ওয়ালিদ এহসানুল করিম

ফ্লাইং অফিসার ওয়ালীদ এহসানুল করিম, শহীদ (জুলাই ১৯৪৪, হারবাং, চকরিয়া – ১৯ এপ্রিল ১৯৬৫, করাচী) ছিলেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একজন ফাইটার পাইলট এবং পৃথিবীতে এফ-৮৬ স্যাবর জেট বিমান পরিচালনাকারী সর্বকনিষ্ঠ বৈমানিকদের মধ্যে একজন।[]

ফ্লাইং অফিসার ওয়ালিদ এহসানুল করিম
ওয়ালিদ এহসানুল করিম
ডাকনামওয়ালিদ
জন্মজুলাই ১৯৪৪
হারবাং, চকরিয়া, কক্সবাজার, ব্রিটিশ ভারত, বর্তমানে বাংলাদেশ
মৃত্যু১৯ এপ্রিল ১৯৬৫
করাচীর নিকটে
আনুগত্যপাকিস্তান পাকিস্তান
সেবা/শাখা পাকিস্তান বিমানবাহিনী
কার্যকাল১৯৬৩ - ১৯৬৫
পদমর্যাদা ফ্লাইং অফিসার (লেফটেনেন্ট)
সার্ভিস নম্বরPAK-4362
ইউনিট১৭তম স্কোয়াড্রন (দ্যা টাইগার্স)
যুদ্ধ/সংগ্রামভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫

পটভূমি

সম্পাদনা

১ জুলাই ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে বাংলাদেশ) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং গ্রামে ক্যাপ্টেন এডভোকেট ফজলুল করিম এবং নাজমুন্নিসা চৌধুরানীর পরিবারে তার জন্ম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাবলিক স্কুল সারগোদা থেকে ১৯৬১ সালে সিনিয়র কেমব্রিজ (জিসিই) সম্পন্ন করেন (৫ম ব্যাচ, স্যাবার হাউস)। এরপর একই বছর আগস্ট মাসে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা
 
মতিউর রহমান এবং মমতাজের সাথে ওয়ালিদ।
 
নিজের এফ-৮৬ সাব্রে বিমানের সামনে ওয়ালিদ।

পাইলট কমিশন: ওয়ালীদ ২২ জুন ১৯৬৩ সালে ৩৬তম জিডি (পি) কোর্স থেকে কমিশন লাভ করেন এবং তার ক্রমিক নম্বর ছিল PAK-4362। তিনি উইং আন্ডার অফিসার ছিলেন এবং শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট হিসাবে সোর্ড অফ অনার পেয়েছিলেন।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫

সম্পাদনা

ওয়ালিদ ১৯৬৫ সালের কচ্ছের রানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পদাতিক সৈন্যবাহিনীর আক্রমণ আড়াল করার জন্য দিনের বেলায় বিমান হতে ধুম্রবোমা নিক্ষেপ করেন। যুদ্ধে তার বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হবার পরে তার শরীর বা বিমান কোনটিই খুজে পাওয়া যায়নি। তবে দুইমাস পরে ঠিক ঐ স্থানেই তার বিমানের রাডারের একটি অংশ খুজে পাওয়া যায়। সে সময় তিনি পাকিস্তান বিমানবাহীনির ১৭তম স্কোয়াড্রনের (দ্যা টাইগার) একজন যোদ্ধা পাইলট ছিলেন। এয়ার মার্শাল আজিম দাউদপোতা সে সময়ে তার স্কোয়াড্রন লিডার ছিলেন। সারগোধা এবং রিসালপুরে প্রশিক্ষণের সময় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (বীরশ্রেষ্ঠ) এবং এয়ার ভাইস মার্শাল মমতাজ উদ্দিন আহমেদ তার সহপাঠী ছিলেন।

রিসালপুরের পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমিতে এক বিতর্কে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এর পক্ষে জোরালো বক্তৃতা দেন। তিনি পাকিস্তান সরকারকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান। একাডেমিতে তিনি বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তার কমিশন লাভের পর, করিম করাচি, পশ্চিম পাকিস্তানের পিএএফ বেস মাসরুরে নং ২ স্কোয়াড্রন-এ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেখানে তিনি টি-৩৩ জেট ট্রেনার-এ জেট কনভার্শন প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এরপরে তাকে নর্থ আমেরিকান এফ-৮৬ স্যাবার ফাইটার রূপান্তর প্রশিক্ষণ কোর্সে মনোনীত করা হয়। এফ-৮৬ স্যাবার ছিল একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, যা ১৯৫০-এর দশকের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সরবরাহ করছিল। এই প্রশিক্ষণ শেষে তার চমৎকার পারফরম্যান্সের জন্য তাকে নং ১৯ স্কোয়াড্রন-এ পেশোয়ারে পোস্টিং দেওয়া হয়।

পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে করিম তার এফ-৮৬ স্যাবার দিয়ে দুঃসাহসিক স্টান্ট দেখানোর জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৬৫ সালের ২৩ মার্চ, প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত এয়ার শোতে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি উইংম্যান হিসেবে লকহিড স্টারফাইটার এফ-১০৪ বিমানে এয়ার মার্শাল আসগর খান (তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান) এবং এয়ার কমডোর জাফর চৌধুরীর সঙ্গে অংশ নেন ।

১৯৬৫ সালের ১৯ এপ্রিল, করিম রান অব কচ্ছ অঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় শহীদ হন। এটি ছিল ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঠিক পূর্ববর্তী ঘটনা। তার নর্থ আমেরিকান এফ-৮৬ স্যাবার বিমানটি ভোরে ভারতীয় অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট গান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এতে ইঞ্জিনের গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হয়। রাতের দিকে তিনি গুজরাটে গোয়েন্দা মিশন শেষ করে ফেরার সময় বিমানটি করাচির দক্ষিণ উপকূল থেকে প্রায় ১০-১৫ মাইল দূরে আরব সাগরে বিধ্বস্ত হয়। দিবাকালে তিনি রান অব কচ্ছ অঞ্চলে পাকিস্তানি পদাতিক বাহিনীর আক্রমণ আড়াল করতে স্মোক বোমা নিক্ষেপ করেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর স্ট্রাফিং (নিচু থেকে গুলি চালানো) চালান। তার দেহ বা বিমান উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, তবে দুর্ঘটনার প্রায় দুই মাস পর তার বিমানের রাডারের একটি অংশ পাওয়া যায় এবং সেটি উদ্ধার করা হয়।

তিনি মৃত্যুকালে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের ১৭তম স্কোয়াড্রনের (দ্য টাইগার্স) একজন যুদ্ধবিমান পাইলট ছিলেন। সে সময় তার স্কোয়াড্রন লিডার ছিলেন এয়ার মার্শাল আজিম দাউদপোতা।

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Bowman, Martin (২০১৬-০১-৩০)। Cold War Jet Combat: Air-to-Air Jet Fighter Operations 1950-1972 (ইংরেজি ভাষায়)। Casemate Publishers। আইএসবিএন 9781473874626 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা