বন্ধুত্ব

পারস্পরিক সম্পর্ক

বন্ধুত্ব হলো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশেষ সম্পর্ক।[১] আত্মার শক্তিশালী বন্ধন হল বন্ধুত্ব। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ডেটাবেজ গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে মানুষ সুখী হয়।

বন্ধুদের সাথে আড্ডা

স্থায়ী বন্ধুত্বের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে যেমনঃ স্নেহ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, সততা, স্বার্থপরতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, সমবেদনা, একে অপরের সঙ্গ, আস্থা, নিজের যোগ্যতা, অনুভূতি প্রকাশ প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।

বন্ধুত্ব - একে অন্যের সুখে-খুশিতে লাফিয়ে ওঠার; একে অন্যের দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর। মন খুলে কথা বলা, হেসে গড়াগড়ি খাওয়া আর চূড়ান্ত পাগলামি করার একমাত্র আধার এ ‘বন্ধুত্ব’। বন্ধুত্ব কোনো বয়স মেনে হয় না, ছোট-বড় সবাই বন্ধু হতে পারে। তবে বন্ধুত্বের মধ্যে যে জিনিসটা অবশ্যই থাকা চাই তা হল ‘ভালোবাসা’। আত্মার সঙ্গে আত্মার টান থাকতেই হবে।[২]

বন্ধু এ শব্দের মাঝেই সব লুকায়িত - এতে কোন বয়স বাধা নয়। কিশোর বয়সের কোন ছেলে বা মেয়ের সাথে যদি তার চেয়ে বড় কারো সাথে বন্ধুত্ব হয় তবে তা তাকে জ্ঞানের পরিসীমা বাড়াতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তবে তার জন্য প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি বিশেষ যত্ন। অনেক বিষয়ে ছোট্ট বন্ধু বুঝতে বা মানতে দ্বিধা করবে সে জন্য তকে সব সমসাময়িক দিক থেকে বা বর্তমান সময় উপযোগী বিষয় দিয়ে বুঝানো। তাঁর মনে যেন কোন ভয় না থাকে সে বিষয়ে খোলা মেলা আলোচনা করা। এ জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা। ভালো মন্দ সব কিছু খোলামেলা আলোচনা করা, যাতে আগামীর দিন গুলো সুন্দর ও সুখের হয়। আমাদের পিতা মাতা আমাদের সব থেকে আপন বা কাছের মানুষ হলেও অনেক বিষয় আমরা তাদের সাথে বলতে পারিনা। কিন্তু বন্ধুর সাথে অকপটে সব ভালো মন্দ যত খারপ হোক র্নিদ্বিধায় বলা যায়, আর সেটার নামই প্রকৃত বন্ধু।

উন্নয়নমূলক মনোবিজ্ঞানে বন্ধুত্ব সম্পাদনা

 
প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে আনন্দ-দুঃখ ভাগাভাগি (প্রতীকী)

ব্যক্তির মানসিক উন্নয়নের প্রতিনিধিত্বকারী পিতামাতার বন্ধনের পরেই হল বন্ধুত্ব। শৈশবের শেষ এবং পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বন্ধুত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ছেলেবেলার বন্ধুত্ব প্রায়ই খেলনা ভাগাভাগির উপর ভিত্তি করে হয়। একটি ভালো বন্ধুত্ব কিশোর বয়সে স্থাপন করলে পরবর্তী জীবনে তাকে এবং সমাজকে ভালোর দিকে ধাবিত করে।

১৯৭৫ সালে বিগেলো এবং লা গাপিয়া একটি গবেষণায় দেখান যে, একটি ভালো ও স্থায়ী বন্ধু পাওয়ার জন্য শিশুদের ক্রমবর্ধমান জটিল জীবন অতিবাহিত করতে হয়।[৩] গবেষণায় ছয় এবং চৌদ্দ বছর বয়সের ৪৮০ জন শিশুদের একটি নমুনা এ ধরনের মানদণ্ড প্রদান করা হয়। তাদের তথ্যে তারা বন্ধুত্ব উন্নয়নের তিনটি পর্যায় প্রদর্শন করে। প্রথম পর্যায়ে শিশুদের শেয়ারিং কার্যক্রম এবং ভৌগোলিক প্রতিকুলতার ওপর জোর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা জোর গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিশ্বাস, আনুগত্য, এবং প্রতিশ্রুতি ওপর। চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা গুরুত্ব দিয়েছিলেন ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষিত অনুরূপ মনোভাব, মূল্যবোধ ও স্বার্থ এর ওপর। বের্ন্ডটের মতে, ভালো বন্ধুত্বের ফলাফল শিশুরা সামাজিক আচরণ, অধিক অন্তরঙ্গতা, এবং অন্যান্য ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রকাশ করে।অন্যথায়, তারা বন্ধুত্বে অস্থির হয় অধিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য, এবং অন্যান্য নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ করে।[২]

বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস সম্পাদনা

সত্যি কথা বলতে, বন্ধু দিবসের উত্‍পত্তি বা কারণ ঠিক কী তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে তত্‍কালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা অর্থাৎ‍ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, বিশৃঙ্খলা ও হিংস্রতা মানুষের মধ্যে অনেকটাই বন্ধ‍ুর অভাব তৈরি করেছিলো বলে অনেকের অভিমত। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধু দিবস পালন করার ধারণা এসেছিল বলে অনেকে মনে করেন।

এক সূত্র অনুযায়ী, বন্ধু দিবসের শুরু হয়েছিলো অনেক আগে। ১৯১৯ সালে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে কার্ড, ফুল, উপহার বিনিময় করতো। ১৯১০ সালে জয়েস হলের প্রতিষ্ঠিত হলমার্ক কার্ড বন্ধু দিবস পালনের রীতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছিলো।

আবার জানা যায়, ১৯৩৫ সালে আমেরিকার সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। তার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। এরপর থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুদের অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে আমেরিকান কংগ্রেসে ১৯৩৫ সালে আগস্টের প্রথম রোববারকে বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তীতে বন্ধু দিবসের দিন তারিখ বদলানো হয়েছিল। ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই, “World Friendship Crusade” এর প্রতিষ্ঠাতা “Dr. Ramón Artemio Bracho” বন্ধুদের সঙ্গে প্যারাগুয়ের পুয়ের্তো পিনাসকোতে এক নৈশভোজে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সে রাতেই এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা পায় এবং ৩০ জুলাই বিশ্বব্যাপী বন্ধু দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠায়। প্রায় ৫৩ বছর পর, ২০১১ সালের ২৭ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ জুলাইকে “বিশ্ব বন্ধু দিবস” হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

বন্ধু দিবস বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তারিখে পালন করা হয়। তবে এখনও বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগষ্টের প্রথম রোববারই বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আবার কোনো কোনো দেশে ০৮ এপ্রিল বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সংগৃহীত ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Definition for friend"Oxford Dictionaries। Oxford Dictionary Press। ১১ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১২ 
  2. "বন্ধু রচনা | Bondhu Rochona | Friendship Paragraph in Bengali"Gban'S & You (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-০২। ২০২০-১০-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪ 
  3. "'Evaluate the usefulness of Bigelow and La Gaipa's work for understanding children's friendship - IELTS Writing Essay Sample"ielts69.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪