ইয়াবা (মাদকদ্রব্য)
এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটিতে মৌলিক গবেষণাযুক্ত উপাদান রয়েছে অথবা যাচাইবিহীনভাবে দাবি করা হয়েছে। দয়া করে উপযুক্ত তথ্যসূত্র এবং উৎস প্রদান করে নিবন্ধটির মানোন্নয়নে সাহায্য করুন। আরও বিস্তারিত জানতে নিবন্ধের আলাপ পাতায় দেখুন। (আগস্ট, ২০১৫/ নভেম্বর, ২০২০) |
ইয়াবা (থাই: ยาบ้า; অর্থ পাগলা ঔষধ) একধরনের নেশাজাতীয় ট্যাবলেট। এটি মূলত মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন এর মিশ্রণ।[১] কখনো কখনো এর সাথে হেরোইন মেশানো হয়। এই মাদকটি থাইল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয়, এবং পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মা থেকে এটি চোরাচালান করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, কে .এস.এ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এই মাদকের বিস্তার ঘটেছে।
জেনে রাখা আবশ্যক, এই ট্যাবলেট টি মুলত হিটলার এর সময়ে নাৎসি সেনাদের বড়ি হিসেবে সেবন করান হত যেন যুদ্ধ চলাকালিন তারা ২৪ ঘন্টার অধিক সময়ে জেগে থাকতে পারে। কিন্তু ইদানীং ট্যাবলেট টি মাদক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
শ্রেণী : ঔষধ না মাদকসম্পাদনা
ইয়াবার প্রধান উপাদান মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন। এটি উত্তেজক (স্টিমুল্যান্ট) মাদক দ্রব্য। মেথঅ্যাম্ফিটামিন জাতীয় মাদক ডাক্তারের অনুমতিতে এডিএইচডি[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] জাতীয় রোগে কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ হিসাবে দেওয়া হতে পারে, তবে ইয়াবা ওষুধ হিসাবে ব্যবহারের মত বিশুদ্ধও নয় এবং উত্তেজক নেশার ভয়ানক মাত্রা ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির জন্য এটি ওষুধ হিসাবে সেবনের উপযুক্ত নয়। ইয়াবা সেবনের সাথে সাথে পুরো শরীরে এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে, ইয়াবার রাসায়নিক উপাদান সমুহের প্রভাব অনুভূত হতে থাকে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পাদনা
প্রথমদিকে ইয়াবা যৌনউত্তেজক বড়ি হিসাবে বাজারে পরিচিত ছিলো। কিন্তু দীর্ঘদিন সেবনের ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যুক্তরাজ্যের ড্রাগ ইনফরমেশন এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ইয়াবা ট্যাবলেটটি খেলে সাময়িক ভাবে উদ্দীপনা বেড়ে যায়। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। নিয়মিত ইয়াবা সেবন করলে মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরন, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, ক্ষুধামন্দা এবং মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা যেতে পারে। ইয়াবা গ্রহণের ফলে ফুসফুস, বৃক্ক সমস্যা ছাড়াও অনিয়মিত এবং দ্রুতগতির হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত হারে ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথাইরয়েডিজম বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে। অভ্যস্ততার পর হঠাৎ ইয়াবার অভাবে সৃষ্টি হয় আত্মহত্যা প্রবণতা এবং হতাশা। দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা খেলে স্মরণশক্তি কমে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা শুরু হয় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, এমনকি অনেকে আত্মহত্যাও করে থাকে। এছাড়া হার্টের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে বা মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়েও অনেকে মারা যান। অনেকে রাস্তায় দুর্ঘটনায় পতিত হন। কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ইয়াবার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ডা. মোহিত কামাল বলেন, নিয়মিত ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, শরীরে কিছু চলাফেরার অস্তিত্ব টের পাওয়া, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে। এ ছাড়া ইয়াবায় অভ্যস্ততার পর হঠাৎ এর অভাবে সৃষ্টি হয় হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা। তিনি বলেন, এ মাদক সাধারণ শান্ত ব্যক্তিটিকেও হিংস্র ও আক্রমণাত্মক করে তুলতে পারে। ইয়াবা গ্রহণে হ্যালুসিনেশন ও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। হ্যালুসিনেশন হলে রোগী উল্টোপাল্টা দেখে, গায়েবি আওয়াজ শোনে। আর প্যারানয়াতে ভুগলে রোগী ভাবে অনেকেই তার সঙ্গে শত্রুতা করছে। তারা মারামারি ও সন্ত্রাস করতেও পছন্দ করে।[২]
বিভিন্ন দেশে ইয়াবার ব্যবহারসম্পাদনা
বাংলাদেশসম্পাদনা
বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৭ সালে।[৩] পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে ইয়াবা আসতে শুরু করে।[৩] এই ট্যাবলেটের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হবার কারণে উচ্চবিত্তদের মাঝেই এটি মূলত: বিস্তার লাভ করে।
মিয়ানমারসম্পাদনা
মিয়ানমারে ওয়া এবং কোকাং নামের আদিবাসী সম্প্রদায় মেথাম্ফেটামিন পিল বা ইয়াবা এর সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। এই দুই গোষ্ঠীর লোকজন পূর্বে আফিম এবং হেরোইন উৎপাদন এর সাথে জড়িত ছিল। উল্লেখ্য যে, মিয়ানমারে খুব সাধারণ ল্যাবরেটরিতেও মাত্র ২০ হংকং সেন্টের বিনিময়ে প্রতিটি ইয়াবা পিল তৈরি করা হতো। ২০০০ সালে থাইল্যান্ডের সরকার মিয়ানমার সরকারকে সীমান্তে যৌথ টহলের জন্য ব্যাপক চাপ দেয়। মূলত থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের মধ্যে বিদ্যমান ২৪০০ কিলোমিটার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার ব্যাপক চোরাচালান রোধের জন্য এই চাপ প্রয়োগ করা হয়।[৪]
থাইল্যান্ডসম্পাদনা
থাই সরকার ১৯৭০ সালে ইয়াবা ট্যাবলেটকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেসময় এটি সেদেশে পেট্রল পাম্পে বিক্রি হতো, এবং থাই ট্রাক চালকেরা জেগে থাকার জন্য এটা ব্যবহার করতো। ইয়াবাসেবী ট্রাক ও বাস চালকদের হাতে অনেক গুলো ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে। থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০৩ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এর পর থেকে থাইল্যান্ডে এই মাদকের প্রকোপ কমে এসেছে।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Yaba Fast Facts"। US National Drug Intelligence Center। National Drug Intelligence Center। জুন ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-১৩।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;thedailystar.net
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ প্রথম আলো-২৫ অক্টোবর ২০০৭
- ↑ http://www.ibiblio.org/obl/reg.burma/archives/200007/msg00026.html
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- Yaba Fast Facts, National Drug Intelligence Center
- Asia & Pacific Amphetamine-Type Stimulants Information Centre A comprehensive information source on Amphetamine-Type Stimulants in Asia created by the United Nations Office on Drugs and Crime
- Youtube story about the drug in Thailand