কল মি বাই ইয়োর নেম (চলচ্চিত্র)

কল মি বাই ইয়োর নেম (ইংরেজি: Call Me by Your Name; ইতালীয়: Chiamami col tuo nome) হল ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এবং লুকা গুয়াদাগনিনো পরিচালিত একটি কামিং-অফ-এজ রোম্যান্টিক ড্রামা চলচ্চিত্র। আন্দ্রে অ্যাসিম্যান রচিত একই নামের একটি উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবির চিত্রনাট্য রচনা করেন ছবিটির সহ-প্রযোজক জেমস আইভরিআই অ্যাম লাভ (২০০৯) ও আ বিগার স্প্ল্যাশ (২০১৫) ছবি দু’টির পর এই ছবিটি হল গুয়াদাগনিনোর "ডিজায়ার" চলচ্চিত্র ত্রয়ীর শেষ পর্ব। ১৯৮৩ সালের উত্তর ইতালির প্রেক্ষাপটে নির্মিত কল মি বাই ইয়োর নেম ছবিতে এলিও পার্লম্যান (টিমথি শালামে) নামে এক সতেরো বছর বয়সী কিশোরের সঙ্গে তার বাবা তথা প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক স্যামুয়েল পার্লম্যানের (মাইকেল স্টুলবার্গ) সহকারী চব্বিশ বছর বয়সী স্নাতক ছাত্র অলিভারের (আর্মি হ্যামার) প্রণয় সম্পর্কের কথা বিবৃত হয়েছে। ফরাসি অভিনেত্রী আমিরা ক্যাসার, এস্থার গ্যারেলভিক্টোরি ডু বোইসও এই ছবিতে অভিনয় করেন।

কল মি বাই ইয়োর নেম
পোস্টার
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিকালীন পোস্টার
পরিচালকলুকা গুয়াদাগনিনো
প্রযোজক
চিত্রনাট্যকারজেমস আইভরি
শ্রেষ্ঠাংশে
চিত্রগ্রাহকসায়োম্ভু মুকদীপরোম
সম্পাদকওয়াল্টার ফ্যাসানো
পরিবেশক
মুক্তি
  • ২২ জানুয়ারি ২০১৭ (2017-01-22) (সানড্যান্স)
  • ২৪ নভেম্বর ২০১৭ (2017-11-24) (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
  • ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ (2018-01-18) (ব্রাজিল)
  • ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ (2018-01-25) (ইতালি)
স্থিতিকাল১৩২ মিনিট[১]
দেশ
  • ইতালি
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
  • ফ্রান্স
  • ব্রাজিল[২][৩]
ভাষা
নির্মাণব্যয়৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার[৫]
আয়৪১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার[৬]

২০০৭ সালে প্রযোজক পিটার স্পিয়ার্সহাওয়ার্ড রোসেনম্যান অ্যাসিম্যানের উপন্যাসটির স্বত্ব ক্রয় করলে এই ছবির কাজ শুরু হয়। গুয়াদাগনিনোর সহ-পরিচালক হিসেবে আইভরিকে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু তিনি ২০১৬ সালে সেই কাজ থেকে সরে আসেন। গুয়াদাগনিনো প্রথমে ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন একজন লোকেশন স্কাউট হিসেবে। কিন্তু ঘটনাচক্রে তিনি পরিণত হন ছবির একক পরিচালক এবং সহ-প্রযোজকে। একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থে কল মি বাই ইয়োর নেম ছবিটি নির্মিত হয়। ছবির মূখ্য চিত্রগ্রহণর কাজ ২০১৬ সালের মে ও জুন মাসে প্রধানত লম্বার্ডির গ্রেমা শহর ও কমিউনে সম্পন্ন হয়েছিল। সিনেমাটোগ্রাফার সায়োম্ভু মুকদীপরোম ডিজিটাল সিনেমাটোগ্রাফির পরিবর্তে ৩৫এমএম ফিল্ম ব্যবহার করেন। চলচ্চিত্র-নির্মাতারা অন্যতম প্রধান শ্যুটিং স্থল ভিলা অ্যালবার্গোনি সাজাতে বেশ কয়েক সপ্তাহ অতিবাহিত করেন। ছবির সাউন্ডট্র্যাকটি সংকলন করেন গুয়াদাগনিনো নিজেই। এই সাউন্ডট্র্যাকে মার্কিন গায়ক-গীতিকার সুফজান স্টিভেনসের দু’টি মৌলিক গান রয়েছে।

২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি ২০১৭ সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে কল মি বাই ইয়োর নেম ছবির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই সোনি পিকচার্স ক্লাসিকস এই ছবির পরিবেশনার স্বত্ব লাভ করে। ওই বছরই ২৪ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সীমায়িত মুক্তির মাধ্যমে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আসে এবং সাধারণ মুক্তিলাভ করে ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি। ছবিটি সমালোচকদের বহুল প্রশংসা অর্জন করে বিশেষ করে আইভরির চিত্রনাট্য, গুয়াদাগনিনোর পরিচালনা এবং ক্যালামেট, হ্যামার ও স্টুলবার্গের অভিনয়ের জন্য। ছবিটি বেশ কয়েকটি সম্মাননা লাভ করে। এর মধ্যে অনেকগুলি ছিল চিত্রনাট্য, পরিচালনা, অভিনয় ও সংগীতের ক্ষেত্রে। ছবিটি ৯০তম অ্যাকাডেমি পুরস্কারে চারটি মনোনয়ন (শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সহ) লাভ করে এবং শ্রেষ্ঠ অভিযোজিত চলচ্চিত্র বিভাগের পুরস্কারটি জয়ও করে। এছাড়াও এই ছবির চিত্রনাট্য ২৩শ ক্রিটিক’স চয়েস পুরস্কার, ৭১তম ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাইটার্স গিল্ড অফ আমেরিকা পুরস্কার ২০১৭ জয় করেছিল।

কাহিনি-সারাংশ সম্পাদনা

১৯৮৩ সালের গ্রীষ্মকাল। সতেরো বছরের ইহুদি-ইতালীয় কিশোর এলিও উত্তর ইতালির একটি গ্রামে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে বাস করে। এলিওর বাবা প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক। গ্রীষ্মাবকাশে তাঁর আকাদেমিক কাগজপত্র লেখার কাজে সাহায্য করার জন্য তিনি অলিভারকে তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। অলিভার ধর্মসূত্রে ইহুদি এবং চব্বিশ বছর বয়সী এক স্নাতকস্তরের ছাত্র। এদিকে এলিও অন্তর্মুখী গ্রন্থপ্রেমী ও প্রতিভাবান সংগীতশিল্পী। প্রথম দিকে অলিভারের সঙ্গে সে নিজের বিশেষ কোনও মিল খুঁজে পায় না। কারণ অলিভারের বহির্মুখী স্বভাবের প্রাণোচ্ছ্বল তরুণ। তার উপর অলিভারের জন্য নিজের শোওয়ার ঘরটি ছেড়ে দিতে হয়েছিল বলেও সে এলিওর বিরক্তির কারণ হয়েছিল। গ্রীষ্মের অধিকাংশ সময়ই এলিও কাটিয়ে দিচ্ছিল বই পড়ে, পিয়ানো বাজিয়ে ও তার ছেলেবেলার বান্ধবী মার্জিয়ার সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে। এদিকে অলিভারও স্বীকার করল যে সে স্থানীয় একটি মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। সেটা শুনে এলিও আরও অসন্তুষ্ট হল।

এলিও ও অলিভার একসঙ্গে সাঁতার কাটে, শহরে দীর্ঘ পথে পায়চারি করে এবং এলিওর বাবাকে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সফরে সঙ্গ দেয়। এলিওর সঙ্গে মার্জিয়ার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অলিভারের প্রতিক্রিয়াটি বোঝার জন্য তা নিয়ে সে অলিভারের সামনে বড়াই করে। যদিও এলিও নিজেও অলিভারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে শুরু করে। একদিন স্থানীয় ডাকঘরে যাওয়ার সময় এলিও পরোক্ষভাবে অলিভারের প্রতি তার অনুভূতির কথা স্বীকারও করে। অলিভার প্রথমে তার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে চায়নি। তাই সেই দিন পরে দু’জনে দু’জনকে চুম্বন করলেও অলিভার তার বেশি এগোতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। ফলে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়।

কলাকুশলী সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. মি. পার্লম্যানের পুরো নামটি এই ছবিতে উল্লিখিত হয়েছে স্যামুয়েল পার্লম্যান।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Call Me by Your Name (2017)"British Board of Film Classification। ৭ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৭ 
  2. "Call Me by Your Name (2017)"British Film Institute। এপ্রিল ১, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৩, ২০২০ 
  3. "Film #74034: Call Me by Your Name"Lumiere। ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৩, ২০২০ 
  4. "Berlin Film Festival 2017 Program by Memento Films" (পিডিএফ)। Memento Films International। ডিসেম্বর ৮, ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১, ২০১৭ 
  5. Katz, Brandon (জানুয়ারি ২৫, ২০১৮)। "'Call Me by Your Name' Sequel Details Revealed"The New York Observer। ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০১৮ 
  6. "Call Me by Your Name (2017)"Box Office Mojo। আগস্ট ২৭, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮ 
  7. Rochlin, Margy (ডিসেম্বর ২১, ২০১৭)। "Michael Stuhlbarg's 'fragile balancing act' in playing a supportive dad in 'Call Me by Your Name'"The Los Angeles Times। জানুয়ারি ২২, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২, ২০১৮ 
  8. Gallo, Francesco (ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭)। "Luca Guadagnino, la mia storia gay per famiglie" [Luca Guadagnino, my gay story for families]। ANSA (ইতালীয় ভাষায়)। ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:লুকা গুয়াদাগনিনো