জিয়াউর রহমানের মাজার

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি

জিয়াউর রহমানের মাজার কমপ্লেক্স হলো বাংলাদেশের ঢাকা শহরের শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য প্রকৌশল স্মৃতিস্তম্ভ।[১] এই স্মৃতিস্তম্ভে বাংলাদেশের ৭ম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর রয়েছে, যিনি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের জন্য জনপ্রিয়।[২] তিনি ২০শ শতাব্দীর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের একজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন। জিবিবি লিমিটেড বাশাত আর্কিটেক্টস ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পরামর্শে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত করে যার নির্মাণ গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের অধীনে কার্যকর হয়।[৩][৪]

জিয়াউর রহমানের মাজার

ইতিহাস সম্পাদনা

জিয়াউর রহমানের মাজার প্রায়ই জিয়া উদ্যান নামে পরিচিত। জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি[৫] তিনি সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ও পরে রাজনীতিবিদ হন। তিনি ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ তারিখে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন, ৩০ মে ১৯৮১ তারিখে চট্টগ্রামে বাংলাদেশী সেনা সদস্যগণ তাকে হত্যা করে।[৬] বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নগরীতে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহীরা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে হামলা চালালে স্থানীয় সময় ৪:৩০ টায় রাষ্ট্রপতি জিয়া মারা যান বলে ধারণা করা হয়। বাইরে কী ঘটছে তা দেখার জন্য তিনি তার ঘরের দরজা খুললে সাব-মেশিনগানের বুলেটে তিনি নিহত হন বলে জানা যায়। একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা, রাষ্ট্রপতিকে পাহারা দেওয়া একজন কর্মকর্তা ও একজন হামলাকারীসহ আটজন বন্দুকধারীর গুলিতে মারা যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।[৭] পরে তার কবর চট্টগ্রাম থেকে সংসদ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়।[৮]

অবস্থান সম্পাদনা

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার কমপ্লেক্স চন্দ্রিমা উদ্যানে অবস্থিত, যা জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তরে ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের পূর্বে অবস্থিত।[৯] কবরটি স্থানান্তরের পর চন্দ্রিমা উদ্যান জিয়া উদ্যানে পরিণত হয়।

গঠন সম্পাদনা

 
জিয়াউর রহমানের কবর

মাজার কমপ্লেক্সের সম্পূর্ণ কাঠামো ৭৪ একর যা ৭টি অংশে বিভক্ত;

সমাধি সম্পাদনা

কমপ্লেক্সটির কেন্দ্র হলো জেনারেল জিয়াউর রহমানের কবর, এই সমাধিটির প্রস্থ ৩০ ফুট, যা কালো ও সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে বৃত্তাকারভাবে গঠিত। সমাধির চারপাশে খোদাই করা আরবি লেখা সহ চারটি দেয়াল রয়েছে, যা সমাধির ছাদ (কাঁচ ও ইস্পাতের) সমুন্নত রেখেছে।

সংযোগ সেতু সম্পাদনা

 
প্রধান সংযোগ সেতু

সংযোগ সেতু হলো মাজার কমপ্লেক্সের প্রধান প্রবেশপথ, এটি একটি রংধনু আকৃতির ঝুলন্ত সেতু, যা কমপ্লেক্সের ঠিক মাঝখানে নির্মিত। সেতুর উপরিভাগে কাঁচের মার্বেল খোদাই করা আছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তরের পাশ থেকে আরেকটি সেতু দেখতে পাওয়া যায়।

মেমোরিয়াল হল সম্পাদনা

 
ছাত্তার

মেমোরিয়াল হলটি কমপ্লেক্সের শেষ প্রান্তে অবস্থিত, যা একটি দ্বিতল ভবন। উপরের তলায় একটি মসজিদ ও নিচের তলায় বিশ্রামাগার, সংরক্ষণাগার লাইব্রেরি ও শতাধিক ব্যক্তি বসার জন্য সেমিনার হল রয়েছে।

পশ্চিম চত্বর সম্পাদনা

চন্দ্রিমা উদ্যানে দুটি চত্বর রয়েছে। পশ্চিম চত্বরটি উদ্যানের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। চত্বরের একটিতে একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে।

পূর্ব চত্বর সম্পাদনা

 
ক্রিসেন্ট লেক

চন্দ্রিমা উদ্যানে দুটি চত্ত্বর রয়েছে। পশ্চিম চত্বর উদ্যানটির পশ্চিম পাশে অবস্থিত।

ক্রিসেন্ট লেক সম্পাদনা

ক্রিসেন্ট লেক একটি ১৮০ ডিগ্রী প্রটেক্টর লেকের মত। একপাশে সিঁড়ি সহ গভীর নীল জল দেখতে পাওয়া যায়।

ঝর্ণা সম্পাদনা

 
লেকের ফোয়ারা

লেকটিতে দুটি ফোয়ারা আছে, দুটিই মূল সংযোগ সেতুর পাশে অবস্থিত। এগুলো সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাতে জ্বলে উঠতো। ঝর্ণাগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রঙিন আলো রয়েছে।

বিতর্ক সম্পাদনা

২০১৮ সালে গৃহায়ন মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন যে লুই কানের সংসদ এলাকার মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার বর্তমান স্থান থেকে কমপ্লেক্সটি স্থানান্তর করবে। মাজার কমপ্লেক্স স্থানান্তরের খবরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আল্টিমেটাম দেয়।[৮] ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হক দাবি করেন যে সমাধিটিতে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই। তিনি মাজার কমপ্লেক্স অপসারণেরও ঘোষণা দেন।[১০]

ধ্বংসপ্রবণতা সম্পাদনা

২৯ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে একদল অজ্ঞাত লোক মাজার কমপ্লেক্সে ভাংচুর চালায়। ঘটনার পর মাজার কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ছয় পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শামসুন নাহার (২০১২)। "শেরেবাংলা নগর থানা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. "High Court rules on 'historical truth'"। ১২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  3. "Zia_Uddan_Museum"www.bashat.com.bd। ২১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  4. "Public Works Department"pwd.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  5. "THE BANGABHABAN : The President House of Bangladesh"। ২০১৩-০৬-০৫। ৫ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  6. "Zia's death anniversary being observed"Prothom Alo (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  7. "1981: Bangladeshi president assassinated" (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৮১-০৫-৩০। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  8. "Removal of Zia's grave from parliament complex will ignite a civil war in Bangladesh, BNP warns"। ২৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  9. "Chandrima Udyan turns into a den of wrongdoers"Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০২-২২। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  10. "All illegal structures, including Ziaur Rahman's mausoleum, to be removed from parliament premises: Mozammel"Tbsnews.net। ২৬ আগস্ট ২০২১। ২৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২২ 
  11. "Unidentified miscreants vandalise Ziaur Rahman's mausoleum"Bdnews24.com। ৩০ এপ্রিল ২০১৫। ১৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২২