ঝিংগাবাড়ী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা

ঝিংগাবাড়ি ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা বাংলাদেশের সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঝিংগাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত একটি অতি প্রাচীন মাদ্রাসা। প্রচলিত তথ্যমতে ঝিংগাবাড়ি ফাজিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আলিয়া মাদ্রাসা, এটি ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।[১] প্রতিষ্ঠা সাল অনুসারে এটি আলিয়াকওমি মাদ্রাসার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন মাদ্রাসা।[ক] মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম শ্রেণী এটি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হয় এবং ফাজিল শ্রেণী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত।[২] মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষের নাম মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান, যিনি জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩-এ উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হোন।[৩]

ঝিংগাবাড়ি ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা
মাদ্রাসার লোগো
ধরনএমপিও ভুক্ত
স্থাপিত১ জানুয়ারি ১৮৭৪; ১৫০ বছর আগে (1874-01-01)
প্রতিষ্ঠাতামৌলভি হাবিবুল্লাহ
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া (২০০৬- ২০১৬)
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬- বর্তমান)
অধ্যক্ষমো. হাফিজুর রহমান
মাধ্যমিক অন্তর্ভুক্তিবাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
আনু. ৩০
শিক্ষার্থীআনু. ৮০০
ঠিকানা
মুকিগঞ্জ বাজার
, , ,
শিক্ষাঙ্গনশহুরে
ক্রীড়াক্রিকেট, ফুটবল

ইতিহাস সম্পাদনা

ঝিংগাবাড়ি ফাজিল মাদ্রাসা প্রাথমিকভাবে আলিয়া মাদ্রাসা না কওমি মাদ্রাসা হিসাবে কার্যক্রম শুরু করেছিলো, এই তথ্য ভালোমত পাওয়া যায়না।[খ] তবে এটি আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা উভয় সিলেবাসের সাথে সমন্বয় রেখে পাঠদান করতো। এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেছেন,

মৌলভি হাবিবুল্লাহ ভারতবর্ষের নানাস্থানে ভ্রমণ করে জ্ঞান অর্জন করেছিলো, সেই জ্ঞান থেকেই তিনি সিলেটে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৮৭৪ সালে তিনি এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন মাদ্রাসার প্রধান হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন। এরপর তার অবসর গ্রহণের পর তার দুই সন্তান আব্দুল বারি ও ইবরাহিম আলি মাদ্রাসাটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারা দুইজন মৌলভি আব্দুর রহিম চৌধুরি নামে এক পণ্ডিতকে মাদ্রাসার প্রধান হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর থেকেই মারাসার সুনাম চারিকে ছড়িয়ে পরে।

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, মাদ্রাসায় ধীরে ধীরে দাখিল ও আলিম শ্রেণী চালু করা হয়। সেইসময় মাদ্রাসাটি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হতো। ১৯২৭ সালে মাদ্রাসায় ফাজিল স্তর বা এর সমমান ডিগ্রি চালু করা হয়। এরপরে ১৯৮৯ সালে নদীভাঙনের কবলে পরে মাদ্রাসার অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়, তবে নথিপত্র ও শিক্ষার্থী সরিয়ে নিয়ে এসে বর্তমানের স্থানে পুনরায় মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু করা হয়।

২০০৬ সালের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী আইন, ২০০৬ মোতাবেক আলিয়া মাদ্রাসার ফাযিল (স্নাতক ডিগ্রি)কামিল (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।[৪] তখন এই মাদ্রাসাটিও ইবি অধিভুক্তি লাভ করে। এরপর ২০১৬ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিকরন করার জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলে, এটি সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়।[৫] ২০১৬ সালে মাদ্রাসার ১৪১ তম ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পত্রিকা সাপ্তাহিক অপূর্ব সিলেট পত্রিকার উদ্যোগে মাদ্রাসার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কিত একটি বিশেষ ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়।[৬]

শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনা

ঝিংগাবাড়ি আলিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষাস্তর ইবতেদায়ী থেকে শুরু করে ফাজিল শ্রেণী পর্যন্ত রয়েছে। এছাড়ারাও এই মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম উভয় স্তরে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা বিদ্যমান রয়েছে। এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও এই মাদ্রাসার ফাজিল আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, দাওয়াহ প্রভৃতি বিভাগ চালু আছে। ফাজিল পর্যায়ের ছাত্রদের বিষয়ভিত্তিক গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

টীকা সম্পাদনা

  1. সিলেট দরগাহ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক আতাউল হক জালালাবাদী (উবায়দুল হকের ছেলে) বলেন, " ঝিংগাবাড়ি মাদ্রাসার আগে ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সিলেট ফুলবাড়িয়া আলিয়া মাদ্রাসা এবং হাটহাজারী মাদ্রাসা দেশের প্রথম কওমি মাদ্রাসা নয়, এর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সিলেটের হেমু মাদ্রাসা। আর দেশের বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময়ে কওমি মাদ্রাসা বা মক্তব হিসাবে যাত্রা শুরু করে, পরে ধীরে ধীরে সরকারি অধিভুক্ত আলিয়া মাদ্রাসায় রুপান্তরিত হয়।"
  2. ঝিংগাবাড়ি মাদ্রাসা কওমি কিনা এই প্রসঙ্গে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক ও গবেষক আশরাফ আলি নিজামপুরী বলেন, আমার জানামতে দেশের প্রথম কওমি মাদ্রাসা হাটহাজারী মাদ্রাসা, তবে ঝিংগাবাড়ি মাদ্রাসাকে যদি কওমি মাদ্রাসা ধরা হয়, তাহলে সেটা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কওমি মাদ্রাসা হতে পারে, যেহেতু এটি মক্তব হিসাবে কার্যক্রম শুরু করেছিলো।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বাংলাদেশের প্রথম মাদ্রাসা কোনটি?"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩ 
  2. "ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটি অনুমোদন নোটিশ" (পিডিএফ)ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০২৩ 
  3. Hasan, Maruf (২০২৩-০৫-১৭)। "জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে কানাইঘাট ঝিংগাবাড়ী মাদ্রাসার সাফল্য"দৈনিক জালালাবাদ | Daily Jalalabad (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩ 
  4. "আলিয়া মাদরাসার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ"lekhapora24.net। ২০২১-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৭ 
  5. "মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রত্যাশা"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১০ 
  6. "ঝিংগাবাড়ী ফাজিল মাদরাসার ওয়াজ মাহফিল আজ"কানাইঘাট নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩