ওয়াট রং খুন

থাইল্যান্ডের চিয়াং রাইয়ের একটি বৌদ্ধ মন্দিরের শিল্প প্রদর্শনী

ওয়াট রং খুন (থাই: วัดร่องขุ่น), যা বিদেশীদের নিকট হোয়াইট টেম্পল বা সাদা মন্দির নামে বেশি পরিচিত- তা থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশে অবস্থিত একটি সমকালীন, রীতিবর্জিত, ব্যক্তিমালিকানাধীন বৌদ্ধ মন্দিরের শৈল্পিক উপস্থাপন। চালেরমাচাই কোসিটপিপাট এটির মালিক যিনি এটি নকশা করেছেন, নির্মাণ করেছেন এবং ১৯৯৭ সালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন।[১]

ওয়াট রং খুন (সাদা মন্দির)
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিবৌদ্ধ মন্দির
অবস্থান
অবস্থানChiang Rai, চিয়াং রাই প্রদেশ, থাইল্যান্ড
স্থাপত্য
স্থাপত্য শৈলীBuddhist Architecture
Hindu Architecture

ইতিহাস সম্পাদনা

বিংশ শতকের শেষে প্রকৃত ওয়াট রং খুন স্থাপনাটি বেহাল দশায় পড়েছিল। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এর সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। চিয়াং রাই এর একজন শিল্পী চালেরমাচাই কোসিটপিপাট নিজস্ব অর্থায়নে এটি সম্পূর্ণ পুনর্নিমাণের সিদ্ধান্ত নেন। [২] এখন পর্যন্ত তিনি এই প্রকল্পে নিজের ৪০ মিলিয়ন THB খরচ করেছেন। [৩] তিনি মন্দির সংলগ্ন এলাকাটি শিক্ষা ও ধ্যানের কেন্দ্র এবং গৌতম বুদ্ধের শিক্ষাগ্রহণের সুফল লাভের উপযোগী করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। কোসিটপিপাট মন্দিরটিকে বুদ্ধের প্রতি নিবেদন বলে মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন যে এই প্রকল্পটি তাকে অমর জীবন প্রদান করবে। [৪] এখনও প্রকল্পটির কাজ চলছে এবং আশা করা হয় ২০৭০ সালের পূর্বে এটি সম্পূর্ণ হবে না। [৪] থাইদের জন্য ওয়াট চত্বরে প্রবেশ বিনামূল্যে এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ৫০ THB। প্রকল্পে কেউ অনুদান দিতে পারবেন, তবে তা ১০০০০ THB এর বেশি নয়। চালেরমাচাই বৃহৎ দাতৃগোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত হতে চান না। [৩]

গঠনশৈলী ও তাৎপর্য সম্পাদনা

সম্পূর্ণ হওয়ার পর মন্দির প্রাঙ্গণে মোট নয়টি ভবন থাকবে। এতে উবোসোট (থাই মন্দিরের গর্ভগৃহ), পুরনো ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণাগার, ধ্যানগৃহ, চিত্রশালা, সাধুদের বাসস্থান প্রভৃতি থাকবে।[২]

জন্মান্তরচক্রের সেতু: সাদা মন্দিরের মূল ভবন উবোসোটে একটি ছোট হ্রদের উপরিস্থিত সেতু অতিক্রম করে যেতে হয়। সেতুটির সামনে অসংখ্য প্রসারিত হাত মানুষের অবারিত আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সেতুটি লোভ, মোহ ও কামনা অতিক্রান্ত করে সুখলাভের শিক্ষা দেয়। হ্রদের সম্মুখভাগে বৌদ্ধ পুরাণের অর্ধ নরদেহ ও অর্ধ পক্ষিদেহ বিশিষ্ট দুজন কিন্নর দণ্ডায়মান আছে।[২]

স্বর্গের দ্বার: সেতু পার হয়ে দর্শনার্থীরা স্বর্গের দ্বারে এসে পৌঁছান। দ্বারটি মৃতের ভাগ্যনির্ধারণকারী মৃত্যু ও রাহু দ্বারা প্রহরাধীন। এছাড়া উবোসোট এর সামনে বেশ কয়েকটি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি রয়েছে।[২]

উবোসোট: দর্পণ ও কাচ দ্বারা বহির্ভাগ সজ্জিত করা সম্পূর্ণ সাদা রঙের উবোসোট মন্দিরটির মূল স্থাপনা। এতে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের প্রতিফলন ঘটেছে, যেমন ত্রিকোণাকার ছাদ এবং যত্রতত্র পৌরাণিক নাগ এর প্রতিকৃতি। মন্দিরের অভ্যন্তরে সাজসজ্জা শুদ্ধ সাদারং থেকে ক্রমশ উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে থাকে। ম্যুরালে কমলা রঙের অগ্নিশিখা ও দানবের মুখ চিত্রায়িত হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন পশ্চিমা চরিত্র যেমন মাইকেল জ্যাকসন, দ্য ম্যাট্রিক্স চলচ্চিত্রের নিয়ো, ফ্রেডি ক্রুয়েজার, টার্মিনেটর চলচ্চিত্রের টি ৮০০ প্রভৃতি রয়েছে। এছাড়া নিউক্লীয় যুদ্ধ, জঙ্গী আক্রমণ, তেলের পাম্প, মানুষের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি চিত্রায়িত হয়েছে। যদিও হ্যারি পটার, সুপারম্যান, হ্যালো কিটি প্রভৃতি ধর্মসংশ্লিষ্ট না হওয়ায় মন্দিরের উদ্দেশ্য দ্বিধাগ্রস্ত হয়, তবে এতে দর্শক আকৃষ্ট হয়ে থাকে।[৫]

সোনালি ভবন: এটি সোনালি রঙের একটি বহিঃস্থিত স্থাপনা। এটি একটি সুসজ্জিত সোনালি দালান, যা দেহের প্রতীক এবং সাদা উবোসোটটি মনের প্রতীক। সোনালি রং মানুষের ঐহিক কামনা-বাসনা ও টাকার লোভ বুঝিয়ে থাকে। সাদা ভবনটি নশ্বর সম্পদের মোহ দূর করে মনের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাৎপর্য বহন করে। [২]

চিত্রকক্ষ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sawyer, Mitch (২০১৭-০৭-০৭)। "In Thailand, a Buddhist Artist Is Building the Bizarre Temple of His Dreams" (Editorial)Artsy। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৭ 
  2. "Wat Rong Khun; "The White Temple" of Chiang Rai"Renown Travel। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-১৭ 
  3. "Wat Rong Khun"Amazing Thailand। Tourism Authority of Thailand (TAT)। ২০১৪-১২-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-১৭ 
  4. "Thai Buddhist Temple, Wat Rong Khun, Built With Images Of Superman, Neo From The Matrix"The Huffington Post। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-১৭ 
  5. "A Tour of Wat Rong Khun, the Oddest Temple in Thailand"Slate। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা