ক্রায়োনিক্স
ক্রাওনিক্স(cryonics) এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে মৃতদেহ সংরক্ষণ রাখা হয় এবং আশা করা হয় যে, তাদের আবার বাঁচানো যাবে। এটিকে ছদ্মবিজ্ঞান ধরা হয়। এর অনুশীলন কোয়েরি হিসেবে চিহ্নিত। যাকে ক্রায়োনিক প্রিজারভেশনে রাখা হবে, তার দেহের বেশিরভাগ টিস্যু যাতে নষ্ট না হয়, অক্ষত থাকে সেই দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে করে ভবিষ্যতে যদি চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হয় এবং যেহেতু দেহের কোষগুলির তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না সেহেতু হয়ত এই দেহে আবারো হৃদ-ক্রিয়া চালু করা যাবে এবং তাকে নতুন করে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হয়।

ইতিহাস সম্পাদনা
১৯৫৪ সালে শুক্রাণু হিমায়িত করার মাধ্যমে মানব কোষের ক্রাওপ্রিজারভেশন শুরু হয়।[১]মিশরের প্রফেসর রবার্ট এট্টিঙ্গার যখন 'প্রস্পেক্ট অফ ইম্মর্টালিটি' বই লেখেন তখন প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে মানব দেহ ক্রাওপ্রিজারভেশন এর প্রস্তাব দেয়া হয়।[২] ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম এটি শুরু হয়।[৩] ১৯৭৬ সালে এট্টিঙ্গার ক্রাওনিকস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠান ১৯৭০ এর দশকে ৯ টি দেহ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয় অর্থসংকট।
কার্যপ্রণালি সম্পাদনা
জীবিতদের জন্য যেহেতু সরকারি অনুমোদন নেই সেহেতু মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরকে বরফের ভেতরে রাখা হয় কিছুক্ষণ। অঙ্গগুলোকে ভালো রাখতে কৃত্রিমভাবে রক্ত সঞ্চালন করা হয় শরীরের ভেতর দিয়ে। তারপর ক্রায়োপ্রিজারভেশনের জন্য শরীরের ভিতর থেকে রক্ত এবং অন্য জলীয় অংশ যত বেশি পরিমাণ পারা যায় বের করে ফেলা হয়। তারপর রক্ত এবং জলীয় অংশের পরিবর্তে অঙ্গ সংরক্ষণের জন্য যে মেডিকেল গ্রেড এন্টি-ফ্রিজ দ্রবণ ব্যবহার করা হয়, সেটা শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যাতে পরবর্তীতে মৃত শরীর কে ঠাণ্ডা করা হলেও কোষের ভিতরে স্ফটিক তৈরি হতে না পারে, কারণ স্ফটিক তৈরি হলে শরীরের কোষ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর একজন মেডিকেল সার্জন বুকের অংশ উন্মুক্ত করে এবং প্রধান রক্তবাহী নালীগুলো থেকেও রক্ত বের করে ফেলার ব্যবস্থা করেন এবং সেখানে একইভাবে মেডিকেল গ্রেড এন্টি-ফ্রিজ দ্রবণ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যখন মৃতের শরীরের সবগুলো রক্তনালী যথেষ্ট এন্টি-ফ্রিজ দ্রবণে ভর্তি হয়, তখন প্রাথমিক ভাবে ড্রাই আইস (শুষ্ক কার্বন-ডাই-অক্সাইড) ব্যবহার করে প্রাথমিক পর্যায়ে মৃত শরীরের তাপমাত্রা শূন্যের ৭৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে নিয়ে আসা হয়, এরপর শুরু হয় তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে শরীরকে ঠাণ্ডা করার প্রক্রিয়া। এবং প্রতি ঘণ্টায় শরীরের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস করে কমানো হয় এবং এভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ পরে শরীরের তাপমাত্রা -১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিয়ে আসা হয় এবং এই তাপমাত্রায় শরীরকে একটা সিলিন্ডারের মতন চেম্বারে রেখে দেওয়া হয়।
সফলতা সম্পাদনা
ক্রায়োপ্রিজারভেশনে রাখার পর খরগোশের কিডনি পুনরায় সফলভাবে ব্যবহার করা গেছে। নেমাটোড ওয়ার্ম (এক ধরনের কৃমি), এবং কিছু পোকামাকড়ও নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে।
মানুষ বা বড় প্রাণীর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দেহ কে এভাবে এখনো পর্যন্ত সংরক্ষণের পর পুনর্জীবিত করা না গেলেও মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- ভ্রূণ থলি, শুক্রাণু, স্টিম-কোষ, গর্ভাশয় এর টিস্যু, ভ্রুণ, ডিম্বাণু, শুক্রাশয়ের টিস্যু ইত্যাদি কে ক্রায়ো-প্রিজারভেশনে রাখার পর তা সফলভাবে পুনরায় সংযোজন করে কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব হয়েছে। তাই আশা রাখা যায় যে ভবিষ্যতে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নয়ন হলে এক সময় মানুষকেও পুনর্জীবিত করে তোলা সম্ভব হবে বলে ধারণা করছেন একদল বিজ্ঞানি।
সমালোচনা সম্পাদনা
একদল বিজ্ঞানী এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বেশ আলোচনায় আছেন। কিন্তু এর সমালোচনাও কম নয়। বায়োলজিস্ট কেনেথি বি স্টোরি বলেছিলেন, ক্রাওনিক্স অসম্ভব, এটি করা সম্ভব না। কারণ, তারা পদার্থ, রসায়ন ও আনবিক বিজ্ঞানের নীতিগুলোকে ওভারটার্ন করার চেষ্টা করছে। অনেকের মতে এটি প্রতিশ্রুতিমাত্র।
পরিচিতি সম্পাদনা
বৈজ্ঞানিক কথাসাহিত্য বা বৈজ্ঞানিক চলচ্চিত্র বা বৈজ্ঞানিক ফ্যান্টাসি সবগুলোতে ক্রাওনিক বেশ জনপ্রিয়। জার্মানির একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা এর সাথে পরিচিত । যাদের অধিকাংশই টিভি বা ফিল্ম দেখে চিনেছে।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "Fatherhood After Death Has Now Been Proved Possible"। Cedar Rapids Gazette। এপ্রিল ৯, ১৯৫৪।
- ↑ Devlin, Hannah (১৮ নভেম্বর ২০১৬)। "The cryonics dilemma: will deep-frozen bodies be fit for new life?"। The Guardian। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ Perry, R. Michael (অক্টোবর ২০১৪)। "Suspension Failures – Lessons from the Early Days"। ALCOR: Life Extension Foundation। এপ্রিল ১৬, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৯, ২০১৮।