কালাচাঁদ দরবেশ (আসল নাম 'কালাচাঁদ দাস') ( ১৯৩৪ - ৩ ডিসেম্বর ২০১৭) ছিলেন পশ্চিম বাংলার সম্ভবত দরবেশি গানের শেষ প্রতিষ্ঠিত শিল্পী।[১] সহজিয়া সুফি সম্প্রদায়ের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ছিলেন তিনি। [২]দরবেশি গান পরিবেশন করে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করেন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নজরুল পুরস্কার প্রদান করে। [৩]

কালাচাঁদ দরবেশ
জন্মনামকালাচাঁদ দাস
জন্ম১৯৩৪
বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু৩ ডিসেম্বর ২০১৭(2017-12-03) (বয়স ৮২–৮৩)
গোবিন্দপল্লী ধুপগুড়ি, জলপাইগুড়ি পশ্চিমবঙ্গ ভারত
ধরনলোকসঙ্গীত
পেশাকণ্ঠশিল্পী
বাদ্যযন্ত্রস্বরাজ
কার্যকাল১৯৭৫ – ২০১৩

কালাচাঁদ দাসের জন্ম ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশে। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গ হতে সস্ত্রীক চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। আনন্দচন্দ্র কলেজে পড়াশোনার পর ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজীতে স্নাতক হন এবং ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ধুপগুড়ির স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। একসময় ধূপগুড়ির ঠুনকিরঝাড় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হন। [৪] চল্লিশ বৎসর বয়স পর্যন্ত শিক্ষকতা করার পর তিনি তার পিতার কথা,"প্রকৃত মানুষ ধরিয়া মানুষ হইও" স্মরণ করে ভারতের নানা অঞ্চল ঘুরতে থাকেন প্রকৃত মানুষের সন্ধানে। শেষে 'মুর্শিদি' ও 'মারফতি' গানের শেষ উত্তরাধিকার তিনি রাধাচরণ দরবেশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে শিখতে শুরু করেন 'বৌদ্ধ-বৈষ্ণব সুফিবাদের' যৌথ সাধন ধারার সঙ্গীত- বাংলার অতি প্রাচীন সম্পদ- দরবেশি গান। পরিচিত হন কালাচাঁদ দরবেশ নামে। কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিক ভাবে দরবেশি গানের সাধনায় লিপ্ত ছিলেন। সারা বাংলা তো বটেই, দরবেশি গানে মোহিত করেছেন বিশ্বকে। অসামান্য কণ্ঠে অধিকারী তিনি ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কাজ করেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে অনুষ্ঠিত 'ভারত মেলা'য় তার সঙ্গীত পরিবেশনায় সঙ্গত করেন উস্তাদ জাকির হুসেইন। সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন অমিতাভ বচ্চনগ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দরবেশি গান, দরবেশি জীবনযাপন ও দর্শন বিষয়ে ওয়ার্কশপ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। দরবেশি গানের জন্য আপ্যায়িত হয়েছেন স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স মরক্কোসহ আফ্রিকার বহু দেশে, শুনিয়েছেন দরবেশি গান আলাউদ্দিন খাঁর যন্ত্র অনুসঙ্গ স্বরাজ হাতে নিয়ে। [৩] গীত রচনা ও সুরারোপও করেছেন তিনি। সরকারি সঙ্গীতানুষ্ঠান, বাউল উৎসব, সহজিয়া উৎসবে এমনকি মাধুকরি হয়ে ট্রেনে, বাসেও দরবেশি গান শুনিয়ে গেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দরবেশি গান হল

  • হৃদয় কপাট দেখ না খুলে, ঘরের মানুষ ঘরেই খাড়া
  • কোন সাধনে পাবি রে তুই
  • ঘরের মধ্যে ঘর বানায়া
  • সিন্ধু পারের বন্ধু যেজন
  • আমার ঘরের ভিতরে আগুণ
  • আমার গানের পালা শেষ হয়েছে

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

দেশে-বিদেশে দরবেশি গান পরিবেশন করে কালাচাঁদ সুনাম অর্জন করেন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে নজরুল পুরস্কার প্রদান করে। ওই বছরেই কলকাতার সহজিয়া ফাউন্ডেশন তাকে সহজিয়া সম্মানে ভূষিত করে। পরে ফাউন্ডেশন দেব চৌধুরীর পরিচালনায় তার সঙ্গীত ও জীবন নিয়ে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র ইন সার্চ অফ দরবেশি সঙস্ নির্মাণ করে। [৩]

জীবনাবসান

সম্পাদনা

২০১২ খ্রিস্টাব্দ হতে নানা কারণে অসুস্থ ছিলেন বাংলার দরবেশি গানের এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছিল। তারপর কিডনি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২ ডিসেম্বর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ধুপগুড়ি ও পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করা হয়। রাতে গোবিন্দপল্লীর বাড়িতে আনা হয়। রবিবার ৩ ডিসেম্বর সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ বাড়িতে মৃত্যু হয় তার। [৫]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "সাধক-শিল্পী কালাচাঁদ দরবেশ প্রয়াত"  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. "প্রয়াত সহজিয়া সুফি সম্প্রদায়ের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী কালাচাঁদ দরবেশ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৫ 
  3. "Darbeshi singer dies"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৫ 
  4. "হৃদয় কপাট দেখ না খুলে, ঘরের মানুষ ঘরেই খাড়া"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৫ 
  5. "প্রয়াত বাংলার দরবেশি গানের শেষ শিল্পী কালাচাঁদ দরবেশ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৫