্করের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।[১] অসাধারণ শিল্পী বংশে জন্মগ্রহণ করে, দেবকী পণ্ডিত শিল্পের মধ্যেই বড় হয়ে উঠেছিলেন।

পেশা সম্পাদনা

দেবকী পণ্ডিত নয় বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে, বারো বছর বয়সে তিনি তাঁর প্রথম গানটি রেকর্ড করেছিলেন, এটি ছিল একটি বালগীত (শিশুদের জন্য একটি গান)। রেকর্ড করেছিল পলিডোর রেকর্ডস। ১৯৮৬ সালে, অর্ধাঙ্গী চলচ্চিত্রের জন্য তিনি প্রথম নেপথ্য কন্ঠশিল্পী হিসেবে গান গেয়েছিলেন। এই গান গেয়ে তিনি মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের দেওয়া "সেরা মহিলা নেপথ্য কন্ঠশিল্পী" পুরস্কার জেতেন। তিনি বেশ কয়েকটি মারাঠি ধারাবাহিকে শিরোনাম সংগীত গেয়েছেন। বিশেষত জি মারাঠি চ্যানেলের অভলমায়ার জন্য গান গেয়ে তিনি সুপরিচিত। মারাঠি ছাড়াও তিনি হিন্দি ভাষাতে গান গেয়েছেন। তিনি সম্প্রতি জি মারাঠিতে একাধিক পর্বের সংগীত প্রতিভা খোঁজার অনুষ্ঠান 'সা রে গা মা পা' এর বিচারক ছিলেন। জনগণের কাছে বিচারক হিসেবে তাঁর সঠিক রায় এবং শিক্ষানবীশদের সঠিক পথ নির্দেশ করে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। ২০১২ সালের স্পন্দনে তিনি 'চল চাল চাল তু বালা' এবং 'ইয়া জগনাচ' গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। 'চল চাল চাল তু বালা' গানে ৫০ জনেরও বেশি সেরিব্রাল পলসি (মস্তিষ্কের ক্ষতির ফলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা) শিশু ছিল।[১] দেবকী পণ্ডিত সংগীতের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দুই দিকপাল পদ্মবিভূষণ গানসরস্বতী কিশোরী আমোনকর এবং পদ্মশ্রী পণ্ডিত জিতেন্দ্র অভিষেকীর কাছ থেকে। কিংবদন্তি গুরুদের সঙ্গ এবং সংগীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে তাঁদের অনন্য নান্দনিক পদ্ধতি দ্বারা দেবকীর গায়কী প্রভাবিত হয়েছে। তিনি তাঁর মা শ্রীমতি ঊষা পণ্ডিতের মাধ্যমে সংগীতের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন। তিনি ৯ বছর বয়সে সংগীতের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ পান পণ্ডিত বসন্তরাও কুলকার্নির কাছ থেকে। পরবর্তীকালে তিনি আগ্রা ঘরানার পণ্ডিত বাবনরাও হালদঙ্করের অধীনে সংগীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এছাড়াও গানসরস্বতী কিশোরী আমোনকরের শিষ্য ডাঃ অরুণ দ্রাবিড়ের কাছেও তনি শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমার মা ঊষা পণ্ডিত, আমার প্রথম গুরু, তিনিও পণ্ডিত জিতেন্দ্র অভিষেকীর শিষ্য, আমাকে গানের মূল বিষয়গুলি শিখিয়েছেন তবে সর্বদা আমাকে বারবার পরীক্ষা করতেন; আমার সংগীতের সাথে নিবিড়, আজীবন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে নিবেদিত থাকার অধ্যবসায় আছে কিনা। এই সজাগ এবং স্ব-বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি মহান কিংবদন্তি গুরুদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আমার সাধনায় আমাকে সহায়তা করেছিল।”

সংগীত কোন সীমানায় বাঁধা থাকেনা, এবং দেবকী পণ্ডিতের সংগীতের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আগ্রা ঘরানা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে, তিনি বারো বছর বয়সে পেশাগতভাবে গান শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রথম গান ছিল শিশুদের জন্য একটি অ্যালবাম। তাঁর মা এবং তাঁর গুরুদের কাছ থেকে সংগীতের সূক্ষ্মতা শেখার সাথে সাথে দেবকী একজন দক্ষ গায়ক হিসাবে গড়ে ওঠেন। বহুমুখীতা অর্জনের তীব্র সংবেদনশীলতা এবং আগ্রহের কারণে তিনি ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের গান যেমন ভজন, গজল, অভঙ্গ এবং চলচ্চিত্রের গান গাইতে শুরু করেছিলেন।[২]

চলচ্চিত্র, দূরদর্শন এবং সামনাসামনি ধ্রুপদী পরিবেশনার ক্ষেত্রে তিনি হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর, ওস্তাদ রইস খান, গুলজার, বিশাল ভরদ্বাজ, নওশাদ, জয়দেব, যতীন – ললিত, ওস্তাদ জাকির হুসেন প্রমুখ শিল্পীদের সহযোগী ছিলেন।

সংগীতে পথ চলা সম্পাদনা

হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত সম্পাদনা

তানা রিরি সংগীতটি সৃষ্টি করেছেন দেবকী পণ্ডিত

  • দীপ্তি (কিংবদন্তি উত্তরাধিকার)
  • ইননার সোল (নিনাদ)
  • সন্দেশ (নিনাদ)
  • রাগ- ললিত / আনন্দ ভৈরব / পঞ্চম হিন্দোল (আলুরকর)
  • রাগ- শ্রী / কামোদ / বাহার (আলুরকর)
  • রেভারেন্স (টাইমস মিউজিক)
  • তানা রিরি (টাইমস মিউজিক)[১]

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি সম্পাদনা

  • কেশারবাই কেরকর বৃত্তি - একমাত্র ব্যক্তি যিনি এটি পরপর দুবার পেয়েছিলেন
  • ১৯৮৬ - মহারাষ্ট্র "সেরা মহিলা নেপথ্য কন্ঠশিল্পী" এর জন্য রাজ্য পুরস্কার (চলচ্চিত্র: অর্ধাঙ্গী)
  • ২০০১ এবং ২০০২ - আলফা গৌরব পুরস্কার
  • ২০০২ - মহারাষ্ট্র সরকারের "সেরা মহিলা নেপথ্য কন্ঠশিল্পী"র জন্য পুরস্কার
  • ২০০২ - মেওয়াতি ঘরানা পুরস্কার
  • ২০০৬ - আদিত্য বিড়লা কলা কিরণ পুরস্কার[১]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "DEVAKI PANDIT"। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০২০ 
  2. "Devaki Pandit"। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০২০