তারাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
তারাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (টি.এ.পি.এস.) ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পালঘরের তারাপুরে অবস্থিত। এটি ভারতে নির্মিত প্রথম বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।[১]
তারাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র | |
---|---|
দেশ | ভারত |
অবস্থান | তারাপুর, মহারাষ্ট্র |
স্থানাঙ্ক | ১৯°৪৯′৪৪.৩৩″ উত্তর ৭২°৩৯′৪০.৩৪″ পূর্ব / ১৯.৮২৮৯৮০৬° উত্তর ৭২.৬৬১২০৫৬° পূর্ব |
অবস্থা | সক্রিয় |
নির্মাণ শুরু | ১৯৬১ |
কমিশনের তারিখ | ২৮ অক্টোবর ১৯৬৯ |
মালিক | ভারতীয় পারমাণবিক শক্তি নিগম |
পরিচালক | ভারতের পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন |
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র | |
চুল্লির ধরন | ২ × বিডব্লিউআর ২ × পিএইচডাব্লুআর |
বিদ্যুৎ উৎপাদন | |
কর্মক্ষম একক | ২ × ১৬০ মেগাওয়াট ২ × ৫৪০ মেগাওয়াট |
নামফলক ধারণক্ষমতা | ১৪০০ মেগাওয়াট |
Capacity factor | ৩৯.৪% |
Annual net output | ৪,৮২৯ GW·h |
ইতিহাস
সম্পাদনাতারাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর মধ্যে ১৯৬৩ সালের সেকশন ১২৩ চুক্তির আওতায় দুটি ফুটন্ত জল চুল্লী (বিডাব্লুআর) ইউনিট দিয়ে প্রাথমিকভাবে নির্মিত হয়। এটি জিই এবং বেকটেল দ্বারা পরমাণু শক্তি বিভাগের জন্য নির্মিত হয়। ১৯৬৯ সালের ২৮ অক্টোবর বাণিজ্যিক ভাবে ১ নং এবং ২ নং ইউনিট পরিচালনা শুরু হয়, যেখানে প্রতিটি ইউনিটের প্রাথমিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২১০ মেগাওয়াট। পরে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস করে ১৬০ মেগাওয়াট করা হয়।[২] এশিয়াতে এই ধরনের চুল্লীর ব্যবহার প্রথম তারাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শুরু হয়।
৫৪০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত দুটি চাপযুক্ত ভারী জলের চুল্লী (পিএইচডাব্লুআর) বিএইচইএল, এলএন্ডটি এবং গ্যামন ইন্ডিয়া দ্বারা নির্মিত হয়, সময়সূচীর সাত মাস আগে এবং মূল আনুমানিক ব্যয়ের মধ্যে। বাণিজ্যিক ভাবে ১৮ আগস্ট ২০০৬ সালে ৩ নং ইউনিটের এবং ১২ ই সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালে ৪ নং ইউনিটের পরিচালনা শুরু করা হয়।[২]
এই সুবিধাটি এনপিসিআইএল (ভারতের পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন) দ্বারা পরিচালিত হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার কর্মীরা টি. এ. পি. এস. কলোনী নামে একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে বাস করেন, যা নিকটতম রেল স্টেশন বোয়সর থেকে পনের মিনিটের দূরে অবস্থিত। আবাসিক কমপ্লেটটিও বেকটেল দ্বারা ভারতীয় এবং আমেরিকান উভয় কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা হয়। এ কারণে, আবাসিক কমপ্লেক্সটির বেশিরভাগ ছোট্ট শহরের চেহারা নেয়, ঝরঝরে ফুটপাথ, প্রশস্ত বাড়িঘর, টেনিস কোর্ট'সহ একটি ক্লাব, সুইমিং পুল, একটি কমিশারি ইত্যাদি রয়েছে। মূল আমেরিকান বাসিন্দারা দীর্ঘকাল চলে যাওয়ার পরেও উপনিবেশটি সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে ।
১৯৭৪ সালে ভারত স্মাইলিং বুদ্ধের পরিচালনার মাধ্যমে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে। এর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চুক্তি অনুযায়ী সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরবরাহের থেকে বিরত থাকে। টিএপিএস-এর জন্য পারমাণবিক জ্বালানী পরবর্তীতে আইএইএর নিরাপত্তা রক্ষার অধীনে ফ্রান্স, চীন এবং রাশিয়া থেকে সরবরাহ করা হয়।[৩]
আবাসিক উপনিবেশে এখন পারমাণবিক শক্তি শিক্ষা সমিতি (এইইএস) এর অধীনে পরিচালিত ৩ টি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় রয়েছে। চিনচানিতে স্থানীয় সৈকতটি আবাসিক উপনিবেশ থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার (৪.৩ মাইল) দূরে অবস্থিত।
সুরক্ষা উদ্বেগ
সম্পাদনাতারাপুর ১ নং ও ২ নং ইউনিটের ফুটন্ত জলের চুল্লি (বিডব্লিউআর) ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিপর্যয়ের সাথে জড়িত চুল্লিগুলির অনুরূপ। চুল্লিগুলির বয়স এবং পুরাতন নকশাটি সুরক্ষা উদ্বেগ উত্থাপন করেছে এবং এক স্থানীয় নেতার মতে, এই দুটি চুল্লি ২০১১ সালে ইতিমধ্যে তাদের নকশার জীবন আয়ুর চেয়ে ১৬ বছর বেশি কাজ করেছে।[৪]
২০০৭ সালে, পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রক বোর্ড (এইইআরবি) তারাপুর ১ নং ও ২ নং ইউনিটে ভূমিকম্পের সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলি মূল্যায়ন করে এবং অনেকগুলি ঘাটতির কথা জানায়, এরপরে এনপিসিআইএল সিসমিক সেন্সর স্থাপন করে।[৫] ২০১১ সালে, এআরবি তারাপুরের ভূমিকম্প ও সুনামিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মূল্যায়ন করতে ভারতীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান (আইআইটি) এবং ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের (আইএমডি) বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।[৬] এইআরবি-এর প্রাক্তন পরিচালক এ. গোপালকৃষ্ণন বলেছিলেন যে তারাপুর ১ নং ও ২ নং চুল্লি ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিপর্যয়ের সাথে জড়িত চুল্লীগুলির তুলনায় অনেক বেশি বয়স্ক এবং তাদের তৎক্ষণাৎ বাতিল করা উচিত বলে যুক্তি দিয়েছিলেন।[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ PRIS- Power Reactor Information System
- ↑ ক খ "Plants Under Operation - Nuclear Power Corporation of India Limited"। ২৬ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "Tarapur Atomic Power Station (TAPS)"। Nuclear Threat Initiative। ২০০৩-০৯-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-১৮।
- ↑ O'Halloran, Julian (২০১১-০৪-২৭)। "Fears rise in India of Fukushima-style nuclear disaster"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "Atomic Energy Regulatory Board not quite subatomic"। timesofindia-economictimes। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "AERB committee forms sub-group to carry Tarapur plant audit"। ১৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ Doubts raised on Tarapur nuclear plant’s safety [অকার্যকর সংযোগ]