চিন্তামণি কর

ভারতীয় ভাস্কর

চিন্তামণি কর (ইংরেজি: Chintamoni Kar; জন্ম : ১৯ এপ্রিল , ১৯১৫ – মৃত্যু: ৩ অক্টোবর ,২০০৫) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী। [১] ভারত এবং ফরাসি সরকারের কাছ থেকে তিনি অসামরিক পুরষ্কারে ভূষিত হন।[২] গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে ১৯৪৮ অলিম্পিকে তিনি শিল্প বিভাগে রূপো জেতেন।[৩]

চিন্তামণি কর
চিন্তামণি কর
জন্ম১৯ এপ্রিল, ১৯১৫
মৃত্যু৩ অক্টোবর, ২০০৫ (বয়স ৯০)
পেশাবিশিষ্ট ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীআমিনা আহমেদ কর
পিতা-মাতাভূপতিনাথ কর (পিতা) সরমা দেবী(মাতা)
পুরস্কারপদ্মভূষণ,দেশিকোত্তম

ব্যক্তিগত জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

চিন্তামণি কর ১৯১৫ সালের ১৯ শে এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল কলকাতার ঢাকুরিয়ায় অতিবাহিত হয়। স্কুলের পাঠ কসবার চিত্তরঞ্জন হাই স্কুলে । এরপর [৩] অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট থেকে উনি শিক্ষালাভ করেন। অঙ্কন শিক্ষা তদানীন্তন অধ্যক্ষ ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদারের কাছে। ওড়িশার প্রথাগত মন্দির ভাস্কর্যের শিল্পী গিরিধারী মহাপাত্র ও ভিক্টর জিওভানেল্লির কাছ থেকে উনি ভাস্কর্য শেখেন।[৪] পরে এই দুটি সম্পর্কে উচ্চতর পাঠ নেবার জন্য তিনি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস যান। সেখানে থাকার সময় বিশিষ্ট দন্তচিকিৎসক ডাঃ আর আহমেদের কন্যা চিত্রশিল্পী আমিনা আহমেদকে বিবাহ করেন । যুদ্ধের কারণে তিনি ভারতে ফিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা বিভাগে অধ্যাপক (১৯৪০-৪২), দিল্লি পলিটেকনিক্যাল শিল্প বিভাগে অধ্যাপক ছিলেন (১৯৪৩-৪৫)। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে লণ্ডনে বসবাস শুরু করেন । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সেখানে লণ্ডন রয়াল সোসাইটির সদস্যপদ লাভ করেন । ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্টের অধ্যক্ষ হন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে লণ্ডনে অবস্থিত ঐতিহাসিক ও শিল্পসংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ফরাসি সরকারের আমন্ত্রণে লুভর মিউজিয়ামের চিত্র-সংগ্রহশালায় বৃত্তিপ্রাপ্ত সংরক্ষণবিদ হিসাবে কাজ করেন ।(১৯৬০-৬১)

ভাস্কর্য ও চিত্রকলার নিদর্শন সম্পাদনা

চিন্তামণি করের ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অপূর্ব নিদর্শন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। তার বিখ্যাত ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য 'জাস্টিস'(উচ্চতা ২১০ সে.মি.) ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে নয়াদিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে বসানো হয় । সংসদের সেন্ট্রাল হলে সুভাষচন্দ্র বসুর যে চিত্রটি আছে সেটি তারই আঁকা। ভাস্কর্যের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কলকাতার আউট্রাম ঘাটের কাছে ২৫ শে জানুয়ারি: ১৯৭৬ তারিখে স্থাপিত বঙ্কিমচন্দ্রের মূর্তি। এছাড়া তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী,রাজেন্দ্রপ্রসাদ, স্যার মরিস ওয়্যার, বুদ্ধ ইত্যাদির মূর্তি গড়েছেন। শেষে সারাজীবনের সৃষ্টি ও সংগ্রহ নিয়ে তিনি নরেন্দ্রপুরে আবাসসহ স্টুডিও ও সংগ্রহশালা গড়েছেন । সেটি তিনি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরকে দান করে গেছেন। আর বাসভবনের অংশটি দিয়ে গেছেন ভাস্কর ভবন অ্যাডমিনিস্টেশন ও মেন্টেন্যান্স ট্রাস্টের হাতে।

প্রকাশিত গ্রন্থসমৃহ সম্পাদনা

চিন্তামণি কর লেখক হিসাবেও সুনাম অর্জন করেন । প্রকাশিত গ্রন্থসমৃহ হল -

  • 'ক্লাসিক্যাল ইণ্ডিয়ান স্কাল্পচার'(লণ্ডন হতে প্রকাশিত)(১৯৫০)
  • 'ইণ্ডিয়ান মেটাল স্কাল্পচার'(১৯৫১)
  • 'ফরাসি শিল্প সমাজ'
  • 'সান্নিধ্য (২ টি খণ্ড)
  • 'স্মৃতিচিহ্নিত' ( আত্মচরিত)
  • 'টুকরো ছবির সওগাত' (কাব্যগ্রন্থ)

সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৭৪ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ দিয়ে তাকে সম্মান জানানো হয়। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী 'দেশিকোত্তম' উপাধিতে ভূষিত করে । ওই সালেই তার কাজের উপর একটি তথ্যচিত্র 'গ্রাভেন ইমেজ' গৃহীত হয় । তার উপর আরও একটি তথ্যচিত্র হল 'দি স্কালচার স্ফিংস' । তার ভাস্কর্য রয়াল সোসাইটি অফ বৃটিশ কালচার্সে ও রয়াল একাডেমীতে প্রদর্শিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে লণ্ডন অলিম্পিক উপলক্ষে আয়োজিত 'স্পোর্টস ইন আর্ট' প্রতিযোগিতায় তার ভাস্কর্য 'স্কেটিং দ্য ট্যাগ' রৌপ্যপদক লাভ করে।

মৃত্যু সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী তার জীবৎকালেই স্ত্রী আমিনা আহমেদ ও একমাত্র পুত্রকে হারান আর তিনি ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে র ৩ রা অক্টোবর প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, :দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা,জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ১৩০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Chintamoni Kar passes away"। The Telegraph Calcutta, India। ৩ অক্টোবর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১২ 
  3. "Chintamoni Kar"। Sports Reference LLC। ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১২ 
  4. "Chintamoni Kar"। The Open University। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা