তেরেসা দে লা পারা

ভেনেজুয়েলীয় ঔপন্যাসিক

তেরেসা দে লা পারা (স্পেনীয়: Teresa de la Parra; জন্ম: ৫ অক্টোবর, ১৮৮৯ -মৃত্যু: ২৩ এপ্রিল, ১৯৩৬) ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট ভেনেজুয়েলীয় ঔপন্যাসিকা। প্যারিসে জন্মকালীন তার নাম ছিল আনা তেরেসা পারা সানোজো। বাবা রাফায়েল পারা হেমাইজ ভেনেজুয়েলীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে বার্লিনে কর্মরত ছিলেন।[১] তার মায়ের নাম ছিল ইসাবেল সানোজো দে পারা।

তেরেসা দে লা পারা
জন্ম(১৮৮৯-১০-০৫)৫ অক্টোবর ১৮৮৯
প্যারিস, ফ্রান্স
মৃত্যু২৩ এপ্রিল ১৯৩৬(1936-04-23) (বয়স ৪৬)
মাদ্রিদ, স্পেন
পেশাঔপন্যাসিক
জাতীয়তাভেনেজুয়েলীয় ভেনেজুয়েলা
সময়কাল১৯২০-১৯৩৬
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিইফিজেনিয়া, মেমোরিয়াজ দে মামা ব্লাঙ্কা

শৈশবকাল সম্পাদনা

পরিবারের প্রথম সন্তান ছিলেন তিনি। তার আরও পাঁচ ভাই ছিল।[১] বিত্তশালী পরিবারের সদস্যরূপে আনা তার শৈশবকাল বাবার সাথে টাজোনে কাটাতেন। বাবার মৃত্যুর পর তার মা স্পেনের গোদেলায় অবস্থিত স্কার্ড গার্টার স্কুলে কন্যাদেরকে অধ্যয়ন করান। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনে অবস্থান করে প্রকৃত শিক্ষালাভ করেন ও সমাজের উঁচু স্তরের উপযোগী তরুণীতে পরিণত হন। ১৯ বছর বয়সে কারাকাসে ফিরে আসেন তিনি।

কর্মজীবন সম্পাদনা

প্যারিসে অবস্থানকালে সামাজিক জীবনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সিমন বলিভারের মৃত্যুর শততমবার্ষিকীতে উজ্জীবিত হয়ে তার জীবনী সম্পর্কে গবেষণা করতে শুরু করেন। কিন্তু যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হবার পর চিকিৎসাধীন থাকলে তার এ পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটে। সুইজারল্যান্ড, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবকাশ যাপন করলেও আরোগ্যলাভ করতে পারেননি। ঐ বছরগুলোয় তার দার্শনিক ও সাহিত্যিক ভাবনাগুলোর প্রতিফলন ঘটান। এ সময় তিনি আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সুন্দর ভাষায় দীর্ঘ চিঠিপত্র লিখেছেন। এছাড়াও দিনলিপিতে সাহিত্যগত ধ্যান-ধারণাগুলোও প্রতিফলিত হয়েছে।

২৩ এপ্রিল, ১৯৩৬ মাদ্রিদে অবস্থানের সময় তার দেহাবসান ঘটে। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে তার দেহাবশেষ কারাকাসে ফিরিয়ে আনা হয়।

সাহিত্যিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

সমাজে মহিলাদের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর বিপক্ষে অবস্থান করে পড়া ও লেখায় ঘণ্টার পর ঘণ্টার পড়ার টেবিলে পার করে দিতেন তিনি। তার চমকপ্রদ গল্পগুলো এল ইউনিভারসাল সংবাদপত্রে ও দিনলিপিগুলো একচুয়ালিদাদেসে প্রকাশিত হতে থাকে। তার রচিত গল্প 'মামা এক্স' ভেনেজুয়েলার প্রাদেশিক শহরের প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করে। গল্পসহ তার দিনলিপিতে তরুণ মনের বিক্ষুব্ধচিত্তের বিষয় ব্যক্ত হয়েছে। তার প্রথমদিককার বৃহৎ কর্ম হিসেবে এটি লা লেকচুরা সেমানাল সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল।

ইফিজেনিয়া উপন্যাসে এক তরুণীর অসহনীয় পরিবেশের কথা ফুটে উঠেছে। ১৯২৪ সালে উপন্যাসটি প্রকাশের ফলে ভেনেজুয়েলীয় সাহিত্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। ১৯২১ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে তৎকালীন স্বৈরশাসক জুয়ান ভিসেন্তে গোমেজের শাসনামলে উপন্যাসের লেখাগুলো লিখেছেন। উপন্যাসের বেশকিছু চরিত্র ছিল কারাকাসের উচ্চবংশীয় সমাজের যা তিনি ব্যাঙ্গাত্মকভাবে প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আবুইলেতা, তিয়া ক্লারা ও সিজার লিল নৈতিকতা ধারণ করেছেন। অন্যদিকে উচ্চাভিলাষী ও রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত চরিত্রের অধিকারী গ্যাব্রিয়েল ও তাইও পাঞ্চো জনগণকে নৈতিক মুক্তি প্রদান করলেও মহিলাদের বিপক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়।

অর্জনসমূহ সম্পাদনা

১৯২৪ সালে কাসা এডিটোরা ফ্রাঙ্কো আইবেরো আমেরিকানা কর্তৃক প্যারিস থেকে বার্ষিক পুরস্কার লাভ করেন। অবশেষে ইফিজেনিয়া প্রকাশ করতে সক্ষম হন ও ১০,০০০ ফরাসি ফ্রাঙ্ক মূল্যমানের পুরস্কার লাভে সক্ষমতা দেখান। ফরাসি বুদ্ধিজীবী ও পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। ফরাসি ভাষায়ও এটি দ্রুত অনূদিত হয়।

পারা তুখোড় বক্তা হিসেবে ও সফলতা লাভ করেছেন। হাভানা ও বোগোতায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তন্মধ্যে শেষের বক্তব্যটির তাৎপর্য সর্বাধিক। এতে তিনি বিংশ শতাব্দীতে পদার্পণ করে ঔপনিবেশিক আমলে লাতিন আমেরিকার সমাজব্যবস্থায় মহিলাদের ভূমিকা সম্পর্কে নিজস্ব চিন্তাধারা ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mueller, 2012, p.2

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • de la Parra, Teresa (১৯৯৩)। Iphigenia। Austin: University of Texas Press। আইএসবিএন 0-292-71571-4 
  • de la Parra, Teresa (১৯৮৮)। Las Memorias De Mamá Blanca (Spanish ভাষায়)। Coleccion Archivos। আইএসবিএন 84-89666-08-3 
  • Byron, Kristine. "'Books And Bad Company': Reading The Female Plot In Teresa De La Parra's Iphigenia . " Modern Language Quarterly 64.3 (2003): 349-379. Web. 8 Feb. 2015.
  • Caula, Ana Maria. "Struggles for independence: Gender and nation in the work of Teresa de la Parra." UMI Dissertations Publishing (2002): 1-313. Web. 9 February, 2015

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা