জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী

বিপ্লবী নারী।

জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায় (২৫ জানুয়ারি ১৮৮৯ ― ২২ নভেম্বর ১৯৪৫) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা।

জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী
জন্ম২৫ জানুয়ারি ১৮৮৯
মৃত্যু২২ নভেম্বর ১৯৪৫
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)

 ভারত)
পেশারাজনীতিবিদ
পরিচিতির কারণব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন
অপরাধের শাস্তি২ বার কারাবরণ
পিতা-মাতা
  • দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় (পিতা)
  • কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (মাতা)
আত্মীয়প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় (ভাই)

জন্ম ও পরিবার সম্পাদনা

জ্যোতির্ময়ী ১৮৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়। তার পিতার নাম দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন শ্রমিকদরদী সমাজসেবক, দেশকর্মী এবং মা কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা স্নাতক, ডাক্তার, সমাজসেবিকা।[১] জ্যোতির্ময়ী দেবী অবিবাহিতা ছিলেন। তার সহোদরের নাম প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়

সামাজিক অবদান সম্পাদনা

বাঙালি নারী শিক্ষা ক্ষেত্রে জ্যোতির্ময়ী দেবীর অবদান লক্ষণীয়। এম.এ. পাশ করার পর কটকের র‍্যাভেনশ গার্লস কলেজ, বেথুন স্কুল, কলম্বো বুদ্ধিস্ট গার্লস কলেজ, কলিকাতা ব্রাহ্ম স্কুলে অধ্যক্ষা রূপে স্ত্রী শিক্ষা প্রচারে ব্রতী হন। লালা লাজপত রায়ের আমন্ত্রণে যোগ দেন জলন্ধর কন্যা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা হিসেবে। নারীদের রাজনীতি ও দেশসেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি নারী স্বেচ্ছাসেবীকা বাহিনী গঠন করেছিলেন। তিনি অবলা বসু প্রতিষ্ঠিত 'বিদ্যাসাগর বানীভবন' সংগঠনেও সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। নারীমুক্তি, বিধবাবিবাহ এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষাদানের অন্যতম সমর্থক ছিলেন তিনি। প্রবাসী, মডার্ন রিভিউ ইত্যাদি পত্রিকায় রাজনৈতিক আদর্শ ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে লিখতেন। মেদিনীপুরের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট পেডির তীব্র নিন্দা করে মডার্ণ রিভিউ পত্রিকায় Another Crucifixion নামে জ্বালাময়ী প্রবন্ধ লেখেন। বর্ণভেদ প্রথা ও অস্পৃশ্যতা জাতীয় সামাজিক কুপ্রথার তীব্র সমালোচক ছিলেন তিনি। নারীকল্যাণ সংগঠন হিরণ্ময়ী বিদ্যা শিল্পাশ্রম, পুরী বসন্তকুমারী বিদ্যাশ্রম ইত্যাদির সাথেও যুক্ত ছিলেন। সমাজসেবার অভিপ্রায়ে ১৯২৬ সালে তিনি একটি ছাত্র সংস্থা গঠন করেন।[১][২]

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

পিতামাতার স্বদেশপ্রেমে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯২০ সালে কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি নারী-স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠন করেছিলেন। তখন নারীরা প্রকাশ্যে রাজনীতি যেন করতে পারে সেজন্য তিনি মেয়েদের সাথে আলোচনা করতেন ও দলে যুক্ত করতেন। ১৯৩০ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে যুক্ত হন। এর জন্য তিনি কাজ গড়ে তুলেছেন শহরে ও গ্রামে। ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঊর্মিলা দেবীর নেতৃতে গঠিত নারী সত্যাগ্রহ সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। ১৯৪৫ সালে ২১ নভেম্বর 'আজাদ-হিন্দ ফৌজ' -এর শোভাযাত্রা করেন। ১৯৩০ সালে লবণ আইন অমান্য করে গঠন করেন 'নারী সত্যাগ্রহ'। তার বিপ্লবী কাজের জন্য দু'বার কারাবরণ করতে হয়েছে। ১৯৩১ সালের ২৬ জানুয়ারি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে চার্লস টেগার্টের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি আহত হন।[১]

মৃত্যু সম্পাদনা

জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী ২১ নভেম্বর ১৯৪৫ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজ শোভযাত্রায় পুলিশের আক্রমণে নিহত শহীদ রামেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে শ্মশানের দিকে শোভাযাত্রা করে অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন মিলিটারি ট্রাক এসে পেছনে ধাক্কা দেয়। তিনি প্রথমে আহত হন এবং তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১][৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. কমলা দাশগুপ্ত (জানুয়ারি ২০১৫)। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী, অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৯কলকাতা: র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন। পৃষ্ঠা ৭২-৭৪। আইএসবিএন 978-81-85459-82-0 
  2. সমবারু চন্দ্র মহন্ত (২০১২)। "গঙ্গোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময়ী"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. রায়, প্রকাশ (২০২১)। বিস্মৃত বিপ্লবী। চেন্নাই: নোশনপ্রেস চেন্নাই তামিলনাড়ুআইএসবিএন 978-1-63873-248-8