দুখাই মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত একটি বাংলাদেশী বিপর্যয়-নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। এটি ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়। ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর শতাব্দির প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদশের উপকূলীয় এলাকায় দশ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এই মর্মান্তিক কাহিনী নিয়ে মোরশেদুল ইসলাম নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রটি। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-সংগ্রাম দেখানো হয়েছে। অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ।[১]

দুখাই
ডিভিডি প্রচ্ছদ
পরিচালকমোরশেদুল ইসলাম
প্রযোজকনবুয়োশি মুতো
কেনিচিরো সাওয়া
মারি আইওয়াতা
মোরশেদুল ইসলাম
রচয়িতামোরশেদুল ইসলাম
কাহিনিকারমোরশেদুল ইসলাম
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারপুলক গুপ্ত
চিত্রগ্রাহকএমএ মোবিন
সম্পাদকসাইদুল আনাম টুটুল
মুক্তি
  • ২২ আগস্ট ১৯৯৭ (1997-08-22)
স্থিতিকাল১২৮ মিনিট
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা

কাহিনি সংক্ষেপ সম্পাদনা

দুখাই হলো এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাদের পরিবারের ছয়জন সদস্য। দুখাই সবচেয়ে বড় এবং তারা পদ্মা তীরে বসবাস করে আর বাপ-দাদার পেশা হলো তাঁতী। বংশ পরাম্পরা তারা একই পেশায় জড়িত। পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায় নদী ভাঙ্গনের শব্দে সর্বদাই ভয় আর আতঙ্ক কাজ করে। তাদের সোনার সংসার। কাজ করে সংসার চালায়। বাড়িতে দুইটি ঘর এবং কাপড় বুনানো দুটি যন্ত্র। নদী ভাংতে ভাংতে বাড়ির নিকটে চলে আসছে। এক বিকেলে তার বাবা বলছে, ‘সর্বনাশা পদ্মার হাত থেকে বাড়িটারা আর টিকিয়ে রাখা গেল না বাবা? এতোগুলো মানুষ লইয়া এহন আমি কই গিয়া খারামু?’ ‍দুখু মিয়া বলছে, ‘ওতো উতলা হইলে চলবে কেমনে, বাজান- আল্লাহ তো আছে? হ... আল্লাহ।

এক অন্ধকারের রাত্রিতে প্রতিবেশীদের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সবাই চিৎকার করে বলছে, ‘ও দুখুর বাপ পোলাপাইন লইয়া বাইর হও, তোমার ঘর ভাইঙ্গা পড়লো।

এরপর অনেক দূরে গিয়ে আবার নতুন করে ঘর বানানো, কর্কশ শুকনা বালুর চরের উপর ফসল ফলানো। এভাবে ধীরে ধীরে সংসার চলতে লাগলো। বোন বড় হয়েছে তাকে বিবাহ দিতে হবে। এভাবেই চলছিল তাদের জীবন। কিন্তু ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর শতাব্দির প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানী হয়। দুখু মিয়ারও তেমনি বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই মারা যায়। দুখু মিয়া একা হয়ে যায়। দীর্ঘদিন না খেয়ে সবার শোক কাটিয়ে এক সময় প্রতিবেশিদের ন্যায় নিজেও একটি ঘর তুলে। ধীরে ধীরে শরীরে চাক-চিক্যতা ফিরে আসে। একটি বিয়ে করে সংসার শুরু করে। এরপর ১৯৭০ এর পর আসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। একটি কন্যা সন্তানের বাবা হলেন দুখু মিয়া, ভালো নাম দুখাই। এবার মেয়ের মাঝেই নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালো কাটছিল তাদের তিনজনের সংসার।

আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ-ঘূণীঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে ১৯৮৫ সালে ২৪ মে। এবারও করুণ মৃত্যু হলো হাজার হাজার মানুষের। দুখু মিয়ার স্ত্রী-সন্তান দুজনেই মারা গেল।

শ্রেষ্ঠাংশে সম্পাদনা

সংগীত সম্পাদনা

এই ছবির সংগীত পরিচালনা করেছিলেন পুলক গুপ্ত।

সম্মাননা সম্পাদনা

এই চলচ্চিত্রটি ২২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া এই চলচ্চিত্রের কলা-কুশলীবৃন্দও বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।[২]

পুরস্কারের নাম বিভাগ মনোনীত ফলাফল
২২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র দুখাই
(প্রযোজক: মোরশেদুল ইসলাম)
বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা আবুল খায়ের বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী নিশি বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ পুরুষ সঙ্গীত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক এমএ মোবিন বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক মহিউদ্দিন ফারুক বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বিজয়ী

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সাদাকালোয় সোনালি দিন"বণিক বার্তা। অক্টোবর ১২, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৮, ২০১৫ 
  2. "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তদের নামের তালিকা (১৯৭৫-২০১২)"fdc.gov.bdবাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা