গুর্গেন আস্কারিয়ান

সোভিয়েত-আর্মেনীয় পদার্থবিজ্ঞানী

গুর্গেন আশোতোভিচ আস্কারিয়ান (১৪ ডিসেম্বর ১৯২৮-২ মার্চ ১৯৯৭) একজন সোভিয়েত-আর্মেনীয় পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি আলোর আত্ম-অধিশ্রয়ণ(Self focusing),আলো ও পদার্থের অন্তঃক্রিয়া এবং ঘনীভূত পদার্থে উচ্চশক্তির কণাসমূহের অন্তঃক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য সুপরিচিত।

গুর্গেন আস্কারিয়ান

জীবনী সম্পাদনা

আস্কারিয়ান ১৯২৮ সালে রাশিয়ার মস্কোতে আর্মেনীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। [১] তাঁর বাবা আশোত আস্কারিয়ান সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা করতেন ; অপরদিকে তাঁর মা আস্তগিক আস্কারিয়ান একজন দন্তচিকিৎসক ছিলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তাঁর প্রথম গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল পরমাণুর নিউক্লিয়াস। ১৯৫২ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর তিনি মস্কোর রাসায়নিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের স্নাতক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে আস্কারিয়ান লেবেদেফ পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন ও ১৯৫৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০০টিরও অধিক প্রবন্ধ লিখেছেন। কণা পদার্থবিজ্ঞান, অ্যানিটা(অ্যান্টার্কটিক ক্ষণস্থায়ী অ্যান্টেনা), শব্দবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান সহ পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আস্কারিয়ান তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আলোর আত্ম-অধিশ্রয়ণ আবিষ্কারের জন্য আস্কারিয়ান সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিজ্ঞানবিষয়ক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভের পর থেকে আস্কারিয়ানের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। তার বোন গোহার-ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতায় ভুগতে শুরু করেন। ১৯৯৭ সালের ২ মার্চ গুর্গেন ও গোহার দুইজন-ই মস্কোর নিজ নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁদের উভয়ই হৃৎপিণ্ডের সমস্যায় ভুগছিলেন।

বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন সম্পাদনা

গুর্গেন আস্কারিয়ান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় দ্রুত আহিত হয়, এমন সকল কণা শনাক্ত করার জন্য নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। ধরা যাক, একটি অতি উত্তপ্ত স্বচ্ছ তরল কোনো পাত্রে অবস্থান করছে। এর মধ্যে বিদ্যমান বস্তুকণা নিকটবর্তী পরমাণুগুলোকে আয়নিত করার জন্য শক্তি ব্যয় করছে। তখন কণাটির নিকটস্থ এলাকার চতুর্দিকে বুদবুদ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ঐ এলাকা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।

আস্কারিয়ান এ নিয়ে সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করলেও তারা এর গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর আস্কারিয়ান-ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে অনভিজ্ঞ ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী ডোনাল্ড আর্থার গ্লেজার বুদবুদ প্রকোষ্ঠ তৈরির মাধ্যমে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। এজন্য গ্লেজার নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ঘটনা আস্কারিয়ানকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। তবে হৃত মনোবল পুনরুদ্ধার করে তিনি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে নিমগ্ন হয়ে পড়েন।

এছাড়াও তিনি প্রমাণ করেন, হ্যাড্রন-প্রোটন-ফোটন শাওয়ার (বর্ষণ) কিংবা দ্রুতগতিতে ধাবমান কণাগুলোও শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। আয়নিকরণের ফলে শক্তির যে ক্ষয় ঘটে, তা দ্রুত নিকটবর্তী এলাকার তাপীয় প্রসারণ ঘটায়, যার ফলে সেখানে শব্দতরঙ্গের সৃষ্টি হয়। আস্কারিয়ানের এ আবিষ্কার মহাজাগতিক রশ্মি নিয়ে অধ্যয়নের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। ইতোপূর্বে মহাজাগতিক রশ্মির অণুকণাগুলোকে শনাক্তকারক বা ডিটেক্টরের সঙ্গে সংযুক্ত করে মহাজাগতিক রশ্মি পর্যবেক্ষণ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শব্দতরঙ্গের ধারণা কাজে লাগিয়ে শব্দগ্রাহক ব্যবহার করে কণিকাগুলোর শাওয়ার বা বর্ষণ, এমনকি বিচ্ছিন্ন কণাগুলোও শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

আস্কারিয়ান বলেন,মহাজাগতিক রশ্মিগুলো তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণে সক্ষম। এই তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের সাহায্যে তিনি মহাজাগতিক রশ্মি আবিষ্কারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। [২] ইতোপূর্বে ধারণা করা হত, ইলেকট্রন-পজিট্রন জোড়ায় জোড়ায় থাকে বলে ইলেকট্রন-ফোটন শাওয়ার বা বর্ষণের ফলে কোনোরূপ তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ হয় না। কিন্তু আস্কারিয়ান দেখান, ইলেকট্রন-ফোটন শাওয়ারের ফলে অতিরিক্ত ঋণাত্মক আধান সৃষ্টি হয়। এই অতিরিক্ত ইলেকট্রনগুলো পরমাণু থেকে বের যায়। আবার ধ্বংস প্রক্রিয়ার ফলে (Annihilation Process) ইলেকট্রনের প্রতিপদার্থ পজিট্রনের সংখ্যাও হ্রাস পায়। এর ফলে বস্তুকণায় তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়; আর তড়িৎপ্রবাহের ফলেই তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ হয়।

তবে আলোর আত্ম-অধিশ্রয়ণ বা সেলফ ফোকাসিং আবিষ্কারের জন্য আস্কারিয়ান সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "RADHEP-2000"www.physics.ucla.edu 
  2. 'Excess Negative Charge of an Electron-Photon Shower And Its Coherent Radio Emission;Askaryan GA, Soviet Physics