খানজাদা বা খান জাদেহ হল মুসলিম রাজপুত মেভের অন্তর্গত একটি সম্প্রদায় [১] এরা ভারতের উত্তর প্রদেশের আওয়াধ অঞ্চলে বসবাস করে। এই সম্প্রদায়টি রাজস্থানী খানজাদা রাজপুত মেভদের থেকে কিছুটা আলাদা। [২] এরা ওয়ালি-ই-মেওয়াত রাজা নাহের খানের বংশধর এবং জাদৌন গোত্রের একটি উপ-গোষ্ঠী। তারাও মুসলিম রাজপুত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। তারা নিজেদেরকে মুসলমান রাজপুত মেভ বলে উল্লেখ করে। [৩] ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এই সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য পাকিস্তানে চলে যায় ও সেখানে বসতি স্থাপন করে। [৪]

ফার্সি ভাষায় খানজাদা শব্দের অর্থ খানের পুত্র বা রাজা। এর আক্ষরিক অর্থ রাজপুত শব্দের মতই, যার অর্থ সংস্কৃতে রাজার পুত্র। প্রতিটি খানজাদা বংশের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে । তারা কখন ইসলাম গ্রহণ করেছিল সেই সকল তথ্যের কথাও জানা যায়।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে, খানজাদা শব্দের মাধ্যমে সেই সমস্ত রাজপুত গোষ্ঠীকে বোঝানো হত যারা আওধ এবং পার্শ্ববর্তী বেনারস অঞ্চলে বসবাস করত এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। রংহার শব্দের মাধ্যমে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের যেকোনো মুসলিম রাজপুতকে বোঝায়। সেইরকমই খানজাদা শব্দের মাধ্যমে এখন পূর্ব উত্তর প্রদেশের যে কোনো মুসলিম রাজপুত গোষ্ঠীকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাত এই দুই শব্দের মাধ্যমে এই দুই জনজাতির আঞ্চলিক শ্রেনীবিন্যাস হয়। এছাড়াও, গাজীপুর জেলার মুসলিম ভূমিহারও খানজাদা শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। [৫]

উত্তর আওয়াধের দক্ষিণ-পূর্বে, মোটামুটিভাবে বারাবাঙ্কি জেলা থেকে উত্তর পশ্চিমে লখিমপুর খেরি জেলার কিছু স্থান নিয়ে গঠিত একটি অঞ্চল আছে যেখানে খানজাদাদের বসবাস। তারা ইসলাম ধর্মের সমস্ত নিয়মকানুন মেনে কিছু সামান্য ভিন্ন ধর্মীয় আচার ও রীতি অনুসরণ করেছেন। বারাবাঙ্কি জেলার রাইসেনঘাট তহসিলের চৌহান খানজাদা গ্রামের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই বিশেষ সম্প্রদায়টি তাদের প্রতিবেশী পাঠান সম্প্রদায়ের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কি‌ত এবং দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান আন্তঃবিবাহ ছিল। এই অঞ্চলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে শ্রাবস্তীবলরামপুর জেলায় তাদের খামারের আকার হ্রাস পাচ্ছে। অনেকেই এখন প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক। [৬]

খানজাদারা জমিদারি প্রথার বিলুপ্তির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা অনেকেই এখন নিঃস্ব। বিশেষ করে বলরামপুর, গোন্ডা এবং বাহরাইচের লোকেরা এখন কেবল কৃষি শ্রমিক। সম্প্রদায়টির ধার্মিক রীতিনীতিরও কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠরা সুন্নি ও সংখ্যালঘু এবং প্রাক্তন তালুকদার পরিবারগুলি শিয়া মুসলমান। তাদের অনেক গ্রামীন মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসাগুলি উর্দু ভাষার বৃদ্ধিকে সহজতর করেছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Meo Rajput by Sardar Azeemullah Khan Meo"www.jadeed.store (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৩ 
  2. "Meo Rajput by Sardar Azeemullah Khan Meo"www.jadeed.store (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৩ 
  3. "Meo Rajput by Sardar Azeemullah Khan Meo"www.jadeed.store (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৩ 
  4. People of India Uttar Pradesh Volume XLII Part One edited by A Hasan & J C Das pages 19 Manohar publications
  5. pages 40-41 in Muslim Caste in Uttar Pradesh: A Study of Culture Contact by Ghaus Ansari. Ethnographic and Folk Culture Society, 1960
  6. Family, kinship and marriage among Muslims in India / edited by Imtiaz Ahmad আইএসবিএন ০-৮৮৩৮৬-৭৫৭-৫