তালাত মাহমুদ
তালাত মাহমুদ (হিন্দি: तलत महमूद, উর্দু: طلعت محمود; জন্ম: ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৪ - মৃত্যু: ৯ মে, ১৯৯৮) লখনউয়ে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় গজল গায়ক ছিলেন। তাকে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা পুরুষ অ-শাস্ত্রীয় ও অর্ধ-শাস্ত্রীয় গায়করূপে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তিনি ছিলেন একজন সংগীতশিল্পী, যাঁর ছিল সহজাত প্রতিভা, অনুপম সৌন্দর্যচেতনা, ও মাধুর্য। একজন প্লে-ব্যাক কণ্ঠশিল্পী হলেও তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন, যদিও অভিনয়ে তিনি সফলতা পাননি।
তালাত মাহমুদ হিন্দি: तलत महमूदউর্দু: طلعت محمود | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
উপনাম | গজলের রাজা, শাহেনশাহ-ই-গজল |
জন্ম | লখনউ, যুক্ত প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত | ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২৪
মৃত্যু | ৯ মে ১৯৯৮ মুম্বই, ভারত | (বয়স ৭৪)
ধরন | নেপথ্য গায়ক |
পেশা | গায়ক, অভিনেতা |
বাদ্যযন্ত্র | ভোকালিস্ট |
কার্যকাল | ১৯৩৯-১৯৮৬ |
ওয়েবসাইট | তালাতমাহমুদ.নেট[১] |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ (১৯৯২) |
১৯৯২ সালে চলচ্চিত্রে তার সুরের অপূর্ব ব্যবহার ও গজলে সবিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন।[২] ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে তার গানগুলোয় উচ্চ সাহিত্যিক কথকতার প্রয়োগ ছিল ও শিল্প সমজদার ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষত উর্দুভাষী সম্প্রদায়ে তার বেশ কদর ছিল। এমনকি তার বাতিলকৃত গানগুলোও জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়। ঐ সময়ে অন্য কোন গায়ক তার ন্যায় উচ্চশ্রেণীর বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষিতমানের ছিলেন না।
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাঅবিভক্ত ভারতের উত্তর প্রদেশের লখনৌ-এ পিতা মঞ্জুর মাহমুদের সন্তানরূপে তার জন্ম। শৈশবেই তিনি সংগীতের প্রতি তার অভিনিবেশ প্রদর্শন করেন। সমস্ত রাত জেগে তিনি নিবিষ্ট চিত্তে তৎকালীন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় গায়কদের গান শ্রবণ করতেন। তিনি ছিলেন এমন এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান যেখানে সংগীত চর্চাকে উৎসাহিত করা হত না। চলচ্চিত্রে কাজ করবেন না বাড়িতে অবস্থান করবেন এর মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। পিতার আপত্তি সত্ত্বেও তিনি চলচ্চিত্রকেই বেছে নেন। তবে চলচ্চিত্র শিল্পে সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করলে এক যুগ পর তার পরিবার বিষয়টিকে মেনে নেয়।
গায়কজীবন
সম্পাদনা১৯৩০-এর দশকের শেষদিকে লখনৌর মরিস সংগীত মহাবিদ্যালয় (বর্তমান ভাতখণ্ডে সংগীত ইন্সটিটিউট) পণ্ডিত এস.সি.আর. ভাটের নিকট ধ্রুপদী সংগীতে হাতেখড়ি নেন। ১৯৩৯ সালে গজল গায়করূপে সংগীত জীবন শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে ষোল বছর বয়সে অল ইন্ডিয়া রেডিও, লখনৌ-এ দাগ, মির, জিগর গজল গেয়ে তার সংগীতজীবনের সূচনা। তার কণ্ঠস্বর অন্য গায়কদের চেয়ে স্বতন্ত্র প্রকৃতির ছিল। তার এই স্বাতন্ত্র্য লক্ষ্য করে এইচএমভি গ্রুপ ১৯৪১ সালে গানের ডিস্ক বের করার প্রস্তাব দেয়, যাতে ছিল ‘সব দিন সামান নেহি থা’, ‘বান জাঁও গিয়া কিয়া সে কিয়া মেঁ’, ‘ইস্কা তো কুচ ধিয়ান নেহিঁ থা’-র মতো গান।
গজল গায়ক হিসেবে তার সুখ্যাতি লখনৌ ছাড়িয়ে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছে যেটি তার গন্তব্য হয়ে যায়। তখন কলকাতায় ছিলেন বিখ্যাত গজল গায়ক ও সংগীতজ্ঞ উস্তাদ বরকত আলি খান, কে. এল. সাইগল ও এম এ রউফের মতো ব্যক্তি। ১৯৪৪ সালে তার গানের ডিস্ক সর্বাধিক বিক্রীত হিসেবে জায়গা করে নেয়। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতে। তিনি কলকাতা ও বোম্বের ১৬টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে তিনটি চলচ্চিত্র সাফল্য পায়। প্রথম দিকে তিনি ‘তপন কুমার’ নামে অনেক বাংলা গান পরিবেশন করেন। তার গাওয়া কিছু বাংলা গান ছিল সুপার হিট এবং এখনো বেতারে বাজে। তিনি ’৫০ ও ’৬০-্এর দশকে অনেত বিখ্যাত সংগীত পরিচালকের সুরে গান করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—কমল দাশগুপ্ত (দুটি পাখি দুটি তীরে), সুধীন দাশগুপ্ত (এই রিমঝিমঝিম বরষা), রবিন চট্টোপাধ্যায় (চাঁদের এত আলো), হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (এ যদি আকাশ হয়) এবং ভি বালসারা (তুমি সুন্দর যদি নাহি হও)।
১৯৪৯ সালে হিন্দি চলচ্চিত্রে গান করার জন্যে তালাত মাহমুদ বোম্বে চলে যান। আগে থেকেই তার খ্যাতি ছিল ছিল ছড়ানো, বোম্বে যাবার সাথে সাথে অনেক কাজের প্রস্তাব আসতে থাকল। ‘আরজু’ ছায়াছবিতে অনিল বিশ্বাসের পরিচালনায় তার গাওয়া ‘এই দিল মুঝে এইসি জাগাহ্ লে চল যাঁহা কোয়ি না হো’ গানটি তাকে বিশাল সফলতা এনে দেয়। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রভাব
সম্পাদনাসুদীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে প্রায় আটশত গান গেয়েছেন তিনি। তালাত মাহমুদ আধুনিক অর্ধ-শাস্ত্রীয় ও শাস্ত্রীয়বিহীন গজলের প্রকৃত রচয়িতা ছিলেন। ফলে, সমসাময়িক অন্যান্য গজল গায়কদের উপর তার বেশ প্রভাব পড়ে। ১৯৫০-এর দশকে ভারত উপমহাদেশের জনপ্রিয় তিন পুরুষ গায়কের একজনরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বাদ-বাকীরা হচ্ছেন মোহাম্মদ রফি ও মুকেশ। তারা তিনজন উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক সময় দাপটে রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। সহজাত প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল তার গজলের মধ্যে। পঙ্কজ উদাস তাকে সর্বদাই শাহানশাহ-ই-গজল উপাধিতে সম্বোধন করতেন।
১৯৫৬ সালে পূর্ব আফ্রিকায় প্রথম ভারতীয় গায়ক হিসেবে বিদেশে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভ্রমণ করেছিলেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ বেশ কিছু দেশে যান।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। নভেম্বর ১৫, ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২১, ২০১৫।