গদ্দাম পদ্মজা রেড্ডি

গদ্দাম পদ্মজা রেড্ডি (জন্ম ১লা জানুয়ারী ১৯৬৭) হলেন একজন ভারতীয় কুচিপুড়ি নৃত্যাঙ্গনা এবং সঙ্গীত শিক্ষক। তিনি পৌরাণিক বিষয় এবং সমসাময়িক সামাজিক বিষয়গুলিতে ব্যালে পরিবেশন করেন। তিনি একটি কুচিপুড়ি দৃশ্যনৃত্য কাকাতিয়াম-এর নৃত্য পরিচালনা করেছেন। তিনি ২০০৬ সালে কলা রত্ন পুরস্কার, ২০১৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ শিল্প পুরস্কার সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার এবং ২০২২ সালে শিল্পকলা ক্ষেত্রে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন।

গদ্দাম পদ্মজা রেড্ডি
২০১৮ সালে পদ্মজা কাকতীয়ম পরিবেশন করছেন
জন্ম (1967-01-01) ১ জানুয়ারি ১৯৬৭ (বয়স ৫৭)
পামারু, অন্ধ্র প্রদেশ, ভারত
পেশাকুচিপুড়ি নৃত্যাঙ্গনা
সন্তান
আত্মীয়গদ্দাম গঙ্গা রেড্ডি (শ্বশুর)
পুরস্কারপুরস্কার দেখুন

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

পদ্মজা রেড্ডি ১৯৬৭ সালের ১লা জানুয়ারী,[১] অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা জেলার পামাররুতে একটি রেড্ডি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর বাবা-মায়ের নাম জিভি রেড্ডি এবং স্বরাজ্যলক্ষ্মী।[২][৩] তিনি পামাররুতে তাঁর দাদু-ঠাকুমার বাড়িতে বড় হয়েছেন।[৩] পরে তিনি হায়দ্রাবাদে চলে যান।[৪] তাঁর পরিবার ইউসুফগুড়ায় থাকত। তিনি সেন্ট থেরেসা স্কুলে এবং তারপর রেড্ডি কলেজে শিক্ষিত হন। তিনি কলা বিভাগে স্নাতক।[৫]

কুচিপুড়ি নাচ সম্পাদনা

শোভা নাইডুর কাছ থেকে পদ্মজা কুচিপুড়িতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।[১][৬] তিনি সত্যভামা এবং রুদ্রমা দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন।[২][৬] একটি সাক্ষাৎকারে, তিনি বলেছিলেন যে তিনি পৌরাণিক গল্পের পরিবর্তে একটি অনন্য বিষয়, যা সাধারণভাবে ঘটে, তাতে অভিনয় করতে চান। তিনি সমসাময়িক সামাজিক সমস্যা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করে এমন বেশ কয়েকটি কুচিপুড়ি নৃত্য রূপ তৈরি এবং পরিবেশন করেছিলেন, যার মধ্যে কয়েকটি ব্যালে হলো ভ্রুণা হাতিয়ালু, জাগৃতি, বজ্র ভারতী, নমস্তে ইণ্ডিয়া, সিজন অফ ফ্লাওয়ারসভ্রুণা হাতিয়ালুতে নারী ভ্রূণহত্যার (কন্যা শিশুর নির্বাচনী গর্ভপাত) নিন্দা করা হয়েছে, জাগৃতি এইচআইভি/এইডস সম্পর্কিত সমস্যাগুলি অন্বেষণ করে এবং বজ্র ভারতী মানুষের মধ্যে জাতীয় অখণ্ডতার নীতিকে প্রজ্বলিত করার চেষ্টা করে।[৩][৬][৭][৮][৯] সামাজিক সমস্যা ছাড়াও, তিনি পৌরাণিক কাহিনী জড়িত ব্যালেতে অভিনয় করেন। তাঁর কিছু পৌরাণিক কাজের মধ্যে রয়েছে ভামকলাপম, মহিষাশুর মর্দিনী, নবদুর্গালু এবং কাকতীয়ম।[৮][১০]

তিনি "প্রণব ইনস্টিটিউট অফ কুচিপুড়ি ড্যান্স" একাডেমিতে কুচিপুড়ি শেখান, এটি তাঁর ছেলে প্রণবের নামে তৈরি।[১][৬][১১]

কাকতীয়ম সম্পাদনা

 
২০১৮ সালে রুদ্রমা দেবীর চরিত্রে কাকতীয়ম অভিনয় করছেন পদ্মজা

পদ্মজা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তিনি একটি শাস্ত্রীয় নৃত্যরূপ তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা তেলঙ্গানার সংস্কৃতি ভিত্তিক। তিনি কাকতীয়ম নৃত্যের বিকাশ করেছিলেন। এটি কাকতীয় রাজবংশের সময়কালে রামাপ্পা মন্দিরের ইতিহাস এবং বিষয়, ভাস্কর্য ও নৃত্যের রূপগুলির উপর ভিত্তি করে একটি দু-ভাগের কুচিপুড়ি শাস্ত্রীয় দৃশ্যনৃত্য। তিনি বলেছিলেন যে নৃত্যের ধারণাটি রামপ্পা মন্দির, হাজার স্তম্ভের মন্দির এবং ওরাঙ্গাল কেল্লার ওপর তাঁর গবেষণাকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।[১২] তাঁর মতে, এতি কাকতীয়দের একজন সামরিক কমান্ডার জয়পা সেনানীর লেখা একটি বই রত্নাবলীর উপর ভিত্তি করে তৈরি- যেখানে ১৩ শতকের নৃত্যের রূপগুলিকে নথিভুক্ত করা হয়েছে।[৩][৬][৮]

তিনি কাকতীয় রাজবংশের রানী রুদ্রমা দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[১৩] নাচের প্রথম অংশটি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং দ্বিতীয় অংশটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপস্থাপন করা হয়েছিল, দুটিই হায়দ্রাবাদের শিল্পকলা বেদিকায় পরিবেশিত হয়েছিল।[১২][১৪] পদ্মজার মতে, নৃত্য রত্নাবলীতে নথিভুক্ত নৃত্যের ধারণার বিশালতার কারণে ব্যালেটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল এবং "বাজেট ও সম্ভাব্যতা"র কারণে তাদের মধ্যে কয়েকটি বেছে নেওয়া হয়েছিল।[১৫]   পদ্মজা বলেছিলেন যে তিনি বইটি আরও অধ্যয়ন করার এবং ভবিষ্যতের পরিবেশনায় বাকি নৃত্যের ধারণাগুলি উপস্থাপন করার পরিকল্পনা করেছেন, সেগুলি বর্তমানের দুটি অংশের নাটকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।[১৫]

অন্যান্য কাজ সম্পাদনা

পদ্মজা ২০১২ সালে জাতীয় পর্যটন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসাবে কাজ করেছিলেন এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক সম্পর্ক কাউন্সিলের সাধারণ পরিষদের সদস্য ছিলেন।[২][৬]

পুরস্কার সম্পাদনা

পদ্মজাকে বিভিন্ন সম্মান ও পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।[২][৬] সেগুলির মধ্যে কিছু হলো ২০০৫ সালে শ্রী কৃষ্ণদেবরায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি এবং ২০২২ সালে শ্রী পদ্মাবতী মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট।[১][৬][১৬] ২০০৬ সালে, অন্ধ্র প্রদেশ সরকার তাঁকে কলা রত্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিল।[১৭] ২০১৫ সালে কুচিপুড়িতে তাঁর অবদানের জন্য তিনি সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন[১৮] এটি ভারতের শিল্পকলার সর্বোচ্চ পুরস্কার।[১৯] পরে ২০২২ সালে, ভারত সরকার তাঁকে শিল্পকলার ক্ষেত্রে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার[২০] পদ্মশ্রী প্রদান করে।[২১]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

পদ্মজা রেড্ডি ১৯৮৮ সালে গদ্দাম শ্রীনিবাস রেড্ডিকে বিয়ে করেছিলেন,[৪] যিনি প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বিধানসভার সদস্য গদ্দাম গঙ্গা রেড্ডির পুত্র। প্রণব নামে তাদের একটি ছেলে রয়েছে।[৩][৬] তিনি হায়দ্রাবাদের বেগমপেটে থাকেন।[২২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "పద్మజారెడ్డికి నేడు మహిళా వర్సిటీ డాక్టరేట్‌ ప్రదానం"Andhra Jyothi (তেলুগু ভাষায়)। ১১ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  2. "మాజీ ఎంపీ గడ్డం గంగారెడ్డి చిన్నకోడలికి 'పద్మశ్రీ'"Sakshi (তেলুগু ভাষায়)। ২৬ জানুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  3. Revalla, Venkateswarlu (২৭ জানুয়ারি ২০২২)। "ఇది శివుడిచ్చిన వరం"Eenadu (তেলুগু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  4. "తెలంగాణ కోడలైనందుకు గర్వపడుతున్నా.."Namasthe Telangana। ৩ নভেম্বর ২০১৬। ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  5. Anjali (১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। Kuchipudi Dancer Padmaja Reddy Exclusive Interview (Videotape) (তেলুগু ভাষায়)। iDream Telugu Movies। 
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ReferenceA নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. "Governor Biswabhusan lauds SPMVV for responding to challenges"The Hans India (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  8. "Padma Shri - Smt. Gaddam Padmaja Reddy" (পিডিএফ)Government of India। ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  9. Reddy, Nirmala (২৬ ডিসেম্বর ২০২১)। "కాకతీయం: చారిత్రక నృత్య సౌరభం"Sakshi। পৃষ্ঠা 12। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  10. Chakravorty, Reshmi (৬ ডিসেম্বর ২০১৭)। "An honourable moment"Deccan Chronicle (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  11. Gudipoodi, Srihari (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Youngsters take centre stage"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  12. "Kuchipudi dancer Padmaja Reddy is all set to perform at Shilpakala Vedika"Telangana Today (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ ডিসেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  13. Paul, Papri; Palaparthi, Srividya (৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "Kakatiyam, a melange of ethnic dance forms long forgotten in telangana"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২২ 
  14. "'Kakatiyam' dance to be showcased"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ জানুয়ারি ২০১৭। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  15. Chakravorty, Reshmi (২৪ ডিসেম্বর ২০২১)। "Kuchipudi exponent Dr G Padmaja Reddy has taken up the challenge to revive dance forms of the Kakatiya era"Indulge Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  16. "India's higher education second largest in world: Guv Harichandan"The New Indian Express। ১২ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  17. "Hamsa awards are now Kalaratna"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ আগস্ট ২০০৬। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  18. "Sangeet Natak Akademi Award to UoH professor"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ জুলাই ২০১৯। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২২ 
  19. Joseph, Deepu (২ অক্টোবর ২০১৬)। "Meet Telangana's first Sangeeta Nataka Akademi award winner"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  20. Khurana, Suanshu (২৮ এপ্রিল ২০২২)। "Padma Shri awardee removed from govt accommodation as eviction starts"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২২ 
  21. "Padma Awards 2022: Meet awardees conferred in the field of art for their distinguished contribution"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 
  22. "Padma Shri Awardee Dr. Padmaja Reddy joins Green India Challenge"Telangana Today (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ জানুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা