ডাঃ রফিউদ্দিন আহমেদ (ইংরেজি: Dr. Rafiuddin Ahmed) ( জন্ম: - ২৪ ডিসেম্বর,১৮৯০ – মৃত্যু:-৯ ফেব্রুয়ারি,১৯৬৫) ভারতীয় দন্তচিকিৎসক, শিক্ষাব্রতী ও পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তথা ভারতের প্রথম ও প্রাচীন ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের ( ডাঃ আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ এন্ড হসপিটাল)প্রতিষ্ঠাতা। []

রফিউদ্দিন আহমেদ
জন্ম(১৮৯০-১২-২৪)২৪ ডিসেম্বর ১৮৯০
বর্ধনপাড়া,ঢাকা, বৃটিশ ভারত
মৃত্যু৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫(1965-02-09) (বয়স ৭৪)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
শিক্ষাআলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাদন্তচিকিৎসক
কর্মজীবন১৯২০ - ১৯৬৫
পরিচিতির কারণডাঃ আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ এন্ড হসপিটাল, কলকাতা (প্রতিষ্ঠাতা)
দাম্পত্য সঙ্গীআয়েশা
সন্তানআমিনা আহমেদ করসহ চার কন্যা ও এক পুত্র
মেডিকেল কর্মজীবন
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারপদ্মভূষণ (১৯৬৪)

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

রফিউদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৮৯০ সালের ২৪শে ডিসেম্বর অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার বর্ধনপাড়া গ্রামে। মৌলভী সৈফুদ্দিন আহমেদ ও ফৈজুন্নেসার চার পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন রফিউদ্দিন। ছোটবেলা থেকেই তিনি অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। নবাবগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর আলিগড় মহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ বর্তমানে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আই.এসসি পাশ করেন। এই সময় তার পিতৃবিয়োগ হয়। চরম অর্থকষ্টে বাধাপ্রাপ্ত হয় তার উচ্চশিক্ষা। মাত্র ঊনিশ বৎসর বয়সে তিনি সওদাগরি জাহাজের কোম্পানীতে চাকরি নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে প্রথমে লন্ডন এবং পরে আমেরিকা যান। সেখানে নিজের চেষ্টায় ভর্তি হন আমেরিকায় আইওয়া ডেন্টাল কলেজে এবং আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে এক আইসক্রিম পার্লারে কাজ করতে থাকেন। তার পড়াশোনায় মুগ্ধ হন কলেজের অধ্যাপকরা। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে স্মাতক হন তিনি। কাজের সুযোগ আসে ফোরসিথ ডেন্টাল ইনফারমারী ফর চিলড্রেন ইন বোস্টন, ম্যাসাচুসেটসে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিন বছর সেখানেই প্রাকটিস করেন এবং পারদর্শী হন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

দন্তচিকিৎসায়

সম্পাদনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ফিরে আসেন । কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোন সাহায্য পেলেন না। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় তিনি ভারতের তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ডেন্টাল কলেজ ও হসপিটাল স্থাপন করেন মাত্র এগারোজন ছাত্র নিয়ে এবং নিজে দন্তচিকিৎসার উন্নতিসাধনে ব্রতী হন। আমেরিকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনিই কলকাতায় আইসক্রিম পার্লার স্থাপন করেছিলেন এবং এখান থেকে যে অর্থাগম হত তা তার ডেন্টাল কলেজের কাজে লাগাতেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলেজের অধ্যক্ষ পদে ছিলেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তার লেখা ‘হ্যান্ডবুক অব অপারেটিভ ডেন্টিস্ট্রি' । এটি আজও দন্তচিকিৎসার বাইবেল হিসাবে পরিচিত । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি "ইণ্ডিয়ান ডেন্টাল জার্নাল" প্রকাশ করেন । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এর সম্পাদক ছিলেন । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বেঙ্গল ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন' এবং এটি পরবর্তীতে 'ইণ্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন' নামে পরিচিত হয় । ডাঃ আর আহমেদ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর নির্বাচিত সভাপতিও ছিলেন । পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠিত ডেন্টাল কলেজকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মান্যতা দিলে তিনি কলেজটির নামকরণ "ক্যালকাটা ডেন্টাল কলেজ" করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অর্পণ করেন । তার প্রতিষ্ঠিত সেই 'ক্যালকাটা ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল' বর্তমানে 'ডাঃ আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ এন্ড হসপিটাল' নামে সুপরিচিত ।

জনহিতকর ক্রিয়াকলাপে

সম্পাদনা

বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠান ও কর্মকাণ্ডের সাথে ডাঃ রফিউদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ হতে চার বৎসর তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচিত সদস্য ও ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ হতে দু-বৎসর অল্ডারম্যান ছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর তিনি কংগ্রেসের সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন। বিধানচন্দ্র রায়ের আহ্বানে তার মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গের কৃষি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে দেগঙ্গা থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সরকারের পূর্ণমন্ত্রী পদে ছিলেন ।১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত 'হিন্দু-মুসলমান ঐক্য' সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি ।

সম্মাননা

সম্পাদনা

ডাঃ রফিউদ্দিন আহমেদ ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্টারন্যাশনল কলেজ অব ডেন্টিস্টস-এর ফেলো এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে লণ্ডনের রয়াল কলেজ অফ সার্জেন-এর ফেলো নির্বাচিত হন। পেশাগত ও সামাজিক কর্মপ্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে পদ্মভূষণ উপাধি প্রদান করে। তার জন্মদিন স্মরণে রেখে ইণ্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে গত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ হতে তার জন্মদিন ২৪ শে ডিসেম্বর ন্যাশনাল ডেন্টিস্ট্ ডে হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । []

মৃত্যু

সম্পাদনা

ভারতের দন্ত চিকিৎসার জনক ডাঃ রফিউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ৭৪ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন এবং পার্ক সার্কাসের তিন নম্বর গোবরা কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট -২০১৬ পৃষ্ঠা ৬২৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "দন্তচিকিৎসার পথিকৃৎ কে মনে রাখেনি কেউ"। আনন্দবাজার পত্রিকা।  অজানা প্যারামিটার |ওয়েব সাইট= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. "দাদুর কবরের 'মালিকানা' ফিরে পেতে চিঠি নাতনির"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৬