কোচি

দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যের একটি বন্দর শহর

কোচি (মালয়ালম: കൊച്ചി) বা কোচিন দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের কেরল অঙ্গরাজ্যের একটি বন্দর শহর। এটি এর্নাকুলাম জেলার একটি শহর ও পৌরসংস্থাধীন এলাকা। কেরালা রাজ্যের সবচেয়ে বড় এই শহরটি মালাবার উপকূলে আরব সাগরের তীরে অবিস্থিত। শহরটি একটি সরু ভূখণ্ডের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। এটি দৈর্ঘ্যে ১৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থে বহুস্থানে ১ মাইলেরও কম প্রশস্ত। এটি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে সমুদ্র প্রণালী দ্বারা এবং পশ্চিম ঘাট থেকে আগত নদীসমূহের মোহনা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। বর্ষাকালে এই খাঁড়িগুলিতে নৌচালনা করা গেলেও শুষ্ক মৌসুমে এগুলির গভীরতা ২ ফুটেরও কম হয়ে যায়, ফলে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এগুলিতে কোন নৌপরিবহন সম্ভব হয় না। বড় জাহাজগুলিকে শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে নোঙর ফেলতে হয়। কোচি মালাবার উপকূলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এটি কেরালা রাজ্যের নারকেল তেল উৎপাদনের কেন্দ্র। নারকেল থেকে প্রস্তুত বিভিন্ন দ্রব্য এখানকার প্রধান রপ্তানি দ্রব্য। চাল বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। কোচিতে জাহাজ নির্মাণ, করাত কল, মাছ ধরা এবং নারকেলের ছোবড়ার পাটি বানানো এখানকার প্রধান শিল্প। এখানে রয়েছে সরকারী জাহাজ নির্মাণ কারখানা ( কোচিন শিপ ইয়ার্ড )। কেন্দ্রীয় মৎস্য শিকার কেন্দ্র এবং মৎস্য গবেষণাগার কোচিনে অবস্থিত। এছাড়া কোচিতে একটি তৈল শোধনাগার আছে। এই শহরে আঞ্চলিক কাঁচামাল সরবরাহের উপর ভিত্তি করে রপ্তানীযোগ্য নারিকেল তেল, দড়ি ও মশলা শিল্প গড়ে উঠেছে।

কোচি
കൊച്ചി
Cochin
শহর
Kochi montage2.jpg
ডাকনাম: আরব সাগরের রানী[১][২]
কোচি কেরল-এ অবস্থিত
কোচি
কোচি
কেরল, ভারতে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৯°৫৮′ উত্তর ৭৬°১৭′ পূর্ব / ৯.৯৭° উত্তর ৭৬.২৮° পূর্ব / 9.97; 76.28
দেশ ভারত
রাজ্যকেরল
জেলাএর্নাকুলাম
সরকার
 • ধরনপৌর সংস্থা
 • শাসককোচি পৌর সংস্থা
আয়তন
 • মোট৯৪.৮৮ বর্গকিমি (৩৬.৬৩ বর্গমাইল)
উচ্চতা০ মিটার (০ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৬,৭৭,৩৮১
 • জনঘনত্ব৭,১০০/বর্গকিমি (১৮,০০০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • সরকারিমালয়ালম, ইংরেজি
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)

ইতিহাসসম্পাদনা

পর্তুগিজেরা ১৫০০ সালে কোচি দখল করে। এর দুই বছর পরে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা এখানে একটি কারখানা স্থাপন করেন। ১৫০৩ সালে পর্তুগিজের এখানে ভারতে ইউরোপীয়দের প্রথম দুর্গ নির্মাণ করে। ১৫৭৭ সালে জেসুইটরা কোচিতে ভারতীয় অক্ষরে প্রথম ছাপা বই প্রকাশ করে। ১৬৩৪ সালে ইংরেজরা এখানে আসে, কিন্তু ওলন্দাজেরা তাদেরকে বিতাড়িত করে। ওলন্দাজেরা ১৬৬৩ সালে কোচিন দখল করে এবং এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। ব্রিটিশরা ভারত বিজয়ের সময় শহরটি দখল করলেও ওলন্দাজদেরকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত এটি শাসন করতে দেয়। ঐ বছর শহরটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে আসে। ১৯৩৬ সালে কোচিন সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আসে এবং একটি প্রধান বন্দরের মর্যাদা পায়। ১৯৪৭ সালে কোচি স্বাধীন ভারতের অংশে পরিণত হয়।

জনসংখ্যার উপাত্তসম্পাদনা

ভারতের ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুসারে কোচি শহরের জনসংখ্যা হল ৬৭৭,৩৮১ জন।[৪] এর মধ্যে পুরুষ ৪৮.৯৮% এবং নারী ৫১.০২%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৮৬%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৭% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৮৪%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে কোচি এর সাক্ষরতার হার বেশি।

এই শহরের জনসংখ্যার ১০% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

খেলাধূলাসম্পাদনা

জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম (কালুর স্টেডিয়াম) শহরের প্রধান বহুবিধ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। মূলত ফুটবল খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ১৯৯৬ সালে উন্মোচন করা হয়।এর মালিক- বৃহত্তর কোচিন উন্নয়ন সংস্থা। উপরিভাগ হল ঘাসে ঢাকা এবং ধারণ ক্ষমতা হল প্রায় ৭৫,০০০।

পরিবহণসম্পাদনা

কোচি শহরে পরিবহন জন্য, সারা দিন জুড়ে বাস এবং ট্যাক্সি পাওয়া যায়। শহরের একটি খুব দ্রুত এবং কার্যকর বাস পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। প্রধানত প্রাইভেট অপারেটরদের দ্বারা প্রভাবিত, যা রেড-বাস নামে পরিচিত। লাল বাসগুলি নগরীর ভেতরে নো-ফ্রিল ভ্রমণের সুযোগ দেয়, যা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের একটি প্রধান ব্যাকবোন তৈরি করে। তবে লাল-বাসের মধ্যে অযৌক্তিক ড্রাইভিং এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রবণতা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। অযৌক্তিক ড্রাইভিংয়ের জনসাধারণের সমালোচনার সত্ত্বেও, পরিষেবার সময়কাল এবং নির্ভরযোগ্যতা প্রায়শই সমালোচকদের নীরব করে তোলে।

আকাশপথসম্পাদনা

কোচিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শহরের প্রধান ও ভারতের একটি অন্যতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি কোচিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (আইএটিএ: সিওকে, আইসিএও: ভিওসিআই) নামে পরিচিত, যা শহরের প্রায় ২৫ কিমি উত্তরে অবস্থিত। বেশিরভাগ ভারতীয় বিমানবন্দর (যা ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়) থেকে ভিন্ন, কোচি বিমানবন্দরটি কোচিন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডের মালিকানাধীন, একটি জনসাধারণের সীমিত কোম্পানি যার মালিকানাধীন বিপুল সংখ্যক অনাবাসী ভারতীয়, প্রধান ভারতীয় কর্পোরেশন এবং কেরল সরকার (মালিকানাধীন) যা সংখ্যাগরিষ্ঠ সুদের ঝুলিতে)। এভাবে এটি ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল ছাড়া নির্মিত। এশিয়ার বৃহত্তম ৩,৪০০ মিটার রানওয়ে থাকার কারণে বিমানবন্দর যেকোনও ধরনের বিমান অবতরণের জন্য সজ্জিত। বর্তমানে এটি ভারতের চতুর্থ ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সম্প্রতি সম্প্রসারণ মোডে, বিমানটি সুপার জ্যাম্বো এয়ারবাস ৩৮০ অবতরণ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বিমানবন্দরটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশিরভাগ শহরগুলির সাথে সংযুক্ত, প্রায় ১৬ টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ক্যারিয়ার পরিচালনা করছে। এর পাশাপাশি, দেশের সব প্রধান মেট্রো এবং শহরগুলির সাথে সাতটি ঘরোয়া বাহক রয়েছে যা দেশব্যাপী বিমান পরিষেবাগুলি পরিচালনা করে। ১৮ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে, এটি নিবেদিত সৌর উদ্ভিদ উদ্বোধনের সাথে বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ সৌর শক্তিযুক্ত বিমানবন্দর হয়ে ওঠে।

শহরটির দ্বিতীয় বিমানবন্দর, আইএনএস গারুদা, ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা পরিচালিত, যার দক্ষিণ সদর কোচি অবস্থিত। ১১ মে ১৯৫৩ কমিশন, এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাচীনতম অপারেটিং এয়ার স্টেশন। তবে এই বিমানবন্দরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়, এটি কেবল নৌবাহিনী এবং শহরের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়।

রেলপথসম্পাদনা

এরনাকুলম জংশন রেলওয়ে স্টেশন শহরের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। এরনাকুলম জংশন: প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোচি রেলওয়ে স্টেশন নাম এরনাকুলম জংশন। এই রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন কোড ইআরএস। এই রেলওয়ে স্টেশন বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। এই রেলস্টেশনের কাছাকাছি পাওয়া যায় এমন অনেক বাসস্থান সুবিধা রয়েছে। এর পাশাপাশি এই রেলওয়ে স্টেশনটি সকল প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগের সাথে সজ্জিত রয়েছে যেমন ওয়েটিং রুম, রিজার্ভেশন অফিস, মৌলিক খাদ্যে স্টল এবং আমিষ এবং নিরামিষ উভয় খাবারের রিফ্রেশমেন্ট আইটেম।

এরনাকুলম টাউন রেলওয়ে স্টেশন: আরেকটি কিন্তু সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোচি রেলওয়ে স্টেশন নাম এরনাকুলম টাউন রেলওয়ে স্টেশন। এই রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন কোড ইআরএন। এটি কোচি উত্তর রেল স্টেশন নামেও পরিচিত। এটি ঘনিষ্ঠভাবে বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড এবং হোটেল অবস্থিত। এটি কোচি বিমানবন্দর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত, তাই আপনি যদি কোচি বিমানবন্দর থেকেও যাত্রা করেন তবে আপনাকে অনেক কিছু করতে হবে না। এই রেলওয়ে স্টেশনটি খাদ্যাভ্যাসযোগ্য স্টল, ওয়েটিং রুম, রিফ্রেশমেন্ট প্রভৃতি সকল মৌলিক সুবিধাগুলির সাথেও সজ্জিত।

মেট্রোসম্পাদনা

কোচি মেট্রো শহরের আভ্যন্তরীন পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম। কোচি মেট্রো হল ভারতের কেরালা রাজ্যের বৃহত্তম শহর কোচিতে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল। এটি সম্পূর্ণভাবে উড়ালপথে নির্মাণ করা হচ্ছে।নির্মাণ শেষে এই মেট্রো ব্যবস্থার মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৫.৬১২ কিলোমিটার (১৫.৯১৫ মা) কিমি ও মোট স্টেশন সংখ্যা হবে ২৩ টি। ২০১৬ সালে এই মেট্রোর নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণ শেষ হয় ২০১৭তে। ১৭ জুন ২০১৭ সালে কোচি মেট্রোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৯ জুন থেকে জনসাধারণের জন্য মেট্রো ব্যবস্থাটি চালু করা হয়। প্রথম ধাপে কোচি মেট্রো আলুভা থেকে পেট্টাহ পর্যন্ত ১৩.৪ কিমি নির্মাণ করা হয়। এই মেট্রো ব্যবস্থাটি পিপিপি মডেলে গড়ে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি কোচিন শিপইয়ার্ড কোচি মেট্রো রেল লিমিটেডকে ব্যাটারি চালিত নৌকাগুলির একটি সিরিজের প্রথম বিতরণ করেছে। অ্যালুমিনিয়াম ক্যাটামারান হুল নির্মাণ, উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা সহ ওয়াটার মেট্রো বোটগুলি হল জল মেট্রো নৌকা বিতরণের প্রথম প্রয়াস। কোচি ওয়াটার মেট্রো প্রকল্পের অধীনে শিপইয়ার্ডটি ২৩টি নৌকার জন্য একটি অধ্যাদেশের অংশ।

কোচি ওয়াটার মেট্রোসম্পাদনা

কোচি ওয়াটার মেট্রো লিমিটেড এবং কোচি মেট্রো রেল লিমিটেডের এটি প্রথম উদ্যোগ। ম্যানেজিং ডিরেক্টর লোকনাথ বেহেরা এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মেট্রো শহরে আসা বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের এই ওয়াটার মেট্রো নিরাপদ এবং ও কম খরচে পরিষেবা দেবে। ওয়াটার মেট্রোর প্রথম রুট হতে চলেছে হাইকোর্ট থেকে ভাইপিন। দ্বিতীয় রুটটি চালু হবে 27 এপ্রিল ভিত্তিলা থেকে কাক্কানাদ পর্যন্ত। এই ওয়াটার মেট্রোয় ন্যূনতম ভাড়া হতে চলেছে 20 টাকা। কোচি ওয়াটার মেট্রো পরিষেবাতে প্রতি 15 মিনিট অন্তর মেট্রো পাওয়া যাবে। এই ওয়াটার মেট্রোতে ভ্রমণ হবে নিরাপদ। এই ওয়াটার মেট্রোও রোজ টিকিট কাটার ঝামেলাও নেই। সাপ্তাহিক পাশে 12টি ট্রিপ করা যাবে, যার মেয়াদ থাকবে 7 দিন।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. K. C. Sivaramakrishnan (২০০৬)। People's Participation in Urban Governance। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 156। আইএসবিএন 81-8069-326-0 
  2. Ganesh Kumar। Modern General Knowledge। Upkar Prakashan। পৃষ্ঠা 194। আইএসবিএন 81-7482-180-5 
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ernakulam.nic.in নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. "ভারতের ২০১১ সালের আদম শুমারি"। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০২০ 

https://en.wikipedia.org/wiki/Transport_in_Kochi

https://eisamay.com/business/photo-gallery/pm-narendra-modi-to-lunch-first-water-metro-of-india-in-kochi/photoshow/99732085.cms