কাউন্সিলর একরামুল হক হত্যাকাণ্ড

(একরামুল হক হত্যা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

একরামুল হক হত্যা ঘটনাটি টেকনাফ পৌরসভার তিন নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হককে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের একটি ইউনিট কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকে বোঝায়।[১] যে ধরনের ঘটনার ফলে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ম্যাগনিটস্কি আইন প্রথম ব্যবহার করা হয়।[২]

ঘটনা সম্পাদনা

একরামুল হক ছিলেন একজন ব্যবসায়ী যিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরপর তিনবার টেকনাফ পৌরসভা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।[৩] হক ১৩ বছর যাবত আওয়ামী লীগের যুবলীগ টেকনাফ শাখার সাবেক সভাপতি ছিলেন।[৪] বাংলাদেশ সরকার মাদক চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালায়, যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে বন্দুকযুদ্ধে ১০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন নিহত হয়।[৫][৬] ২০১৮ সাল থেকে শুধুমাত্র টেকনাফেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিচারবহির্ভূত গুলাগুলিতে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।[৭]

২০১৮-এর ২৭মে স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ রেজাউল হকের নেতৃত্বে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একরামুল হক নিহত হন।[৮][১] র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোঃ রুহুল আমিন জানান, সেখানে বন্দুকযুদ্ধের পর তার লাশ পাওয়া যায়।[৮] তারা ১০,০০০ পিস ইয়াবা ও দুটি বন্দুক উদ্ধার করেছে।[৮] টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, হক মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ছিলেন।[৮] হকের ভাই, এহসানুল হক বাহাদুর বলেন, তার ভাইকে গোয়েন্দারা বাছাই করেছিল যারা তাকে বলেছিল যে তারা একটি রিয়েল এস্টেট চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চায়।[৩] গোয়েন্দা অধিদপ্তরের টেকনাফ ইউনিটের প্রধান স্কোয়াড্রন লিডার নাজমুস সাকিবও এ গুলিবর্ষণের সাথে জড়িত ছিলেন।[১]

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ যিনি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭ এর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন হককে "ইয়াবা'র গডফাদার" বলে অভিহিত করেন।[৯] মেজর আমিন বলেন, হক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের স্থানীয় কর্মকর্তা হকের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরে কোনো মামলা ছিলনা বলে জানান।[৩] হকের মাদক ব্যবসায়ী হওয়ার দাবি অস্বীকার করেন তার স্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের টেকনাফ শাখার সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী।[৩]

অডিও ফাঁস সম্পাদনা

২৬ মে ২০১৮, কথিত গোলাগুলির একদিন আগে শেষ ফোন কলের একটি রেকর্ডিং ফাঁস হয়, যেখানে হক তার স্ত্রী আয়েশা বেগমের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন।[১০] কথা চলাকালে হকের স্ত্রী ও কন্যাদের চিৎকার শোনা যায়।[৪] কলের সময় বন্দুকের গুলির শব্দ এবং একজন মানুষের আর্তনাদও শোনা যায়।[১০][১১] আয়েশা এই হত্যাকাণ্ডকে "পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা" বলে অভিহিত করেন।[১০] তিনি জানান, একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেরিন ড্রাইভ সড়কে একটি জমি কেনার জন্য হকের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য চাপ দেন।[১০] তবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান দাবিগুলো অস্বীকার করেন।[১০]

প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

হকের পরিবার নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার পর ন্যায়বিচারের জন্য প্রচারণা চালায়।[৪][১২] তাদেরকে মিডিয়ার সাথে কথা না বলার জন্য বলা হয়।[১৩] অডিও কল ফাঁস হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার গুলিবর্ষণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত দল গঠন করে।[১৪]

২০২১-এর ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ম্যাগনিটস্কি আইনের অধীনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সাতজন বর্তমান এবং প্রাক্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যারা এই আইনের অধীনে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়া প্রথম বাংলাদেশি কর্মকর্তা।[১৫] অভিযুক্তদের মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ,[১৬] যিনি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সাবেক মহাপরিচালক, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন।[১৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "In Recording, Chilling Proof That Hasina's War on Drugs Involves Extra-Judicial Killing"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  2. "US designates 12 officials including 4 Chinese for gross human rights violations"ANI News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  3. Report, Star (২০১৮-০৫-২৮)। "Poura councillor killed in Teknaf"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  4. Report, Star Online (২০১৮-০৬-০৩)। "Akramul killing: Govt to examine audio clips, says home minister"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  5. Express, The Financial। "Some mistakes may occur in anti-drug drive: Quader"The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  6. Bagchi, Suvojit (২০১৮-০৬-০২)। "Altered states: On the Bangladesh border, a pink pill leaves a trail of blood"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  7. "Extrajudicial killings are no mark of a civilized society - UCA News"ucanews.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  8. "Teknaf municipality councillor killed in 'gunfight'"Dhaka Tribune। ২০১৮-০৫-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  9. Correspondent, Senior; bdnews24.com। "Teknaf municipality councillor among two killed in 'gunfights' during anti-drug drive"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  10. Report, Star (২০১৮-০৬-০১)। "'Murder' it was"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  11. "Audio exposes moments of controversial anti-drug drive - Front Page - observerbd.com"The Daily Observer। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  12. "Ekramul's family cries for justice"New Age | The Most Popular Outspoken English Daily in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  13. "A year on, no progress in Councillor Ekram killing probe | banglatribune.com"Bangla Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  14. "Bangladesh's Crossfire Doctrine"Pulitzer Center (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  15. "US imposes sanctions on RAB, 7 officials over human rights abuse"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১১ 
  16. "Benazir: "We are victims of lies, falsehood and deceit""Netra News — নেত্র নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০১-০৬। ২০২২-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৭