করুণা

সংস্কৃত শব্দ

করুণা হল আত্ম-মমতা বা আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা।[] এটি ভারতীয় ধর্ম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, শিখধর্মজৈনধর্মের গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ধারণা।

বিভিন্ন ভাষায়
করুণা এর
অনুবাদ
ইংরেজি:Compassion
পালি:karuā
সংস্কৃত:karuā
বাংলা:করুণা
(kôruna)
বর্মী:ကရုဏာ
(আইপিএ: [ɡəjṵnà])
চীনা:
(pinyincíbēi)
জাপানী:慈悲
(rōmaji: jihi)
খ্‌মের:ករុណា
(Karuna)
কোরীয়:자비
তিব্বতী:སྙིངརྗེ
তামিল:கருணை
(Karuai)
থাই:กรุณา
ভিয়েতনামী:bi
বৌদ্ধ ধর্ম সংশ্লিষ্ট টীকাসমূহ

বৌদ্ধধর্ম

সম্পাদনা

বৌদ্ধধর্মের সব পাঠগুলিতে করুণা গুরুত্বপূর্ণ। থেরবাদ বৌদ্ধদের জন্য, করুণায় অধিষ্ঠানের মানে হল একটি সুখী বর্তমান জীবন এবং স্বর্গীয় পুনর্জন্ম অর্জনের একটি পথ। মহাযান বৌদ্ধদের জন্য করুণা গুণটি একজন বোধিসত্ত্বের জন্য একটি সহ-পূর্বশর্ত।

থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম

সম্পাদনা

থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের মধ্যে প্রেমপূর্ণ দয়া/মৈত্রী (পালি: মাত্তা), সহানুভূতিপূর্ণ আনন্দ (মুন্দিতা) এবং মনের স্থিরতা (উপেক্ষা) এর সাথে করুণা, চারটি "ঐশ্বরিক আলয়" (ব্রহ্মবিহার)এর একটি।[]ত্রিপিটকে বুদ্ধ, গৃহস্থ এবং সন্ন্যাসী উভয়দের এইসব চার পবিত্র মানসিক অবস্থার অনুশীলন করতে পরামর্শ দেন।[] যখন কেউ এই চারটি অবস্থার বিকাশ ঘটায়, বুদ্ধ সমস্ত দিকে তাদের ছড়িয়ে দিতে পরামর্শ দেন।

এই ধরনের অভ্যাস একজনের মনকে শুদ্ধ করে, মন্দ-প্রণোদিত পরিণতি এড়িয়ে চলে, তার বর্তমান জীবন সুখের দিকে পরিচালিত করে, এবং যদি ভবিষ্যতে নিয়তিতে পুনর্জন্ম থাকে তবে তা স্বর্গীয় রাজ্যে হবে।[]

মহাযান বৌদ্ধধর্ম

সম্পাদনা

মহাযান বৌদ্ধধর্মে আলোকিত জ্ঞানের সঙ্গে (সংস্কৃতঃ প্রজ্ঞা), করুণা, দুই গুণাবলীর একটি- বোধিসত্ত্ব হওয়ার পথে যেগুলি অনুশীলন করতে হবে। পণ্ডিত রুপেথ গথিনের মতে, প্রজ্ঞার অবস্থাতে করুণার উত্তরণ হল থেরবাদ যোগ্যতম আদর্শ এবং মহাযান বৌদ্ধধর্ম আদর্শের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র অন্যতম উপাদান:

মহাযানের জন্য ... যোগ্যতমের পথটি অবশিষ্ট স্বার্থপরতার সাথে দুষিত হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ এটি বোধিসত্ত্বের মহান করুণার (মহাচরণ) প্রেরণাবিহীন এবং পরমভাবে বৌদ্ধ অনুশীলনের একমাত্র বৈধ উপায় হলো বোধিসত্ত্ব পথ।[]

মহাযান জগতে, অবলোকিতেশ্বর (Sanskrit; Chinese: Guan Yin; Japanese: Kannon; Tibetan: Chenrezig) একজন বোধিসত্ত্ব, যিনি করুণা রচনা করেন।

কমলাশিলা দ্বারা ধ্যানের পর্যায়গুলির অন্তর্বর্তী অংশে তিনি লিখেছেন:

সহানুভূতি[করুনা] দ্বারা চালিত, বোধিসত্ত্বগণ সকল সংবেদনশীল প্রাণীকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করেন। তারপর তাঁরা তাঁদের আত্ম-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অতিক্রম করে, সাগ্রহে সদগুণ এবং অন্তর্দৃষ্টি সঞ্চয় করার জন্য অত্যন্ত কঠিন অনুশীলনের মধ্যে ক্রমাগত নিযুক্ত হন। এই অনুশীলনের মধ্যে প্রবেশ করে, তাঁদের অবশ্যই সদগুণ এবং অন্তর্দৃষ্টি সংগ্রহ সম্পূর্ণ হবে। সদগুণ এবং অন্তর্দৃষ্টি সংগ্রহ সাধন যেন অপার জ্ঞান নিজের করায়ত্ত করা। অতএব, সমবেদনা অপার জ্ঞানের একমাত্র মূল আধার, তোমাদের খুব প্রারম্ভ থেকে এই অনুশীলনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিত"।[]

তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের ভাষায়, বোধিসত্ত্ব পথের সর্বাধিক পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থগুলির মধ্যে একটি হল "বোধিচর্যাবতার"। ধ্যাননিষ্ঠা কেন্দ্রীকরণ অভিহিত অষ্টম ভাগে, শান্তিদেব করুণার উপর এইভাবে যেমন ধ্যান বর্ণনা করেছেন:

প্রথমে নিজের এবং অন্যদের অভিন্নতার উপর ধ্যান করার প্রচেষ্টা কর। আনন্দ এবং দুঃখের মধ্যে সবাই সমান হয়; সুতরাং নিজে সবার অভিভাবক হও। একটা শরীরকে বজায় রাখা এবং পাহারার জন্য- হাত এবং অন্যান্য অঙ্গ অনেক এবং স্বতন্ত্র হয়, কিন্তু সব মিলিয়ে একজন। অনুরূপভাবে, বিভিন্ন সত্তা, তাদের আনন্দ এবং দুঃখের মধ্যে, আমার মত, সুখ কামনায় সব এক। আমার এই ব্যথা অন্যের দেহে কষ্ট দেয় না বা অস্বস্তি দেয় না, এবং এখনো এই ব্যথা সহ্য করা আমার জন্য কঠিন তখন পর্যন্ত কারণ আমি আমার নিজের জন্য এটি আঁকড়ে ধরে গ্রহণ করেছি। এবং অন্যান্য মানুষের 'ব্যথা আমি অনুভব করি না, এবং তখন পর্যন্ত, যতক্ষণ আমি সেগুলি নিজের জন্য নিলাম, তাদের যন্ত্রণা আমার এবং তাই সহ্য করা কঠিন। আর তাই আমি অন্যদের ব্যথা দূর করব, কারণ এটা আমার নিজের ব্যথার মতই ব্যথা। অন্যদের আমি সাহায্য এবং উপকার করব, যেহেতু আমার শরীরের মত তারা সজীব সত্তা। যেহেতু আমি ও অন্যান্য সত্তা উভয়েই সুখ কামনা করে, সমান এবং একই রকম, আমাদের তফাৎ করার মত পার্থক্য কোথায় আছে, যে আমি কেবল আমার সৌভাগ্যের জন্য চেষ্টা করব?"[]

জৈন ধর্ম

সম্পাদনা

করুণা সমবেদনা জৈন অনুশীলনের সঙ্গে সংযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, করুণা সার্বজনীন শখ্যতার চারটি চিন্তাধারা। সংক্ষেপে, আমরা দুষ্ট কর্মের প্রাদুর্ভাবকে এড়িয়ে চলতে পারি এবং এই পার্থিব জীবনের সাথে বন্ধুত্ব(মৈত্রী) গড়ে তোলার মাধ্যমে, তাদের সাফল্যের প্রশংসা(প্রমোদ) করে, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় যখন তাদের হাত ধরে রাখি(করুণা), এবং যখন সঠিক বা ভুল কি তা বুঝতে না পেরে, সেগুলি করে- তখনই তাদের একা ছেড়ে দিয়ে(মধ্যস্থ), এই দুনিয়ার জীবনে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারি।[]

করুণা সমগ্র ভারত জুড়ে একটি সাধারণ প্রথম নাম, নারী, পুরুষ উভয় লিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত। লিথুয়ানীয় ভাষায় "করুণা"র অর্থ "মুকুট", মুকুট অধিকারীর গুণাবলীর সম্ভাব্য সম্পর্ক।

আরো দেখুন

সম্পাদনা
  1. Regarding the Sanskrit word, see Monier-Williams (1899), p. 255, entry for "karuṇā" (retrieved at http://www.sanskrit-lexicon.uni-koeln.de/scans/MWScan/MWScanpdf/mw0255-karaTa.pdf), where the noun form of the word is defined as "pity, compassion". For the Pali word, see Rhys, Davids & Stede (1921–25), p. 197, entry for "karuṇā" (retrieved at [১]), where it is defined as "pity, compassion". In general, contemporary scholars, translators and interpreters have consistently translated the word as "compassion," not "pity." This can be seen, for instance, in (listed chronologically) Warder (1970/2004, p. 95), Ñāṇamoli (Buddhaghosa & Ñāṇamoli, 1975/1991, Vsm. IX.77ff., pp. 306ff.), Saddhatissa (1985/1994, p. 3, Sn 3.39), Thanissaro (1994, AN 3.65), Salzberg (1995, pp. 102ff.), Gethin (1998, p. 187), and Bodhi (2000, SN 41.7, p. 1325).
  2. Gethin (1998), pp.186-187; and, Rhys Davids & Stede, op. cit.
  3. For instance, in the Kālāmā Sutta (AN 3.65), the Buddha speaks of all Noble Disciples (ariya-savaka) developing the brahmaviharas (Thanissaro, 1994). ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখে
  4. AN 3.65 (Thanissaro, 1994). ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখে In regards to in which heavenly realm a frequent karuā dweller will be reborn, AN 4.125 (Thanissaro, 2006) identifies it as the realm of radiant (abhassara) devas, whose lifespans last two eons.
  5. Gethin (1999), p. 228.
  6. Stages of Meditation by H.H The Dalai Lama, Root Text by Kamalashila. Snow Lion Publications. Page 42-43
  7. The Way of the Bodhisattva by Shantideva. Shambhala Publications. Page 122-123
  8. Shah (n.d.). ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জুন ২০০৯ তারিখে Regarding samvara, see "Release from karmas". From a comparative religion perspective, cf. Buddhism's four brahmavihara; for instance, maitri is often identified as a Sanskrit correlate of the Pali mettā (Rhys Davids & Stede, 1921-5, p. 540, entry for "Mettā," retrieved at http://dsal.uchicago.edu/cgi-bin/philologic/getobject.pl?c.3:1:177.pali[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]).

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা