এস.এম.আব্দুর রউফ,পি-এইচ-ডি,গবেষক,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া।

০১৭২৯৩১৪১৫৪

সুলতান তৃতীয় সেলিম ও তাঁর  শাসনামলে বিভিন্ন সংস্কারসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর:

তৃতীয় সেলিম, (জন্ম: ডিসেম্বর ২৪, ১6161১, কনস্টান্টিনোপল, অটোমান সাম্রাজ্য [বর্তমানে ইস্তাম্বুল, তুরস্ক]) ২৯ জুলাই, ১৮০৮, কনস্ট্যান্টিনোপল), অটোম্যান সুলতান ১89৮৯ থেকে ১৮০7 সাল পর্যন্ত পশ্চিমাীকরণের একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন এবং যার রাজত্ব বুদ্ধিজীবী বোধ করে এবং ফরাসি বিপ্লব দ্বারা নির্মিত রাজনৈতিক উত্তাপ।

অটোমান সাম্রাজ্য: তৃতীয় সেলিম এবং নিজাম-সিডিড

আঠারো শতকের সংস্কার প্রচেষ্টা শেষ হয়েছিল সেলিম তৃতীয় (শাসিত 1789-1807) এর রাজত্বকালে, প্রায়শই উত্স হিসাবে বিবেচিত।

কবি ও অটোমান শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন দক্ষ সংগীতকার, সেলিম তার আগে অটোমান রাজকুমারদের চেয়ে তাঁর অধিগ্রহণের আগে আরও বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করেছিলেন। পিতা তৃতীয় মুস্তাফা দ্বারা প্রভাবিত (১ (৫–-–৪ সালে রাজ্যপাল) সেলিম সংস্কারের জন্য একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।

সেলিম তাঁর চাচা আবদুলহমিদ প্রথমের (April এপ্রিল, ১89৮৯) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পরে, তিনি সাম্রাজ্যের সম্মুখীন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটাতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সংশোধনকারীদের একটি কমিটি (1792-93) গঠন করেন এবং সম্মিলিতভাবে নিজাম-সিডিড ("নতুন আদেশ") নামে পরিচিত একাধিক নতুন প্রবিধান প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রাদেশিক গভর্নরশিপ, কর আদায় এবং জমির মেয়াদ সংস্কার। তার সামরিক সংস্কারগুলি আরও লক্ষণীয় ছিল: নতুন সামরিক ও নৌ বিদ্যালয়গুলির পাশাপাশি, তিনি ইউরোপীয় লাইনে প্রশিক্ষিত ও সজ্জিত নতুন জঙ্গি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং জব্দকৃত ও বেঁচে থাকা চুরির রাজস্ব দ্বারা এবং মদ, তামাক এবং কফির উপর ট্যাক্সের মাধ্যমে অর্থোপার্জন দিয়েছিলেন। অবশেষে, পশ্চিমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করার জন্য, ইউরোপের প্রধান প্রধান রাজধানীগুলিতে অটোমান দূতাবাসগুলি খোলা হয়েছিল।

অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সময় (17৯২) সিংহাসনে এসেছিলেন সেলিম, অস্ট্রিয়া এবং জেসির (1792) রাশিয়ার সাথে চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য হন। 1798 সালে নেপোলিয়ানের মিশরে আক্রমণের ফলে সেলিম গ্রেট ব্রিটেন এবং রাশিয়ার সাথে জোট বেঁধে যায়। ফরাসিরা মিশর সরিয়ে নেওয়ার পরে (1801), ইউরোপে নেপোলিয়নের সাফল্যে ঝলমলে সেলিম তাকে কেবল সম্রাট (1804) হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে কনস্টান্টিনোপলে নেপোলিয়নের রাষ্ট্রদূত জেনারেল সাবাসতিয়ানের প্রভাবে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ (1806) ঘোষণা করেছিলেন এবং গ্রেট ব্রিটেন.

সেলিমের পুনর্গঠন এবং ফ্রান্সের ক্রমবর্ধমান প্রভাব জানিসারিদের রক্ষণশীল জোট, উলামা (ধর্মীয় শিক্ষার পুরুষ) এবং অন্যরা এই সংস্কার দ্বারা বিরূপ প্রভাবিত হয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।

অন্যদিকে সেলিমের ব্যবস্থা কার্যকর করার দৃ the় সংকল্পের অভাব ছিল। ১৮০৫ সালে, তিনি যখন বলকান প্রদেশগুলিতে সেনা পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, জেনিসারিরা এডিরনে (থ্র্যাসিয়ান তুরস্কে) বিদ্রোহ করেছিল এবং অয়ন (স্থানীয় উল্লেখযোগ্য) দ্বারা যোগ দিয়েছিল, যারা এ পর্যন্ত সুলতানকে সমর্থন করেছিল। সেলিম পুনর্গঠন বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর সংস্কারবাদী উপদেষ্টাদের বরখাস্ত করেছিলেন।

শেষ অবধি, ১৮০7 সালে ইয়ামাকের এক বিদ্রোহ (সহায়তাকারী শুল্ক) সেলিমকে নিজাম-সিডিড সংস্কার বাতিল করতে বাধ্য করে এবং তার কারাগারে সমাপ্ত হয়। পরবর্তী মাসের বিভ্রান্তির পরে, সংস্কারপন্থীরা সেলাককে পুনরুদ্ধার করার জন্য কনস্টান্টিনোপল অভিযান চালিয়ে রুসুকের প্যাসা (বর্তমানে রসে, বুলগের) কাছাকাছি সমাবেশ করেছিলেন। বায়রাকদার শহরটি দখল করেছিলেন, কিন্তু এর মধ্যেই তার উত্তরাধিকারী মোস্তফা চতুর্থের আদেশে সেলিমকে শ্বাসরোধ করা হয়েছিল।

তৃতীয় সেলিম সম্পাদনা

সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় সেলিম ১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ ভাতিজা তৃতীয় সেলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

তৃতীয় সেলিম এর সংস্কারসমূহ সম্পাদনা

তৃতীয় সেলিম চিলেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি। তবে তিনি ইউরোপীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি বিভিন্নমুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন।

১. তিনি উযীরে আযমের ক্ষমতা হ্রাস করে উযীর পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।

২. তৃতীয় সেলিম ফ্রান্সের সৈন্যবাহিনীর অনুকরনে উসমানী সৈন্যদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ফ্রান্সের বহু সামরিক অফিসারকে কাজে লাগান। তিনি ফ্রান্স থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ

করেন। সৈন্যদের জন্য সামরিক পোষাক পরিধান এবং নিয়মিত কুচকাওয়াজ বাধ্যতামূলক করেন।

৩. রাশিয়াতে ট্রেনিং প্রাপ্ত উমার পাশাকেও তিনি সেনাবাহিনীর সংস্কারের কাজে লাগান।

৪. তিনি সামন্ত প্রথার বিলোপ সাধন করেন।

৫. তিনি ইউরোপের অনুকরণে বিভিন্ন বিষয় পড়াবার ব্যবস্থা করেন। ইউরোপীয় রাজনীতি, কুটনীতি, সমর নীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান হাছিলের জন্য তিনি বহু তরুণকে লন্ডন, প্যারিস, ভিয়েনা এবং বার্লিন পাঠান। তবে ইউরোপীয় ধাঁচে সংস্কার সাধন করতে গিয়ে তিনি ইসলামী শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

৬.  রণাংগনে তৃতীয় সেলিম ১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের পূর্ব ইউরোপীয় প্রদেশগুলো আক্রমণ করে। উসমানী সৈন্যগণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সম্পাদনা

৭. ১৭৯১ খৃষ্টাব্দে সিস্টোভা সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ক্রোশিয়াসহ কিছু এলাকা অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে খিলাফাত বাকি এলাকাগুলোর ওপর দখল বহাল রাখতে সক্ষম হয়।

৮. 'নিজাম ই জাদিদ'   'নিজাম ই জাদিদ' হলো অটোমান সুলতান তৃতীয় সেলিমের কর্তিক নবগঠিত একটি আধুনিক সংস্কারমুলক সামরিক বাহিনী।

সুলতান তৃতীয় সেলিম ১৭৮৯ থেকে ১৮০৭ সালে অদক্ষ এবং অপ্রচলিত সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীকে প্রতিস্থাপনের জন্য "নিজাম-ই সেদিদ" (নতুন আদেশ) সেনাবাহিনী গঠন করেন। পুরানো ব্যবস্থাটি জেনিসারির উপর নির্ভরশীল, যারা তাদের সামরিক কার্যকারিতা অনেকাংশে হারিয়েছিল। সেলিম পশ্চিমা সামরিক ফর্মগুলো ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করতেন।

এটি একটি নতুন সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয়বহুল হবে, তাই একটি নতুন কোষাগার ('ইরাদ-ই সেদিদ') প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে বন্দরে এখন আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি দক্ষ, ইউরোপীয়-প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী ছিল। যদিও পশ্চিমা সেনাবাহিনী দশ থেকে পঞ্চাশ গুণ বড় ছিল এমন এক যুগে এর সৈন্য ছিল ১০,০০০ এরও কম।

অধিকন্তু সুলতান সুপ্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক শক্তিকে বিপর্যস্ত করে তুলছিলেন। ফলস্বরূপ গাজা এবং রোসেটাতে নেপোলিয়নের অভিযাত্রী বাহিনীর বিরুদ্ধে এর ব্যবহার ছাড়াও এটি খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৮০৭ সালে সেলিমকে উৎখাত করার সাথে সাথে প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান দ্বারা নতুন সেনাবাহিনী দ্রবীভূত করা হয়েছিল, কিন্তু এটি ১৯ শতকের পরে তৈরি নতুন উসমানীয় সেনাবাহিনীর মডেল হয়ে ওঠে।

তৃতীয় সেলিম এর সময় উসমানী সম্রাজ্য যেভাবে যুদ্ধে জড়ায়

রাশিয়ার জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন উসমানী খিলাফাতের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের স্বপ্ন দেখছিলেন। তিনি খিলাফাতের অন্তর্গত গ্রীক প্রজাদেরকে বিদ্রোহের উসকানী দিতে থাকেন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত অঞ্চল বুলগেরিয়া এবং বেসারভিয়ার দিকে সামরিক অভিযান চালায়। উসমানী সৈন্যগণও এগিয়ে আসে। বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হতে থাকে।

এই সময় ফ্রান্সে বিপ্লব সংঘটিত হয়। আর ইংল্যান্ডের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাত এবং রাশিয়ার মধ্যে জাসি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইতিমধ্যে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ফ্রান্সের শাসক হন। তিনি উসমানী খিলাফাতের প্রদেশ মিসর, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া দখলের জন্য ওঠে পড়ে লাগেন। যুদ্ধ বেধে যায়।

ফ্রান্সের প্রতিপত্তি বেড়ে যাচ্ছে দেখে ইংল্যান্ড এবার উসমানী খিলাফাতের সমর্থনে এগিয়ে আসে। ফ্রান্স পিছু হটতে বাধ্য হয়।

১৮০২ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতের সাথে আমিন্স চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর ফ্রান্সের সাথে উসমানী খিলাফাতের সম্পর্ক উন্নতি হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।

১৮০৪ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার উসকানিতে সার্বিয়ার খৃষ্টানগণ কারা জর্জ নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। ১৮০৬ খৃষতাব্দে উসমানী সৈন্যগণ যখন রাশিয়ার সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ রত তখন সার্বিয়া স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়।

তৃতীয় সেলিমের হত্যা: সম্পাদনা

তৃতীয় সেলিমের শাসনকালে আভ্যন্তরীণ গোলযোগ সৃষ্টি হয়। তৃতীয় সেলিম সর্বপ্রথম উসমানীয় সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংস্কারের প্রচেষ্টা শুরু করে। কিন্তু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও জানিসারি সদস্যরা সংস্কারে আপত্তি করে। এসবকে কেন্দ্র করে জানিসারিরা বিদ্রোহ করে। সেলিমের প্রচেষ্টায় তাকে শেষপর্যন্ত নিহত হতে হয়। তবে তার উত্তরসূরি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ সংস্কার বিরোধীদের দমন করে সংস্কার সম্পন্ন করেন। দিকে দিকে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ১৮০৭ খৃষ্টাব্দে তিনি পদত্যাগ করে আত্নগোপন করেন। ১৮০৮ খৃষতাব্দে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন।

উপসংহার:

সুলতান তৃতীয় সেলিম ছিলেন অটোমান সম্রাট প্রথম আব্দুল হামিদের ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি ১৭৮৯ সালে তুরস্কের ওসমানীয় সালতানাতে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৮০৭ সাল পযর্ন্ত সাম্রাজ্য শাসন করেন।

তৃতীয় সেলিম
উসমানীয় খিলাফত
আমিরুল মুমিনিন
দুই পবিত্র মসজিদের হেফাজতকারী
দুই ভূমির সুলতান, দুই সাগরের খাগান[১]
 
প্রতিকৃতিটি তৈরি করেছিলেন Konstantin Kapıdağlı। ১৮০৪-১৮০৬
28th Sultan of the Ottoman Empire (Padishah)
রাজত্ব৭ এপ্রিল ১৭৮৯ - ২৯ মে ১৮০৭
পূর্বসূরিপ্রথম আব্দুল হামিদ
উত্তরসূরিচতুর্থ মোস্তফা
জন্ম২৪ ডিসেম্বর ১৭৬১
তোপকাপি প্রাসাদ, কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যু২৮ জুলাই ১৮০৮(1808-07-28) (বয়স ৪৬)
তোপকাপি প্রাসাদ, কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য
সমাধি
লালেলি মসজিদ, ইস্তাম্বুল
সঙ্গী
  • Safizar Kadın
  • Zibifer Kadın
  • Tabısafa Kadın
  • Refet Kadın
  • Nurușems Kadın
  • Hüsnümah Kadın
পূর্ণ নাম
সেলিম বিন মুস্তাফা
রাজবংশউসমানীয়
পিতাতৃতীয় মোস্তফা
মাতাMihrişah Sultan
ধর্মসুন্নি ইসলাম
তুগরা 

সুলতান তৃতীয় সেলিম ছিলেন অটোমান সম্রাট প্রথম আব্দুল হামিদের ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি ১৭৮৯ সালে তুরস্কের ওসমানীয় সালতানাতে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৮০৭ সাল পযর্ন্ত সাম্রাজ্য শাসন করেন। সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Yüzlük - Selīm III Islambol mint"