টেনিদা

বাংলা সাহিত্যের একটি কাল্পনিক চরিত্র

টেনিদা বা টেনি বা ভজহরি মুখার্জি হলো নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র।

টেনিদা
টেনিদা চরিত্র
টেনিদা সমগ্র গ্রন্থের প্রচ্ছদে টেনিদা প্রদর্শিত
“টেনিদা সমগ্র”-এর প্রচ্ছদে টেনিদা
স্রষ্টানারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
চরিত্রায়ণচিন্ময় রায়
প্রকৃত নামভজহরি মুখার্জি
বাসস্থানপটলডাঙা, কলকাতা
উচ্চতা৬ ফুট ২ ইঞ্চি
বন্ধু/অ্যাসিস্ট্যান্টপ্যালারাম
ক্যাবলা
হাবুল
তথ্য
ডাকনামটেনি
ভজা
লিঙ্গপুরুষ
পদবিমুখার্জি
ধর্মহিন্দু ধর্ম
জাতীয়তাভারত ভারতীয়

ব্যক্তিগত জীবনসম্পাদনা

টেনিদা মূলত উত্তর কলকাতার পটলডাঙায় বসবাসরত একটি স্থানীয় চরিত্র। টেনিদার প্রকৃত নাম ভজহরি মুখার্জি। পটলডাঙার আশেপাশে ​​বসবাসরত চার তরুণ ছেলেদের একটি দলের নেতা টেনিদা পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না। সাত বারের চেষ্টাতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন তিনি। টেনিদা বিখ্যাত ছিলেন তার খাঁড়ার মত নাকের জন্যে, গড়ের মাঠে গোরা পেটানোর জন্যে। আর তার বিখ্যাত সংলাপ, "ডি-লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক"। টেনিদা সম্বন্ধে গল্পকথক প্যালারাম বলেছেন, "টেনিদাকে নইলে আমাদের যে একটি দিনও চলে না। যেমন চওড়া বুক - তেমনি চওড়া মন।" "পাড়ার কারও বিপদ-আপদ হলে টেনিদাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের আগে। লোকের উপকারে এক মুহুর্তের জন্য তার ক্লান্তি নেই - মুখে হাসি তার লেগেই আছে। ফুটবলের মাঠে সেরা খেলোয়াড়, ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন। আর গল্পের রাজা। এমন করে গল্প বলতে কেউ জানে না।"

টেনিদা গল্প মূলত দুই ধরনের, (ক) টেনিদা তার তথাকথিত বীরত্বের বানানো গল্প বর্ণনা করেন।[১] (খ) টেনিদা ও প্যালা[২] বা চার তরুণ দলের অত্যধিক উল্লসিত অ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণীয় এবং শেষে রহস্যময় পরিস্থিতি মাধ্যমে সমাধানের গল্প বর্ণনা।[৩] এই সিরিজের ছোটগল্পগুলি ব্যাপকভাবে কলকাতার উপর ভিত্তি করে রচিত।

সাহিত্যেসম্পাদনা

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় টেনিদাকে বেশ কয়েকটি উপন্যাস ও ছোট গল্প এবং একটি নাটকে উপস্থাপিত করেছেন।

টেনিদার গানসম্পাদনা

উপন্যাসসম্পাদনা

টেনিদাকে নিয়ে 'চার মূর্তি' নামে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাস লেখেন যা ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে 'অভ্যুদয় প্রকাশ মন্দির' থেকে গ্রন্থাগারে প্রকাশিত হয়। পরের উপন্যাস 'চার মূর্তির অভিযান' ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে গ্রন্থাগারে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে টেনিদার আসল নাম যে ভজহরি মুখার্জি তা জানা যায়[n ১] এবং তার বিখ্যাত স্লোগান 'ডি-লা-গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক্‌ ইয়াক্‌' এই উপন্যাসেই প্রথম শোনা যায়। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় টেনিদাকে নিয়ে যে সমস্ত উপন্যাস লিখেছেন, সেগুলি হল-

  • চার মূর্তি
  • চার মূর্তির অভিযান
  • কম্বল নিরুদ্দেশ
  • টেনিদা আর সিন্ধুঘোটক
  • ঝাউ-বাংলোর রহস্য

এছাড়াও নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আশা দেবী কলম ধরেছিলেন টেনিদা পাঠকদের অনুরোধে। তার হাত দিয়ে 'টেনিদার অজলাভ' উপন্যাস ও কয়েকটি ছোটগল্পও বেরিয়েছে। পটলা, মুসুরী ইত্যাদি চরিত্র সঙ্গ দিয়েছে টেনিদাকে।[৫]

ছোট গল্পসম্পাদনা

  • একটি ফুটবল ম্যাচ
  • দধীচি, পোকা ও বিশ্বকর্মা
  • খট্টাঙ্গ ও পলান্ন
  • মৎস্য-পুরাণ
  • পেশোয়ার কী আমীর
  • কাক-কাহিনী
  • ক্রিকেট মানে ঝিঁঝিঁ
  • পরের উপকার করিও না
  • চেঙ্গিস আর হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা
  • ঢাউস
  • নিদারুণ প্রতিশোধ
  • তত্ত্বাবধান মানে-জীবে প্রেম
  • দশাননচরিত
  • দি গ্রেট ছাঁটাই
  • ক্যামোফ্লেজ
  • কুট্টিমামার হাতের কাজ
  • সাংঘাতিক
  • বন-ভোজনের ব্যাপার
  • কুট্টিমামার দন্ত কাহিনী
  • প্রভাতসঙ্গীত
  • ভজহরি ফিল্ম কর্পোরেশন
  • চামচিকে আর টিকিট চেকার
  • ব্রহ্মবিকাশের দন্তবিকাশ
  • টিকটিকির ল্যাজ
  • বেয়ারিং ছাঁট
  • কাঁকড়াবিছে
  • হনোলুলুর মাকুদা
  • হালখাতার খাওয়াদাওয়া
  • ঘুঁটেপাড়ার সেই ম্যাচ
  • টেনিদা আর ইয়েতি
  • একাদশীর রাঁচি যাত্রা
  • ন্যাংচাদার হাহাকার
  • ভজগৌরাঙ্গ কথা

নাটিকাসম্পাদনা

টেনিদাকে নিয়ে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় 'পরের উপকার করিও না' নামে একটিমাত্র নাটক রচনা করেছেন। নাটকটি তার 'পরের উপকার করিও না' গল্পের নাট্যরূপ। এই নাটকে টেনিদা তার আসল নাম ভজহরি মুখোপাধ্যায় নামে উপস্থাপিত হয়েছে। নাটকের অন্যান্য চরিত্ররা তাকে টেনিদা নামে না ডেকে ভজাদা নামে সম্বোধিত করেছে।[৬]

অন্যান্য মাধ্যমসম্পাদনা

টেনিদাকে নিয়ে বাংলায় একাধিক কমিক্স তৈরি হয়েছে। অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী এই কমিক্সগুলোতে চিত্রনাট্য ও ছবি উভয়েরই শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। কমিক্সগুলি প্রথমে আনন্দমেলা ও পরে এবেলায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছ।

এর মধ্যে কিছু কাজ আনন্দ পাবলিশার্স বই হিসবে প্রকাশ করেছে " পটলডাঙার টেনিদা" শিরোনামে।

পরবর্তীতে পারুল প্রকাশনীর তরফ থেকে আরো দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে "টেনিদার অভিযান" শিরোনামে।

  • টেনিদার অভিযান ১
  • টেনিদার অভিযান ২ কম্বল নিরুদ্দেশ

চলচ্চিত্রসম্পাদনা

টেনিদা কাহিনী একাধিকবার চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে উমানাথ ভট্টাচার্য পরিচালিত চারমূর্তি সিনেমায় টেনিদার ভূমিকায় অভিনয় করেন চিন্ময় রায়। এটি নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের 'চারমূর্তি' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। ২০১১ সালে চারমূর্তির অভিযান কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয় টেনিদা (চলচ্চিত্র)শুভাশিষ মুখোপাধ্যায় এই ছবিটিতে টেনিদার চরিত্রে অভিনয় করেন। ভবিষ্যতে 'ঝাউ বাংলোর রহস্য' অনুসারে টেনিদার আরো একটি চলচ্চিত্র নির্মান করতে চলেছেন সায়ন্তন ঘোষাল। যার সম্ভাব্য নাম 'টেনিদা অ্যান্ড কোং', এতে টেনিদার ভূমিকায় অভিনয় করবেন কাঞ্চন মল্লিক[৭][৮]

পাদটীকাসম্পাদনা

  1. ভজহরি মুখার্জি--স্বর্ণেন্দু সেন--কুশল মিত্র--কমলেশ ব্যানার্জি--
    নামগুলো শুনে চমকে চমকে উঠছ তো? ভাবছ - এ আবার কারা? হুঁ, হুঁ - ভাববার কথাই বটে। এ হল আমাদের চার মূর্তির ভালো নাম - আগে স্কুলের খাতায় ছিল। এখন কলেজের খাতায়। ভজহরি হচ্ছে আমাদের দুর্দান্ত টেনিদা, স্বর্ণেন্দু হল ঢাকাই হাবুল, কুশল হচ্ছে হতভচ্ছাড়া ক্যাবলা, আর কমলেশ? আন্দাজ করে নাও।
    [৪]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৬)। "টেনিদা আর ইয়েতি"। টেনিদা সমগ্র। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্সআইএসবিএন 81-7215-502-6 
  2. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৬)। "ভজহরি ফিল্ম কর্পোরেশন"। টেনিদা সমগ্র। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন 81-7215-502-6 
  3. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৬)। "ঝাউ-বাংলোর রহস্য"। টেনিদা সমগ্র। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন 81-7215-502-6 
  4. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৬)। "চার মূর্তির অভিযান"। টেনিদা সমগ্র। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ৮৫। আইএসবিএন 81-7215-502-6 
  5. বৃহৎ টেনিদা সংকলন।শৈব্যা প্রকাশন। কলকাতা
  6. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৬)। "পরের উপকার করিও না"। টেনিদা সমগ্র। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ৪৮১-৪৮৮। আইএসবিএন 81-7215-502-6 
  7. https://www.aajkaal.in। "এবার কম্বল খুঁজবেন টেনিদা"https://www.aajkaal.in/ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১০  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  8. 35.190.43.244 http://35.190.43.244/detailNews.php?cID=45&nID=145848&P=1। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১০  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগসম্পাদনা